View Single Post
  #49  
Old January 25, 2011, 12:38 AM
magic boy magic boy is offline
Cricket Legend
 
Join Date: June 8, 2009
Posts: 3,934


মুশফিকুর রহিম: বিশ্বকাপের আগে বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা






মুশফিকুরের ‘অন্য’ পরীক্ষা



বিশ্বকাপ নিয়ে কার মধ্যে ‘টেনশন’ নেই! দর্শকদের টেনশন টিকিট নিয়ে, আয়োজকদের টেনশন—সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হবে তো? সবচেয়ে বেশি টেনশন যাঁরা বিশ্বকাপ খেলবেন তাঁদের। আর বিশ্বকাপের আগে আগে যদি কোনো ক্রিকেটারের এই টেনশনের সঙ্গে যোগ হয় পরীক্ষার টেনশন, তাহলে তো ঘুম হারাম!
মুশফিকুর রহিম পড়েছেন এই দুই টেনশনের জাঁতাকলে। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ, আর তিনি কিনা রাত-দিন বইয়ে বুঁদ! সকালে গোসল-টোসল করে যাচ্ছেন পরীক্ষার হলে। মাথায় চিন্তা...প্রশ্ন কমন না পড়লে কী হবে!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মুশফিকুর এবার দিচ্ছেন চতুর্থ বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা। আগামীকাল থেকে জাতীয় দলের চূড়ান্ত বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলেও তাঁর পরীক্ষা চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তার মানে দুটি একই সঙ্গে চলবে—পরীক্ষার প্রস্তুতি, সঙ্গে বিশ্বকাপেরও। প্রতিদিনই প্র্যাকটিস করবেন। পরীক্ষার দিনগুলোয় ছুটি নিলেও নিতে পারেন। খেলার পাশাপাশি পড়াশোনার জন্য এই সাহায্যটুকু পাচ্ছেন বলে মুশফিকুর দারুণভাবে কৃতজ্ঞ কোচ জেমি সিডন্স এবং প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলমের কাছে।
গুরুজনেরা পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার কথা বলেন। খেলোয়াড়দের ব্যাপারটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উল্টো—খেলাধুলার পাশাপাশি সম্ভব হলে পড়াশোনা। তবে মুশফিকুরের কাছে দুটোরই গুরুত্ব সমান। নইলে নিয়ম না মানার বয়সে কেন জীবনটাকে ফেলে দেবেন এমন শৃঙ্খলের মধ্যে! ‘আমার কাছে খেলা এবং পড়া দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমারও ইচ্ছে করে অন্যদের মতো আড্ডায় যেতে, কোথাও ঘুরতে যেতে কিংবা পারিবারিক প্রোগ্রামগুলোয় থাকতে। বেশির ভাগ সময়ই তা হয়ে ওঠে না। খেলার বাইরের সময়টা পড়তে হয়।’ শুধু খেলার বাইরের সময় কেন, সামনে পরীক্ষা থাকলে বিদেশ সফরেও তাঁর সঙ্গী হয় বইপত্র। বিমানের বিজনেস ক্লাস হয়ে ওঠে পড়ার ঘর!
পরিবারের সবাই শিক্ষিত। ছোটবেলা থেকে মুশফিকুরের জীবনদর্শনটাও তাই ‘শিক্ষামুখী’, ‘পড়ালেখায় বিরাট কিছু করতে না পারলেও যেন শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে বড় হতে পারি, সেই লক্ষ্য ছিল। অনেকের কাছেই শুনি ক্রিকেটাররা শুধু খেলে, পড়াশোনা করে না। আমি প্রমাণ করতে চাই ক্রিকেটাররা পড়াশোনাও পারে।’ তা প্রমাণ তো করছেনই। এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩১ পেয়েছেন। এইচএসসিতে ছিল ‘এ’ প্লাস। উচ্চশিক্ষায় এসেও ধরে রেখেছেন ভালো ছাত্রের পরিচয়টা। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। খেলার জন্য একটা কোর্স পরে দিতে হয়েছে বলে তৃতীয় বর্ষের ফলাফল এখনো অজানা। আর চতুর্থ বর্ষ সমাপনী পরীক্ষাও এ পর্যন্ত খারাপ দেননি।
কিন্তু এবার পরীক্ষার মধ্যে বারবারই হানা দিচ্ছে বিশ্বকাপ। মুশফিকুর এই মুহূর্তে নিজেকে একজন ‘পরীক্ষার্থী’ ভাবলেও ক্রিকেটার পরিচয়টাই তো আসল। ‘পড়তে বসলে এসব মনে আসে না। পড়া যখন শেষ করলাম তখন হয়তো বা বিশ্বকাপটা অবচেতনে চলে আসে। পরীক্ষা দিতে হলে যাওয়ার সময় কেউ হয়তো ডেকে বলল, ভাই কী খবর? সামনে বিশ্বকাপ...কী করবেন? এখন আসলে সবার চোখই ওই দিকে এবং আমার চিন্তাভাবনাও।’ বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ তাই একটু ঝামেলাতেই ফেলে দিচ্ছে বাংলাদেশ দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে। তবে মাঠের মতো তিনি পরীক্ষার হলেও আত্মবিশ্বাসী, ‘চার বছর এত কষ্ট করে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি। ভালো ফলাফল করে অনার্সটা শেষ করতে চাই। এটা আমার জন্য বড় অর্জন হবে।’
ছোট ছোট লক্ষ্যে এগোনোটা মুশফিকুরের জীবন দর্শনের অংশ। প্রিমিয়ার লিগের শুরুতে যেমন লক্ষ্য স্থির করেছিলেন সবচেয়ে বেশি রান করবেন। লিগ পর্বে সেটা হয়ে যাওয়ার পর এখন লক্ষ্য পরীক্ষাটা ঠিকঠাকভাবে দেওয়া। বিশ্বকাপ তো অবশ্যই মনজুড়ে আছে। তবে পড়াশোনায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার লক্ষ্যটা আছে সবসময়ই। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে খুবই বাস্তবসম্মত সেটার কারণ, ‘আল্লাহ না করুক, আমার যদি একটা ইনজুরি হয় বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়...। এমন না যে না খেললে আমি চলতেই পারব না। তবে শেষে যেন আফসোস না করতে হয়, পড়ালেখা করলে এই পরিস্থিতি হতো না!’
খেলা আর পড়া একসঙ্গে চালাতে গিয়ে অনেক সময়ই দুটোর সংঘর্ষ ঘটে। ২০০৯-এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর বা গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়টাতে যেমন পরীক্ষাই পড়ে গিয়েছিল মুশফিকুরের! সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে অতিক্রম করেছেন সেসব সমস্যা, ‘স্যাররা অনেক সাহায্য করেন। বন্ধুদের কথাও বলতে হয়। তারা না থাকলে আমি এত দূর আসতে পারতাম না।’
Reply With Quote