View Single Post
  #131  
Old May 12, 2012, 05:15 PM
idrinkh2O's Avatar
idrinkh2O idrinkh2O is offline
Test Cricketer
 
Join Date: April 9, 2011
Favorite Player: Performing Tigers
Posts: 1,879

শ্রম-ঘামের অর্জন

বিশাল বাংলা ডেস্ক | তারিখ: ১৩-০৫-২০১২


মো. হাসান মোল্লা, রুবেল আলম, আরিফুল ইসলাম, মেহেদী মাসুদ,ইমাম হোসেন ও শামীম আহমেদ

অন্যের জমিতে শ্রম দিত হাসান মোল্লা ও শামীম আহমেদ। নির্মাণশ্রমিক ছিল রুবেল। আরিফুল ইসলাম চালাত ভ্যান। ছাতার কারিগর ছিল মাসুদ রানা। রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করত ইমাম হোসেন। দরিদ্র পরিবারের এসব ছেলে কায়িক শ্রমের পাশাপাশি পড়াশোনা করে সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এরা সবাই পেয়েছে জিপিএ-৫।

প্রসঙ্গত, জিপিএ-৫ পাওয়া এমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫০ জনকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী, প্রতিবন্ধী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়।

বাবার সঙ্গে দিনমজুরি করত হাসান: বাবা ছত্তার মোল্লা দিনমজুরি করেন। এ কাজ করে টেনেটুনে পাঁচ সদস্যের সংসার চালান। অভাব থাকায় প্রায়ই হাসানকে তাঁর বাবার সঙ্গে কাজে যেতে হতো। তাই নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া হতো না তার। দিনের বেলা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে রাতে পড়তে বসত। সে কলাপাড়া উপজেলার তেগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার বাড়ি আজিমুদ্দিন গ্রামে।

ভালো ফলাফলের পরও হাসানের বাবা-মার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। মা আমেনা বেগম বলেন, ‘মোরা খাইয়া না-খাইয়া দিন কাডাই। হেইয়ার মধ্যেও মোর পোলাডা কত কষ্ট কই র‌্যা ল্যাহাপড়া করছে। এত কষ্টের পরও হুনছি ও ভালো পাস করছে। এ্যাহন সামনে যে ক্যামনে অর ল্যাহাপড়া চলবে, হেই চিন্তায় ঘুম অয় না।’
নির্মাণশ্রমিকের কাজ করত রুবেল: বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভরনশাহী গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম রুবেল আলমের। বাবা শহিদুল ইসলাম একজন ভ্যানচালক। ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই রুবেলকে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতে হয়েছে। বিদ্যালয়ে না গিয়ে প্রায়ই এ কাজ করতে হতো তাকে। সে ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, রুবেল বেশ মেধাবী। উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলে সে তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

ভ্যান চালানোর ফাঁকে পড়ত আরিফুল: রিকশাচালক বাবা আবদুল আলিমের আয়ে সংসার চলত না। সংসারের খরচ জোগাতে সেই ছোটবেলা থেকেই ভ্যান চালাতে শুরু করে। সুযোগ পেলে বিদ্যালয়ে যেত। তাদের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কুসুমসাড়া গ্রামে। সে এবার উপজেলার সমশিরা উচ্চবিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল।

বাবা আবদুল আলিম বলেন, ‘কেরোসিন কেনার টাকা ছিল না। রাতে বেশিক্ষণ সে পড়তেও পারত না। সকালে দুই ঘণ্টা ভ্যান চালিয়ে বিদ্যালয়ে যেত। বিকেলে বাড়ি ফিরে আবার ভ্যান নিয়ে বের হতো।’
ছাতা মেরামত করত মাসুদ: ভালো ফলাফল করার আনন্দে সবাই যখন বিভোর, তখন ছাতা মেরামতের কাজে ব্যস্ত ছিল মেহেদী মাসুদ। বাড়ি তার নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বর্ণাকান্দা গ্রামে। বাবার নাম নুরুল ইসলাম। মাসুদ পূর্বধলা জগৎ মণি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেকে ঠিকমতো খাওয়াতে ও জামা-কাপড় কিনে দিতে পারিনি। তার পরও এমন ভালো ফলাফল করে সমাজে সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’

পূর্বধলা জগৎ মণি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু শেখর তালুকদার বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও মেহেদী মাসুদকে সহায়তা করেছে। তার কাছ থেকে কোনো বেতন বা ফি নেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগতভাবেও আমি তাকে সাহায্য করেছি। ভবিষ্যতে সহযোগিতা পেলে সে প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের মতো উচ্চস্তরেও ভালো ফল করবে।’

রাজমিস্ত্রির জোগালি ছিল ইমাম: ইমামের বাবা দিনিয়ার আলী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কিন্তু তিনি যা আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চলত না। মা-বাবার কষ্ট দূর করতে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে ইমাম হোসেন। বিদ্যালয়ের ছুটির দিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এ কাজ করত সে। এত সমস্যার মধ্যেও নিয়মিত লেখাপড়া করে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার জোবেদা সোহরাব মডেল একাডেমী থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

ইমামের বাবা যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনিয়ার আলী জানান, ছোটবেলা থেকে ইমাম লেখাপড়ায় খুব ভালো। ওর শিক্ষকেরা বলেন, ইমাম অনেক বড় হবে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে ইমাম লেখাপড়া না করে ঘুমাত না।

অন্যের জমিতে শ্রম দিত শামীম: বাবা অছিম উদ্দিন অন্যের জমিতে কাজ করেন। এ রকম একটি পরিবারে জন্ম হলেও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে শামীম। বিদ্যালয় ছুটির দিন কৃষিশ্রমিকের কাজ করতে হয়েছে তাকে। এমনকি ফল প্রকাশের দিনও মাঠে কাজ করতে হয়েছে তাকে। তাদের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পিপুলেশ্বর গ্রামে। সে নালিতাবাড়ীর উত্তর নাকশি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

বাবা অছিম উদ্দিন জানান, তাঁর ছেলে পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেছে। এখন তাকে কোনো কলেজে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু তাকে লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য তাঁর নেই।

উত্তর নাকশী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শামীমের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। সে অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও নিজে পরিশ্রম করে টাকা-পয়সা উপার্জন করে পড়াশুনা করেছে। আমরা তাকে স্কুলে বিনা বেতনে পড়িয়েছি।’

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন নেছার উদ্দিন আহমেদ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী); মাসুদ রানা, ধুনট (বগুড়া); আনোয়ার পারভেজ, কালাই (জয়পুরহাট); গোলাম মোস্তফা, পূর্বধলা (নেত্রকোনা); কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা; দেবাশীষ সাহা রায়, শেরপুর]
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
Reply With Quote