September 7, 2011, 11:18 PM
|
|
Cricket Savant
|
|
Join Date: December 23, 2007
Location: The Quiet Place
Favorite Player: Curtly Ambrose
Posts: 27,469
|
|
from kaaler kantho
সাকিব-তামিমের সমস্যার মূলে বিসিবিই
ক্রীড়া প্রতিবেদক : সাকিব আল হাসান বুঝতে পারছেন না কোথায় তাঁর কিংবা তামিম ইকবালের আচরণগত সমস্যা। হাসতে হাসতে বলছিলেন, যদি সালাম না দেওয়াটা সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। সদ্য পদচ্যুত অধিনায়ক না-ও জানতে পারেন। কারণ সোমবারের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের আগে কখনোই সাকিব আল হাসান কিংবা তামিম ইকবালকে সতর্ক করেনি বোর্ড। এমনকি সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে-পরে এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে পদচ্যুতির কারণ জানানো হয়নি সাকিব-তামিমকে। বোর্ডের শরীরী ভাষা বলছে, তারা এসবের প্রয়োজনই বোধ করছে না। পেশাদারি দুনিয়ার চোখে যা ভুল। আরো মস্ত ভুল হলো নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোনো অভিযোগেরই মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছেন না, সেটি।
সোমবার বিসিবির সভায় সাকিব-তামিমের অপসারণের সরকারি ভাষ্য_জিম্বাবুয়ে সফরে দলকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থতা। নেতৃত্বে ব্যর্থতার বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আপত্তি করেননি সাকিব আল হাসান। অধিনায়কত্ব হারানোর পরদিন মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানান, 'এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। নিশ্চয়ই ভালোর কথা ভেবে এটা তারা করেছেন।' কিন্তু জিম্বাবুয়ে সফরে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ নানা ঘটনা বর্ণনায় অস্বীকার করেছেন তিনি। হারারে টেস্টের দল নির্বাচনী সভায় মোহাম্মদ আশরাফুলকে কেন্দ্র করে আলোচনা বাইরে যিনি ছড়িয়েছেন, তাঁকে 'মেইন কালপ্রিট' বলেছেন সাকিব। দলনেতা এবং সফরকারী নির্বাচকের ড্রেসিংরুমে থাকা নিয়ে আপত্তির ইস্যুতে তিনি যা বলেছেন, তাতে নতুন কোচ স্টুয়ার্ট ল'কে মিথ্যাবাদী বলে সন্দেহ হতে বাধ্য। সর্বোপরি, দলীয় শৃঙ্খলা কিংবা খেলোয়াড়ি আচরণবিধির পরিপন্থী কোনো কাজ আজ পর্যন্ত করেছেন বলে মনে করেন না সাকিব। তাহলে কেন এ সিদ্ধান্ত? আছে, কারণ আছে।
সাকিব আল হাসান জানেন না তাঁকে কোনোদিন জানানো হয়নি বলে। অতীতে নানা আচরণে সমালোচিত হয়েছেন সাকিব। বিশ্বকাপ স্পন্সরের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে বাকি টিমমেটদের দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বসিয়ে রাখার ব্যাখ্যা সাকিবের কাছে জানতে চায়নি বোর্ড। বিশ্বকাপের সময়ই ঢাকা ক্লাবের ড্রেস কোড ভঙ্গ করেছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক। দেখেও তাঁকে শুধরে দেননি সে দলটির ম্যানেজার। বিশ্বকাপ প্রস্তুতির শেষদিকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেছিলেন তামিম ইকবাল। জিম্বাবুয়ে সফরের প্রস্তুতি ক্যাম্পে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এড়িয়ে গিয়ে একই কাজ করেছেন সাকিব। আসল কারণ জানা সত্ত্বেও সেদিন ছুটি পেয়েছিলেন তামিম। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কাণ্ডের পর গ্যালারির উত্তেজিত দর্শকদের উদ্দেশে সাকিবের মধ্যমা প্রদর্শন নিয়েও উচ্চবাচ্য করেনি বিসিবি। কাউন্টি থেকে ফিরেই জিম্বাবুয়ে সফরের দল গঠন নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সাকিব। সেবারই প্রথম বিসিবির প্রধান নির্বাহীর রুমে তলব পড়ে সাকিব ও তামিমের। সেবারই প্রথম আচরণগত সমস্যার কারণে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয় সাকিবকে। সে চিঠি গ্রহণ করলেও সাকিবের আত্মপক্ষ সমর্থনে আত্মসমালোচনার রেশও ছিল না। এর কারণও অতীত। আগে তো কোনদিন এ জাতীয় কিছু করে বোর্ডের 'কথা' শুনতে হয়নি। বরং ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির নির্বিবাদ প্রশ্রয়ই পেয়ে গেছেন সাকিব ও তামিম। ক্রিকেট অপারেশনস বিসিবিরই একটি স্থায়ী কমিটি। যে কমিটি জাতীয় দলের সরাসরি অভিভাবক। যে অভিভাবকের নমনীয়তায় অনেক আগে থেকেই চাপা ক্ষোভ বিসিবির বাকি পরিচালকদের মনে। নির্বাচক বনাম সাকিব ইস্যুতে ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রস্তাবনা কঠোর হলে সোমবারের ঘটনা ঘটত না বলেই মনে করেন তাঁরা। সাকিবও জানতে পারতেন তাঁর গণ্ডি। তাহলে সোমবারের 'ক্যু' হতো না।
যথাসময়ে সাকিব ও তামিমকে সতর্ক করে না দেওয়ার ব্যাপারে বিসিবির সভাশেষে মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছিলেন, 'এত দিন আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি। ভেবেছিলাম ওরা শুধরে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।' সমস্যা হলো, কোনো অনুষ্ঠানে সবাইকে বসিয়ে রাখা, মধ্যমা প্রদর্শন এবং প্রস্তুতি ফাঁকি দিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশগ্রহণকে সাধারণ ব্যাপারই মনে করে এসেছেন সাকিব-তামিম। কারণ এ নিয়ে তাঁদের কখনোই নীতিনির্ধারকদের প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয়নি। বরং উল্টোটা হয়েছে। মাঠে সাকিব-তামিম দুর্দান্ত খেলছেন। তাই তাঁদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার সীমা ছাড়িয়ে কোনো কোনো বোর্ড পরিচালক সাকিব-তামিমের সঙ্গে বাড়তি সখ্য গড়ে তোলারও চেষ্টা করেছেন। ভয়ও কাজ করত। সাকিব-তামিমের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুললে যদি মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণা হয়!
গত এক-দেড় বছর এ চিন্তাতেই আক্রান্ত বোর্ড ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিল। জিম্বাবুয়ে ব্যর্থতা এবং মিডিয়ার বড় একটি অংশ সাকিব-তামিমের আচরণগত সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় চাপা সে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে সোমবার। এত দিনের অবজ্ঞার ঝাল কয়েক ঘণ্টায় মিটিয়ে ফেলার সে কী হুঙ্কার! সতর্কতা কিংবা আর্থিক শাস্তি নয়, নেতৃত্ব থেকেই ছুড়ে ফেলা হলো সাকিব-তামিমকে। যাঁদের প্রশ্রয়ে দিনে দিনে 'অকুতোভয়' হয়ে উঠেছিলেন এ দুজন, তাঁদের কিন্তু কিছুই হলো না। কারণ প্রতিকার যাঁদের করার কথা, তাঁরাও যে পরিচালনা পর্ষদের সহকর্মী!
|