View Single Post
  #50  
Old December 13, 2011, 09:51 PM
PoorFan PoorFan is offline
Moderator
 
Join Date: June 15, 2004
Location: Tokyo <---> Dhaka
Posts: 14,850


সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের মানুষের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা

| তারিখ: ১৪-১২-২০১১


  • ০ মন্তব্য
  • প্রিন্ট
  • ShareThis




« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
জ্যাক ফ্রেডেরিক রালফ জ্যাকব



পুরো নাম জ্যাক ফ্রেডেরিক রালফ জ্যাকব। একাত্তরে তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইতিহাসের একমাত্র প্রকাশ্য আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মুখ্য পরিকল্পনাকারী তিনি। প্রথম আলো তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল গত ২৩ মে তাঁর দিল্লির বাসভবনে। সাক্ষাৎকার ও ই-মেইলে সাম্প্রতিক যোগাযোগের ভিত্তিতে তাঁর স্মৃতিচারণা আজ থেকে ছাপা হচ্ছে তিন কিস্তিতে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

লে. জেনারেল জ্যাকবের পূর্ব পুরুষেরা বাগদাদ থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। ১৯২১ সালে সেখানেই তাঁর জন্ম।
জ্যাকব বলেন, ‘নিয়াজি ও ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনার প্রকাশ্য আত্মসমর্পণের ৪০তম বার্ষিকীতে আসুন আমরা শ্রদ্ধা জানাই বাংলাদেশ ও ভারতের তাঁদের প্রতি, যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন। তবে অবশ্যই বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাতে হবে বাংলাদেশের জনগণকে, যাঁরা পাকিস্তানি অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বীরের মতো তাদের প্রতিহত করেছিলেন। আমরা যেন মুক্তিযোদ্ধা ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অসাধারণ ভূমিকা ভুলে না যাই, যাঁরা ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।’
প্রথম আলো: আত্মসমর্পণ নিয়ে নিয়াজির সঙ্গে আপনার প্রথম কখন কথা হয়েছিল?
জেনারেল জ্যাকব: ১৩ ডিসেম্বর রাতে। এরপর ১৪, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আসার আগে আরও তিন দফা কথা হয়েছিল বেতারে। নভেম্বরে টাঙ্গাইলে আমরা আকাশপথে ছত্রীসেনা নামিয়েছিলাম। এ সময়ের মধ্যে ঢাকার বাইরে আমাদের প্রায় তিন হাজার সেনা নিয়োজিত ছিল। মার্কিন সপ্তম নৌবহর মালাক্কা প্রণালির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। দিল্লিতে অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। ইসলামাবাদ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সেনাদের পাঠানো গোপন বার্তা আমরা ইন্টারসেপ্ট বা ধরতে পেরেছিলাম। এতে বলা হয়েছিল, যুদ্ধ চালিয়ে যাও। উত্তর থেকে হলুদ (চীন) এবং দক্ষিণ থেকে সাদার (আমেরিকা) কাছ থেকে সাহায্য আসছে। নিয়াজি এ কথা বিশ্বাস করেছিলেন। তাই তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একটা যুদ্ধবিরতির আশা করেছিলেন।
প্রথম আলো: জাতিসংঘের অবস্থান কী ধরনের প্রভাব ফেলেছিল?
জ্যাকব: ১৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘে মার্কিন প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভেটো দেয়। তবে সোভিয়েত বলে দিয়েছিল, মার্কিন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আর কোনো ভেটো তারা দেবে না। জেনারেল মানেকশ (ভারতীয় সেনাপ্রধান) এ জন্য প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের আর সব শহর দখল করতে। সে কারণে ১৬ ডিসেম্বরেও ঢাকা ছিল অরক্ষিত। মানেকশর নির্দেশ সব আঞ্চলিক অধিনায়কের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আমরা ফোন করে তাঁর এই আদেশ উপেক্ষা করতে বলেছিলাম। জেনারেল অরোরা (তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি) উত্তেজিতভাবে আমার কক্ষে এলেন। বললেন, এসবের জন্য আমিই দায়ী। কারণ তিনি শহরগুলো দখল করতে চেয়েছিলেন এবং আমি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করিনি। উপরন্তু আমি সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর ও অন্য কয়টি শহর দখল করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছি। সুতরাং ১৩ ডিসেম্বর রাতে আমি নিয়াজিকে বেতারে পেয়ে তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলাম, ঢাকার অদূরে থাকা আমাদের সেনাশক্তি খুবই জোরালো। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীদের একটা অভ্যুত্থান আসন্ন। এখন নিয়াজি ও তাঁর বাহিনী যদি আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তারা ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা (বিহারি) সুরক্ষা পাবে।
প্রথম আলো: যুদ্ধবিরতি কীভাবে কার্যকর হয়েছিল?
জ্যাকব: ১৪ ডিসেম্বর আমি একটা পাকিস্তানি বেতার বার্তা ভেদ করতে সক্ষম হই। তাতে জানতে পারি, ঢাকার গভর্নর হাউসে একটা সভা বসবে। ঢাকায় দুটি সরকারি ভবন ছিল। তাই আমরা একটা বুদ্ধিদীপ্ত অনুমান করি এবং সৌভাগ্যবশত সেটাই ছিল সঠিক। এর পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে ওই ভবনটির ওপর ভারতীয় বিমানবাহিনী বোমা ফেলে। ওই দিনই গভর্নর মালেক ও তাঁর মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। ওই দিনই সন্ধ্যার দিকে নিয়াজি ও জেনারেল ফরমান আলী ঢাকার মার্কিন কনসাল জেনারেল হার্বাট স্পিভাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁদের প্রস্তাবে লেখা ছিল, জাতিসংঘের আওতায় যুদ্ধবিরতি, সেনা প্রত্যাহার ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্ব জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর এবং কোনো প্রতিশোধমূলক তৎপরতা না চালানোর শর্ত।
স্পিভাকের কাছে দেওয়া ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভারত শব্দটিরও কোনো উল্লেখ ছিল না।
প্রথম আলো: আপনি নিয়াজির যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সম্পর্কে কখন জানতে পারেন?
জ্যাকব: একটি দূতাবাস সূত্রে আমি তখনই জানতে পেরেছিলাম। সুতরাং আমি বিষয়টি মানেকশকে অবহিত করি এবং তিনি ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত কিছুই জানতেন না। ওই দিনই ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস নিয়াজির প্রস্তাব নিউইয়র্কে পাঠান। ১৫ ডিসেম্বর সেটা ভুট্টোর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ভুট্টো সেটা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। মার্কিনিরা তখন আমাদের কাছে প্রস্তাবটি হস্তান্তর করে। ১৫ ডিসেম্বরে যুদ্ধবিরতির আদেশ চূড়ান্ত হয়। সোভিয়েত ব্লকে থাকা পোল্যান্ডের একটি প্রস্তাব জাতিসংঘে ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পেশ করা হয়েছিল। আমাদের সময় তখন কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর সকাল। ভুট্টো এই প্রস্তাব ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। কারণ আগ্রাসনের জন্য ভারতকে তাতে নিন্দা জানানো হয়নি।
প্রথম আলো: ১৬ ডিসেম্বর সকালের স্মৃতি আপনার কতটা মনে আছে?
জ্যাকব: তখন সকাল সাতটা হবে। আমি বেতারে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে পুনরায় কথা বললাম। আমি তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলি। তাঁকে তখন সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছিলাম। জেনেভা কনভেনশন যে মেনে চলা হবে, সেটাও তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিই।
প্রথম আলো: কী করে ঢাকায় পৌঁছালেন?
জ্যাকব: সকাল আটটায় আমি অফিসে যাই। সকাল নয়টায় মানেকশর কাছ থেকে ফোন পাই। তিনি বললেন, আপনি ঢাকা যান এবং আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করুন। এর কয়েক দিন আগেই আমি কিন্তু আত্মসমর্পণের দলিলের খসড়া দিল্লিতে পাঠিয়েছিলাম। তাই তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ওই খসড়ার ভিত্তিতে নিয়াজির সঙ্গে আমি আলোচনা করতে পারি কি না। তিনি এর উত্তর দেননি। শুধু বললেন, আপনি সেখানে পৌঁছে যান। সেখানে কী করতে হবে, তা আপনার জানা আছে। ফোন রেখেই আমি জেনারেল অরোরাকে মানেকশর নির্দেশনার কথা জানালাম। তাঁর তা অবশ্য আগেই জানা ছিল। অরোরার অফিসের বাইরে মিসেস অরোরার সঙ্গে দেখা হলো। তিনি আমাকে বললেন, তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে ঢাকা যাচ্ছেন। তাঁর কথা, তাঁর স্থান তাঁর স্বামীর পাশেই। আমি অরোরার কাছে আপত্তি জানালাম। কিন্তু তিনি সাফ বললেন, তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন এবং তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। অফিস ত্যাগের আগে যারা ঢাকায় যাবে তাদের বিষয়ে আমি অফিস আদেশ জারি করলাম। আমি গুরুত্বারোপ করলাম, ওসমানী ও খন্দকার যাতে সেখানে থাকেন। নিয়াজিকেও অবহিত করলাম যে, আমি ঢাকায় আসছি। এর আগে আমি একটি ভুল করেছিলাম। নিয়াজির সঙ্গে আলোচনায় তিনি ধারণা করেছিলেন, আমি ঢাকায় আসছি। তাই তিনি আমাকে ১৬ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মানেকশকে বলেছিলাম, নিয়াজি আমাকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। (চলবে)



Prothom Alo
Reply With Quote