View Single Post
  #3  
Old May 16, 2011, 08:18 PM
idrinkh2O's Avatar
idrinkh2O idrinkh2O is offline
Test Cricketer
 
Join Date: April 9, 2011
Favorite Player: Performing Tigers
Posts: 1,879

এসএসসি ’১১: সে রা যা রা

হার না মানা মেধাবীদের গল্প

বিশাল বাংলা ডেস্ক | তারিখ: ১৪-০৫-২০১১


শাহজাহান ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, গোপাল চন্দ্র পাল

গরিব ঘরে জন্ম ওদের। ছোট্ট, কোমল হাতে কারও উঠেছে কাস্তে-কোদাল, কেউ ধরেছে ভ্যানগাড়ির হাতল। ভোরে ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছে, ফের সকাল ১০টায় বই-খাতা হাতে হাজির হয়েছে স্কুলে। কেউ কেউ দিনমান মজুরি খেটেছে, রাতে বসেছে পড়তে। এত কষ্টেও দমেনি ওরা। সাধনা করে গেছে। পা রেখেছে সাফল্যের প্রথম সোপানে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫। দারিদ্র্যের কাছে হার না মানা সেই সব অদম্য মেধাবীর জীবনের গল্পটা শুনি চলুন।
মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে চায় শাহজাহান: ‘পরীক্ষার সময় মানুষ ছেলেমেয়েদের ভালো-মন্দ কত কিছু খাওয়ায়। অথচ ছেলেডারে দুই মুঠা ভাত দিতে পারি নাই।’ আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বললেন নীলফামারী শহরের বাবুপাড়া মহল্লার সায়মেনা খাতুন। তাঁর ছেলে মো. শাহজাহান ইসলাম এবার নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে, অষ্টম শ্রেণীতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায় সে।
শাহজাহান জানায়, তার বাবা মারা গেছেন ১১ বছর আগে। নানার দেওয়া পাঁচ শতাংশ জমির ওপর তাদের বাড়ি। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সে ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ভাই বিয়ে করে পরিবার নিয়ে আছেন। মেজো ভাই বেকার। তারা দুই ভাই মায়ের সঙ্গে থাকে। মা সায়মেনা বাড়ি বাড়ি ফেরি করে শাড়ি-কাপড় বেচেন। যে আয় হয়, তা দিয়ে ঋণের কিস্তি দেন, সংসার চালান। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটে তাদের দিন। ‘মা কখনো কাজ করতে দিত না আমায়। তার ইচ্ছা আমি লেখাপড়া করে ব্যাংকের ম্যানেজার হই। মায়ের ইচ্ছাটা পূরণ করতে চাই।’ বলছিল শাহজাহান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা তাকে বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়িয়েছি। অনেক সময় খাতা-কলম কিনে দিয়েছি।’
মোস্তাফিজের ঘামঝরানো সাফল্য: তিন শতক জমির ওপর ছোট একটি টিনের ঘর। সে ঘরেই তিন ভাই, দুই বোন ও বাবা-মাসহ সাতজনের সংসার মোস্তাফিজদের। বাবা মজিবার রহমান (৬৫) বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অন্যের বাড়ি কাজ করে মা মোমেনা বেগম যা পেতেন, তা দিয়ে সংসার চলত না। বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে শ্রম দিতে যেত সবার বড় মোস্তাফিজ। বন্ধুদের দেওয়া পুরোনো জামা গায়ে চড়িয়ে একটুও মন খারাপ হতো না। বহুদিন অভুক্ত থেকে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু জিপিএ-৫ পাওয়ার আনন্দ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সমস্ত কষ্টের গ্লানি।
মোস্তাফিজুর রহমান এবার রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াবাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের বাড়ি উপজেলার দামোদরপুর সর্দারপাড়া গ্রামে। কাশিয়াবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, ‘ছেলেটার পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। ওর কাছ থেকে স্কুলের বেতন, ফরম পূরণের টাকা নেওয়া হয়নি।’
ভ্যান চালিয়েও অনন্য নাসির: ‘রইদে পুইড়া, বিষ্টিত ভিজা, ভ্যান চালাইয়া ছাওয়ালডা আমার কাহিল হইয়া যাইত। সারা রাইত জাইগা পইড়ছে। ইস্কুল কামাই করে নাই। হুগুল্লি (সবাই) কইতাছে, নাসির আমার পেলাস (প্লাস) পাইছে।’ কথাগুলো সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হালিমা খাতুনের। তাঁর ছেলে নাসির উদ্দিন এবার উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা আবদুস সালামও ভ্যানচালক। নাসিরের একটি ছোট ভাই আছে। আবদুস সালাম জানান, নাসির তিন বছর ধরে ভাড়ায় ভ্যান চালায়। ভোর পাঁচটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে পরে স্কুলে যেত সে।
অধ্যক্ষ মীর আবদুল হান্নান জানান, নাসির বরাবরই ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতো। ভালো ব্যবহারের জন্য সবাই তাকে ভালোবাসে। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখে নাসির।
সাফল্যের পরও গোপালের মুখ ভার: বাড়িটা পৌরসভার মধ্যে। কিন্তু গোপালদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়ার সামর্থও নেই দিনমজুর বাবার। হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করে এসেছে গোপাল। মা ফুলকুমারী পাল অন্যের বাড়িতে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানানোর কাজ করেন। মায়ের সঙ্গে সেও কাজে হাত লাগায়।
এমন টানাটানির সংসারে জিপিএ-৫ পেয়ে সবার নজর কেড়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার গোপাল চন্দ্র পাল। সে এবার ধানগড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে এই সাফল্য পেয়েছে। রায়গঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়ায় তাদের বাড়ি। ভালো ফলের পরও গোপালের মুখে হাসি নেই। কলেজে পড়ার খরচ জোগাবে কোথা থেকে?
ধানগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন খন্দকার বলেন, ‘গোপালের মতো মেধাবী ছাত্রদের আমরা সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতার চেষ্টা করি।’
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন মীর মাহমুদুল হাসান, নীলফামারী; রহিদুল মিয়া, তারাগঞ্জ (রংপুর); কল্যাণ ভৌমিক, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) ও সাজেদুল আলম, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ)]
(Source: http://www.prothom-alo.com/detail/da...14/news/154083)
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
Reply With Quote