View Single Post
  #1  
Old June 18, 2011, 06:13 AM
mac's Avatar
mac mac is offline
Cricket Legend
 
Join Date: May 30, 2006
Location: DC
Favorite Player: All the Tigers
Posts: 2,923
Default A wonderboy or another KK bullsh*t?

নজরুল ইসলামের কাছে দাবা শেখা-বোঝার জন্য একটা বই-ই ছিল 'দাবা'। গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের তরুণ বয়সে লেখা এই বইটি হাতে নিয়েই ছেলেকে বিশ্বসেরা বানানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ফরিদপুর মধুখালীর এই গৃহশিক্ষক। মাত্র দুই বছরের মধ্যে সেই ছেলেই হারিয়ে দিল জিয়াকে!
অবিশ্বাস্য নয়, গত মঙ্গলবারই ঘটেছে এই ঘটনা। ফেডারেশনের দাবা কক্ষে মাত্র আট মিনিটের মাথায় বাংলাদেশের শীর্ষ গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানকে হারিয়ে দিয়েছে ফাহাদ রহমান। নামটা অপরিচিত লাগছে তো! মধুখালীতে কিন্তু তা নয়, পুরো এলাকায় এর মধ্যেই তারকাখ্যাতি পেয়ে গেছে মাত্রই 'ক্লাস টু'-তে পড়া এই খুদে দাবাড়ু।
নামটা ছড়িয়ে যাওয়ার কথা বিশ্ব-অঙ্গনেও। কারণ এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকা জেলা (উন্মুক্ত) বাছাইয়ে রেটেড সব দাবাড়ুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফাহাদ। এই এক টুর্নামেন্টেই তার রেটিং এখন ১৯৭৩ এবং এই রেটিং নিয়েই অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সী দাবাড়ুদের বিশ্বর‌্যাংকিংয়ে ফাহাদ এখন ১১ নম্বরে। আর যদি অনূর্ধ্ব-৮ বছর বয়সীদের মধ্যে র‌্যাংকটা হিসাব করা হয়, তাহলে ২০০৩ সালে জন্ম নেওয়া ফাহাদই এ মুহূর্তে বিশ্বের শীর্ষ দাবাড়ু। 'আমি খুব সিরিয়াস ছিলাম না। প্র্যাকটিস গেম হিসেবেই খেলেছি'_ম্যাচ হেরে বিস্ময়ে প্রায় বিমূঢ় জিয়াউর রহমান এমন প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি, 'অনেক ভালো খেলোয়াড়। এই বয়সে এতটা ভাবা যায় না। জিএম হওয়ার প্রতিভা আছে ওর মধ্যে।'
মধুখালী মডেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর 'ফার্স্ট বয়' ফাহাদকে তাঁর বাবা অবশ্য কেবল জিএম-ই না, বানাতে চান সুপার জিএম। 'টিউশনি'র পাশাপাশি মধুখালীতেই শহীদ ওহিদ স্মৃতি চেস ক্লাবে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের দাবা শেখাতেন নজরুল ইসলাম। সহায়ক পুস্তিকা হিসেবে জিয়ার সেই 'দাবা' বইটাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু ছেলেকে শেখাতে গিয়েই তাঁর পরিশ্রম বেড়ে গেল। ২০০৮ সালে শিশু একাডেমী আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা, বিভাগ হয়ে সারা দেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয় ফাহাদ। এরপর থেকে যতবারই ঢাকায় খেলাতে নিয়ে এসেছেন ছেলেকে হয় ফেডারেশন নয়তো পুরনো বইয়ের দোকান থেকে একে একে কিনে নিয়ে গেছেন গ্যারি কাসপারভ, বিশ্বনাথন আনন্দের 'ওপেনিং ফর হোয়াইট', 'দ্য ব্ল্যাক লায়ন', আলেকজান্ডার বাবুরিনের 'উইনিং পন স্ট্রাকচারস' বা ববি ফিশারের 'মাই সিঙ্টিন মেমোরেবল গেমস'-এর মতো সব বই। 'আমার মতে, ববি ফিশারই দাবার মা-বাপ'_নজরুল ইসলাম এখন এমন মন্তব্য করতে পারেন অনায়াসে। মঙ্গলবার জিয়াকেও হারিয়েছে ফাহাদ ফিশারের এক গেম অনুসরণ করেই, 'প্রথমেই কিং সাইডটা ভেঙে দেওয়ার ফিশারের একটা পদ্ধতি আছে। আমি ওই প্ল্যানেই খেলেছি।' তার পরও ফাহাদের পছন্দ ফিশার নন, বরং তরুণ ম্যাগনাস কার্লসেন, 'ফিশার তো মারা গেছেন। আধুনিক দাবায় কার্লসেনই সেরা। ওর গেমগুলোই আমার বেশি ভালো লাগে।' বর্তমান বিশ্বর‌্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে থাকা ২০ বছর বয়সী কার্লসেনের সঙ্গে ফাহাদের পরিচয় 'নিউ ইন চেস'-এর মতো ম্যাগাজিন ঘেঁটে। গ্যারি কাসপারভের পর দাবা ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেটিং (২৮২৬) এই কার্লসেনের। ফাহাদের লক্ষ্য তাই শুধু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া নয় কার্লসেনের মতো সর্বোচ্চ রেটেড দাবাড়ু হওয়া।
আট বছর বয়সে সেই পথেই এখন বাংলাদেশের এই বিস্ময় বালক। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড স্কুল দাবায় গত দুই বছরের চ্যাম্পিয়ন ফাহাদ এবার লক্ষ্য ঠিক করেছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে জায়গা করে নিয়েই লড়বে দেশের শীর্ষ দাবাড়ুদের সঙ্গে। চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ে ফাহাদ খেলবে ঢাকার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। সেখানে শীর্ষ ৯ জনের মধ্যে থাকতে পারলেই সুযোগটা হবে। কিন্তু ফাহাদ কেবল ৯ জন কেন, বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েই খেলতে চায় চূড়ান্ত পর্বে। তার কাছে এটা অসম্ভবও মনে হচ্ছে না, 'এ বছর আমি বেশি ভালো করছি। মনে হচ্ছে আমার বুদ্ধিশক্তিও এখন আগের থেকে ভালো হয়েছে। তাই আমার আত্মবিশ্বাস আছে।'
ঢাকা জেলা বাছাইয়ে শিরোপা জেতার আগে গত এপ্রিলেই হবিগঞ্জে অনুষ্ঠিত মেয়র কাপ উন্মুক্ত দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফাহাদ। সেখানে হবিগঞ্জের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাত মিজানুর রহমানকে চোখ বাঁধা অবস্থায় হারিয়েছে সে। এটা তার বিশেষ গুণ। প্রতিপক্ষের 'চালের ঘর' জানিয়ে দিলে চোখ বন্ধ করে অনায়াসেই খেলে যেতে পারে ফাহাদ। এমন এক প্রতিভাকে নিয়ে বাবা নজরুল ইসলামও যেন অভিভূত হয়ে পড়েছেন। 'ঢাকায় না এলে ওকে নিয়ে কিছু করতে পারব না' বলে মধুখালির নিজের একমাত্র অবলম্বন তিন শতক পরিমাণ জমিটুকুও বিক্রি দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছেন বাড্ডায়। সেই বাসায় 'বাংলাদেশ চেস স্কুল' নামে দাবার স্কুলও খুলেছেন, কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া চারজন ছাত্রও জুটে গেছে তাঁর ছেলের। বাড্ডার ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল অঙ্ফোর্ডেও এখন দাবার শিক্ষক ক্লাস টু-তে পড়া ফাহাদ। নজরুল ইসলাম নিজেই স্কুলে গিয়ে এই চাকরি আদায় করে নিয়েছেন ফাহাদের জন্য। ছেলেকে বিশ্বসেরা বানানোর স্বপ্ন দেখলেও এ মুহূর্তে তিনি একরকম নিরুপায়ই হয়ে পড়েছেন। কারণ বাড়ি বিক্রির যে টাকা নিয়ে ঢাকা এসেছিলেন তাও এত দিনে ফুরিয়ে গেছে, ছেলেকে বিশ্বসেরা বানাতে বাবাকে তাই স্পন্সরের জন্য ঘুরতে হচ্ছে দ্বারে দ্বারে, "এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ ফরিদপুরের আম্বিকা ময়দানে সবার সামনে, 'আজ থেকে ফাহাদের দায়িত্ব আমার' বলে ওকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর উনার কাছেই যেতে পারছি না। আমাদের স্থানীয় এমপিও বলেছেন টাকা-পয়সা কোনো সমস্যা হবে না, কিন্তু এখন উনাকেও পাচ্ছি না।"
'ছোটবেলাতেই আমি যেভাবে আলোড়ন তুলে ফেলেছিলাম, তেমন প্রতিভা এখন আর দেখা যায় না। শাকিল, সাগর বা তারও পরে সাইফ, সিয়ামরা আছে, কিন্তু তারা আর কত দূর যেতে পারবে! দাবার এই অবস্থায় এখন আসলে আরেকজন বিস্ময় বালক দরকার, যে সারা দেশে খেলাটাকে আবার জাগিয়ে দেবে'_এই উপলব্ধি গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদের। ফাহাদ কি সেই বিস্ময় বালক? নিয়াজ এই মুহূর্তে দেশের বাইরে থাকায় মতামতটা জানা যায়নি। তবে ফাহাদকে তাঁর ভালোভাবেই মনে থাকার কথা। গত বছর গোপালগঞ্জে একটা দাবা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গিয়ে স্কুল-কলেজের প্রায় ২০০ ছেলেমেয়ের সঙ্গে একসঙ্গে খেলেছেন নিয়াজ। সেই প্রতিযোগিতায় সবার খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যে ছেলেটি নিয়াজকে প্রায় ঘণ্টাখানেক আটকে হার মেনেছিল সে ফাহাদ। নিয়াজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন আর রানার্সআপের পুরস্কারটা ছিল ফাহাদের।

ফাহাদের যা কিছু অর্জন
* অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সী দাবাড়ুদের বিশ্বর‌্যাংকিংয়ে বর্তমান অবস্থান একাদশ, অনূর্ধ্ব-৮ বছর বিবেচনায় রেটিং অনুসারে বিশ্বের শীর্ষ দাবাড়ু। রেটিং ১৯৭৩।
* গত বুধবার দাবা ফেডারেশন কক্ষে একটি অনানুষ্ঠানিক ম্যাচে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের বিপক্ষে জয় মাত্র ৮ মিনিটে।
* ২০০৯ সালে র‌্যাপিড দাবায় ফিদে মাস্টার মাহফুজুর রহমানের বিপক্ষে জয়।
* ২০০৮ সালে শিশু একাডেমী আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন।
* স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জাতীয় স্কুল দাবায় ২০০৯ ও ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী গ্রুপ)।
* দাবা ফেডারেশন আয়োজিত ঢাকা জেলা (উন্মুক্ত) বাছাই দাবায় ৭ খেলায় সাড়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন।
* সাব-জুনিয়র দাবায় ২০০৯ ও ২০১০ সালে দুবারই তৃতীয়।

http://www.kalerkantho.com/?view=det...e_id=1&index=0
Reply With Quote