Mash speaks about the team ahead of 2019 Worldcup
উন্ডিজের বিপক্ষে মাত্রই ওয়ানডে সিরিজ জেতা মাশরাফি "কালের কণ্ঠ" পত্রিকায় বর্তমানের বাংলাদেশ দল এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে আমাদের পরকল্পনা কেমন হতে পারেন তা নিয়েই আলোচনা করলেন।
-
প্রশ্নঃ একটি ফরম্যাটই শুধু খেলার কারণে দলের সঙ্গে যোগ দিতে হয় দেরিতে আবার ফিরতে হয় আগে। এবারও তা-ই হচ্ছে। কেমন লাগে এই আসা-যাওয়া?
-
মাশরাফি বিন মর্তুজাঃ এটার আরেকটা চ্যালেঞ্জ আছে। তবে ফিকশ্চার যদি আমার নিজের করার সুযোগ থাকত, তাহলে ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু করতাম। এটা আমার এবং দলের জন্যও ভালো।
-
প্রশ্নঃ ওয়ানডে সিরিজ জিতলেন। সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। তবু দলে অনেক ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। অথচ ২০১৯ বিশ্বকাপ আর খুব দূরে নেই।
-
মাশরাফিঃ এখনই বলা মুশকিল। তবে কিছু জায়গা নিয়ে তো দুশ্চিন্তা আছেই। দলের কয়েকজনের বেলায় কিছুটা ছাড় দিতেই হয়। সাময়িকভাবে ব্যর্থ হলেও তাদের বাদ দেওয়া যায় না। কারণ তারা অতীতে নিজেদের প্রমাণ করেছে। তাদের হয়তো আরেকটু ঘষামাজা করে তৈরি করে নিতে হবে। তবে কয়েকটি জায়গা যতটা সম্ভব দ্রুত ঠিক করা জরুরি।
-
প্রশ্নঃ সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গাটা নিশ্চয় তামিম ইকবালের সঙ্গী খুঁজে বের করা?
-
মাশরাফিঃ টপ অর্ডারের ব্যাটিং নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরেই সংকটে আছি। তামিমের সঙ্গে কে ওপেন করবে, তা ছাড়া তিন নম্বরেও ঘাটতি ছিল। সাকিব উঠে আসায় একটা সমস্যা মিটেছে। পাঁচ নম্বর থেকে উঠে এসেই রান করছে একটা ছেলে, এটা দারুণ ব্যাপার। আমি তো মনে করি এটা অন্য সবার জন্য উদাহরণও। ব্যাটিং অর্ডার যে একটা সংখ্যা মাত্র, সেটা সাকিব প্রমাণ করেছে।
-
প্রশ্নঃ সাকিব আল হাসানকে দিয়ে তিনের সমস্যা সমাধানটা কি আপৎকালীন নাকি দীর্ঘস্থায়ী?
-
মাশরাফিঃ তিন নম্বরে রান করায় সাকিবকে আপাতত সরানোর কোনো সুযোগ নেই। ওকে দিয়ে আমাদের দুটি সমস্যার একটির সমাধান হয়েছে। সাকিব যেহেতু দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, সে কারণে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকেই ওকে তিনে খেলানোর চিন্তা করি। এ সিরিজে সাকিব খুব ভালো করেছে। কিন্তু সব সময় তো আর কারোরই এক রকম যায় না। সাকিবও খারাপ করতে পারে। তবে সামর্থ্য আর অভিজ্ঞতা দিয়ে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ও। সে কারণেই ওর ওপর আস্থা বেশি। এত দিন কী হচ্ছিল আমাদের? ইনিংসের শুরুতেই টপাটপ দুই উইকেট পড়ে যাচ্ছিল। সেরকম পরিস্থিতির চেয়ে সাকিব তিনে খেলায় যদি এটা এড়ানো যায়, তাতে মন্দ কী? যদিও জানি যে সাকিব দ্রুত আউট হয়ে গেলে বিপদ হতে পারে। একটা সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমাদের এই ঝুঁকিটা নিতে হয়েছে। সাকিব রান করায় সে রকম পরিস্থিতিতে আমাদের পড়তে হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর সাকিবকে আবার ব্যাটিং অর্ডার থেকে সরানোর দাবি কেউ তুলবেন না, সুযোগও নেই।
-
প্রশ্নঃ সাকিবকে নিয়ে তো আবার উভয় সংকটেও আছে দল। তিন নম্বরে তিনি উঠে আসায় লোয়ার মিডল অর্ডার শক্তি হারিয়েছে। সাত আর আট নম্বরে উপযুক্ত ফিনিশারও এখনো যেখানে খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। এ নিয়ে আপনি কতটা চিন্তিত?
-
মাশরাফিঃ দেখুন, আমাদের চার সিনিয়র ক্রিকেটার যেভাবে ব্যাটিং করছে তাতে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে উতরে যেতেও পারি। তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ দারুণ ফর্মে আছে। ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম পাঁচটির চারটি জায়গাই ওদের। ছয় নম্বরে সাব্বির রান পাচ্ছে না, তবে ওর সামর্থ্য সম্পর্কে আমরা সবাই কিন্তু জানি। তবে অন্যদের অফফর্মের কারণে ওই চারজনের ওপর খুব চাপ পড়ে যাচ্ছে। এটাও ঠিক না। তামিমের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটা দুর্দান্ত গেছে। এখন তামিমকে কি প্রতি সিরিজেই এ রকম খেলতে হবে, সম্ভব? এটা তো ওর প্রতি অন্যায় দাবি। এভাবে দুনিয়া চলে না। অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
-
প্রশ্নঃ তার মানে তো আপনার বিশ্বকাপ দলের অবস্থা বিশেষ সুবিধার নয়। এটা কি বাকিদের মানের সমস্যা নাকি একসঙ্গে তারা অফফর্মে আক্রান্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে দল?
-
মাশরাফিঃ আপনি যাদের কথা ইঙ্গিত করছেন, অধিনায়ক হিসেবে তাদের সব ধরনের সমর্থনই আমি করি। কোচিং স্টাফরা আছেন তাদের সাহায্য করার জন্য। আমার কাছে মনে হয় ওদের এই সমস্যার অনেকটাই মানসিক। এত দিন খেলার পর আমাদেরও মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়। সঙ্গে স্কিলেও কিছুটা ঘাটতি আছে। নতুন যে ব্যাটিং কোচ এসেছেন, নীল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে কাজ করে সমস্যাগুলো ওরা দ্রুত সারিয়ে নিতে পারে। তা ছাড়া ডিসিপ্লিন খুব জরুরি। আমি চাই না মাঠের বাইরের বিষয়গুলো যেন দলের ভেতরে না আসে। ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশি ব্যস্ত থাকাটা দলের জন্য ভালো নয়।
-
প্রশ্নঃ বিশ্বকাপের আগে আর গোটা বিশেক ওয়ানডে আছে। এ অবস্থায় দলের যে জায়গাগুলোয় সংকট আছে, সেগুলো শতভাগ ঠিক করে ফেলা কি সম্ভব?
-
মাশরাফিঃ এটা আসলে কঠিন হবে। একজনকে সেট করতে তাকে লম্বা সময় সুযোগ দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে ২০টি ম্যাচ দূরে থাক, দুটির পর তিন নম্বর ম্যাচ খেলানোই কঠিন হয়ে যায়। মিডিয়ার চাপ আছে, বাইরের চাপ আছে। তাতে দুটি ম্যাচের পর সেই খেলোয়াড়ও বুঝে ফেলে যে তার দিন ঘনিয়ে এসেছে। তবু তাকেই এমন চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর আমি মনে করি এখন যেহেতু সময় খুব বেশি নেই, তাই নতুন কাউকে না এনে পুরনোদের ওপরই আস্থা রাখা ভালো। তাদের মধ্য থেকেই কাউকে না কাউকে ফর্মে ফিরিয়ে আনতে হবে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ছাড়া এ বছর আমাদের আটটি ওয়ানডের সাতটিতেই খেলেছে বিজয় (এনামুল হক)। এর আগে লিটন খেলেছে, ইমরুল আর সৌম্যও খেলেছে। এদের কেউ যত দ্রুত ফর্মে ফিরবে, ততই দলের জন্য ভালো। এদের পাশাপাশি শান্ত (নাজমুল হোসেন) আছে। আমি চাই আয়ারল্যান্ডে ‘এ’ দলের হয়ে ভালো কিছু করুক শান্ত। এর বাইরে থেকে হুট করে কাউকে এনে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা কঠিন। দারুণ ট্যালেন্টেড কেউ থাকলে ভিন্ন কথা। তবে আমার চোখে একেবারে নতুনদের মধ্যে এমন কাউকে চোখে পড়েনি। তো, তাদের আমি বলব কোচের সঙ্গে সবাই কথা বলে নিজের সমস্যাগুলো ঠিক করে ফেলুক। মানসিক সমস্যা থাকলে ওরা প্রয়োজনে মেডিটেশন করুক।
-
প্রশ্নঃ এনামুল হক এ সিরিজে খেলার সুযোগ পেয়েছেন আপনার ইচ্ছাতে। কিন্তু তিনি পারেননি প্রত্যাশা মেটাতে। তিনি কেন পারলেন না বলে আপনার মনে হয়?
-
মাশরাফিঃ বিজয় কেন, আমি যাকেই দলে নেব তার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। সে কারণেই এতগুলো সুযোগ পেয়েছে ও। টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা দলের প্রতিটি সদস্যই বিজয়কে সমর্থন জুগিয়েছে। সুযোগ দেওয়া হয়নি— এ অভিযোগ ও আর করতে পারবে না। আমি জানি না রান না করলে ওরা কতটা ভেঙে পড়ে, ওদের ব্যক্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করছি। তামিমের একজন পার্টনার খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
-
প্রশ্নঃ বিশ্বকাপের আগে আরেকটি টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপের আগে কি নড়বড়ে ক্রিকেটারদের জেগে ওঠার শেষ সুযোগ বলে মনে করছেন?
-
মাশরাফিঃ সবাইকে বলব, পারফরম্যান্সের বাইরে কারো দলে সুযোগ নেই। সাকিব কিংবা আমারও জবাবদিহি আছে। এটা বুঝি যে নতুনদের জন্য এটার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন। তার পরও তার নিজের চেষ্টা থাকতে হবে। তাকেই খুঁজে বের করতে হবে ঠিক কোথায় সমস্যা হচ্ছে? সে সমস্যাগুলো সিরিজের মাঝপথে করা সম্ভব নয়। একেকটা সমস্যার সমাধান করতে হবে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। অনুশীলনে কাজ করতে হবে নিজের প্রতিটি সমস্যা ধরে ধরে—ভালো খেলোয়াড়রা তাই করে। দেড় যুগ ধরে বিশ্বের সব দলেই এটা দেখে আসছি। প্র্যাকটিস তো আমরাও করি। তবে সেটাতে মান থাকা জরুরি। আমার কাছে মানসম্পন্ন প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। আমার বিশ্বাস আমাদের তরুণদের সামর্থ্যে অনেক এগিয়ে। এদের অনেকে অতীতে নিজেদের প্রমাণও করেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর আমরা অনেক ম্যাচ জিতেছি। সেটা সম্ভব হয়েছে সিনিয়রদের সঙ্গে সৌম্য, সাব্বির, লিটনরা রান করেছে। তা ছাড়া তাসকিন, রুবেলদেরও অবদান রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দলগতভাবেই আমরা ম্যাচ জিতেছি। ২০১৯ বিশ্বকাপেও দলগতভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আর সেটা নিশ্চিত করার জন্য যাদের নাম বললাম, তাদের মধ্য থেকেই সেরাদের খুঁজে নিতে হবে। এক বছর সময় কিন্তু খুব বেশি না। তাই তরুণদের বলেছি দ্রুত ফর্মে ফিরতে।
Source: KalerKontho
A very nice interview by Mash. But didn't expect anything less
|