View Single Post
  #4  
Old November 23, 2011, 09:12 AM
WarWolf WarWolf is offline
Cricket Guru
 
Join Date: March 3, 2007
Favorite Player: Love them all....
Posts: 14,685


টক অব দি কান্ট্রি টিপাই মুখ , ভারতে ত্রিমুখী চুক্তিতে সর্বস্তরের উদ্বেগ

গোলাম ফারুক দুলাল: খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এসে বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ না করার আশ্বাসের আড়াই মাসের মাথায় এ ব্যাপারে একটি চুক্তি সই হয়েছে। আর এ ধরনের আচরণকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন বলেছেন দেশের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় এ বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে যৌথ সমীক্ষা হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে আসলে কি ঘটছে তা ভারত সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া।
ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম, এনএইচপিসি, রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ সংস্থা এসজেভিএন ও মণিপুর সরকারের যৌথ উদ্যোগে কোম্পানি গঠন করে। ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী ও মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে সম্প্রতি চুক্তি সই হয়েছে। শুক্রবার বিবিসি বাংলার উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত রিপোর্ট সবার নজরে আসে এবং বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। এ নিয়ে দেশের রাজনীতিক, কূটনীতিক ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে দেশের কী ক্ষতি হবে সেটা তো গবেষণাযোগ্য বিষয়, তবে এ নির্মাণ কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে যে বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে এ নিয়ে সংস্লিট মহল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছেন ।
তাদের পরামর্শ হচ্ছে, অনতিবিলম্বে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং কিভাবে তারা এ বাঁধ নির্মাণ করতে চায় তা জানতে চাওয়া । কারন এ বিষয়ে জানার অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। এ বাঁধ হলে সুরমা কুশিয়ারায় খুব প্রাকৃতিক কারণেই পানির প্রবাহ অনেক কমে যাবে। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। সরকারের কাছে তাদের অনুরোধ অতিসত্বর এ বিষয়ে আলোচনার পদক্ষেপ নিন এবং যৌথ সমীক্ষা ছাড়া ভারতের এটা করা উচিত না । সংস্লিটরা আরো মনে করেন ,ভারতকে অবশ্যই আমাদের টেকনিক্যাল ইনফরমেশন শেয়ার করতে হবে। ভারত এ বাঁধ নির্মাণের সময় অবশ্যই বাংলাদেশকে যেমন জানাতে হবে, তেমনি মণিপুরের পাশের রাজ্য নাগাল্যান্ড ত্রিপুরাকেও জানাবে।
এটি আন্তর্জাতিক নদীবিষয়ক আইনেই স্পষ্ট করা আছে। কোনো নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে আশপাশের অঞ্চলের কোনো ক্ষতি যেন না হয় তা যারা বাঁধ নির্মাণ করছে তাদেরই স্পষ্ট করতে হবে। তারা বলেন, ভারত যদি টিপাইমুখে ব্যারাজ নির্মাণ করে নদীর পানি তুলে নিয়ে যায় তাহলে আমরা নদীর পানি থেকে বঞ্চিত হব এবং আমাদের দেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে, যা আমাদের সঙ্গে গঙ্গা নদীর ক্ষেত্রে ঘটেছে। কিন্তু যদি ভারত ড্যাম নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাহলে যে টারবাইন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সেটি না ঘুরলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না। পানি যত দ্রুত যাবে এবং টারবাইন যত জোরে ঘুরবে তত দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই নদীর পানি ধরে রাখা যাবে না, নদীর পানি ছেড়ে দিতে হবে। তখন আমরা নদীর পানি পাব। তাই ব্যারাজ নির্মাণ করলে আমরা ক্ষতির শিকার হব। আর ড্যাম নির্মাণ করলে আমরা বিপদে পড়ব না। ভারত আসলে কি করছে সেটি আমাদের স্পষ্ট করে জানা দরকার।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে তারা বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের তেমন নাক গলানোর প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এর ফলে আমরা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারি চিন্তা করেই আমরা এ বিষয়টি নিয়ে এত কথা বলছি। তাই ভারত সরকারের উচিত আমাদের বিষয়টি খুব ভালোভাবে স্পষ্ট করে বলা।
বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ সম্পর্কে দিল্লির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে ,এ বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডি (এমওইউ) দুবছর আগেই সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম, এনএইচপিসি, রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ সংস্থা এসজেভিএন ও মণিপুর সরকারের মধ্যে এই এমওইউ হয় দুবছর আগে। ২২ অক্টোবর সেই চুক্তিটি কেবল রিনিউ হয়। রিনিউ করার অর্থ চুক্তিটি জিইয়ে রাখা। আগামীকালই কাজ শুরু করে দেয়া নয়। দিল্লির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত বাঁধটি নির্মাণ হবে না। দিল্লি আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ একটি সংস্থা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে দেখবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বাঁধ নির্মাণের আপত্তি জানানোর কারণেই ভারত সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর কোনো ক্ষতি হবে কি না এবং ভারতের মণিপুর রাজ্যের জনগণের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না সেটাই খতিয়ে দেখবে আন্তর্জাতিক ওই সংস্থা।
এ ব্যাপারে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মানব জমিন কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন এব্যাপারে কিছু করার নাই ।একই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি চাঁদপুরে তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে সেখানে তিনি তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে কথা বললেও টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণ লয় এক ই- মেইল বার্তায় এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে। বহির্প্রচার অণুবিভাগের মহাপরিচালক শামীম আহসান ঐ বার্তায় জানান, ভারতের ন্যাশনাল হাইড্রোপাওয়ার করপোরেশনের ২৪ অক্টোবরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি ঢাকা অবগত হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণ লয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তারা আস্বস্ত করেছে। সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণ লয় বিস্তারিত তথ্য জানাবে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে, বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম, মণিপুর সরকার ও আরও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা একটি যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি গঠন করেছে। এ ব্যাপারে একটি চুক্তি ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী ও মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সম্প্রতি সই হয়েছে। চুক্তিটিতে বলা হয়েছে, টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি তৈরি করবে নতুন জয়েন্ট ভেঞ্জার কোম্পানি। এতে এনএইচপিসির ৬৯ শতাংশ, এসজেভিএনের ২৬ শতাংশ আর মণিপুর সরকারের ৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে। বলা হচ্ছে, টিপাইমুখ প্রকল্পটির সাহায্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বরাক নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণও করা যাবে। ওই প্রকল্পে ১৬২ মিটার উঁচু বাঁধ থাকবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬টি ইউনিট থাকবে, যার প্রতিটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে ২৫০ মেগাওয়াট করে।
মণিপুর সরকারের মুখপাত্র ও রাজ্যের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্র এন বীরেন সিং বিবিসিকে জানিয়েছেন, যে তারা টিপাইমুখ প্রকল্প গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সরকারের নীতি খুবই পরিষ্কার, টিপাইমুখ প্রকল্প হবেই। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায়, বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারত উন্নয়ন দফতরের জন্য টাকা দেবে। মণিপুর সরকারের মুখপাত্র ও মন্ত্রী বীরেন সিং আরও বলেছেন, প্রকল্পটি তৈরি হবে এনএইচপিসির নেতৃত্বে রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে টিপাইমুখ প্রকল্পটিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাতে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেন।
শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পরিবেশবাদী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এই বাঁধ নির্মিত হলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ ও আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসবে। হুমকির মুখে পড়বে কৃষি, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য। বর্ষাকালে প্রবল বন্যা আর শীতকালে পানির হাহাকার দেখা দেবে। কেননা বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে সুরমা ও কুশিয়ারায় বিভক্ত হয়ে আবার মেঘনা রূপ ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। ফলে উজানে বরাকে বাঁধ দেয়া হলে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে। কেবল বাংলাদেশেই নয়, বাঁধের ফলে মণিপুরও পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন মণিপুরের অনেক বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ।
তারা বলছেন, বার্মা থেকে আসা থুইভাই ও বরাক নদীর সংযোগস্থলের গ্রাম টিপাইমুখে জলাধার ও বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বিরাট এলাকার পাহাড়-জঙ্গল জলে ডুবে যাবে ও অনেক লুপ্তপ্রায় প্রাণিসম্পদ ধ্বংস হবে। গৃহহীন হবেন আর জীবিকা হারাবেন বহু মানুষ। ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, টিপাইমুখ অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যদি বাঁধ নির্মাণের পর সেটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে ভাটি অঞ্চলে থাকা আসাম ও বাংলাদেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।


http://bd24live.com/%E0%A6%9F%E0%A6%...6%AE%E0%A7%81/
__________________
And Allah Knows the best
Reply With Quote