'বিখ্যাত' হয়ে যাওয়া নাদির শাহ!
ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাকপটু হিসেবে খ্যাতি আছে তাঁর। সেটি দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে যেমন, তেমনি বিদেশেও। ইন্ডিয়া টিভির ফাঁদে পা দেওয়া বাংলাদেশি আম্পায়ার নাদির শাহ প্রসঙ্গে
ভারতের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার অশোক মালহোত্রার কথায়ও সেটা পরিষ্কার, 'নাদির শাহ নামের যে আম্পায়ারের কথা উঠে আসছে, ওর সঙ্গে আমি বাংলাদেশে খেলেছি। ছেলেটা বেশি কথা বলে।'
কে না জানেন যে বেশি কথা বলায় ঝুঁকি থাকে। যখন-তখন বেফাঁস কিছু বলে ফেলার বিপদে পড়তে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে 'পাগলাটে' স্বভাবের জন্যও সমধিক পরিচিত নাদির সেই বিপদও টের পেয়েছেন অনেক পরে। না হলে কী আর ইন্ডিয়া টিভির 'স্টিং অপারেশন'-এর ফুটেজ প্রচার শুরুর পর থেকে অকাতরে ভারতের সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়ান তিনি!
এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এখন তিনি কলকাতায়। সেখান থেকেই পরশু সন্ধ্যায় ফোনে ফোনে ঘনিষ্ঠজনদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দেওয়ায়ও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ফেঁসে যাওয়ার জন্য যেখানে তাঁর ব্যথিত হওয়ার কথা, সেখানে টেলিফোনের ওপার থেকে নাদিরের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেছেন এক ঘনিষ্ঠজন। কারণ নাদির নাকি বলেছেন যে 'ইন্ডিয়া টিভি তো আমাকে বিখ্যাত বানিয়ে দিয়েছে। সবাই এখন আমার ইন্টারভিউ চাইছে।'
তাঁর জন্য মানহানিকর, অপমানজনক ও স্পর্শকাতর বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিতে এমনকি কলকাতা থেকে মুম্বাইতেও উড়ে গেছেন। ভারতের একটি টিভি চ্যানেল তাঁকে নিজেদের খরচে বিমানে করে মুম্বাইতে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের স্টুডিওতে সাক্ষাৎকার নিয়ে আবার নাদিরকে কলকাতার ফিরতি ফ্লাইটের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। কাল বিবিসি বাংলা সার্ভিসের সঙ্গেও কথা বলেছেন নাদির। ১২ অক্টোবর দেশে ফিরে তিনি ইন্ডিয়া টিভির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেওয়ার কথা বলেছেন। যদিও কাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এর আগে অনেকের সঙ্গে কথা বলার প্রসঙ্গ তোলা হলে তিনি বলেন, 'এর আগে কথা বলেছি কারণ তখনও বিসিবি থেকে আমাকে কথা বলতে নিষেধ করা হয়নি। বিসিবি থেকে বলে দেওয়া হয়েছে আর কারো সঙ্গেই যেন এখন ওই বিষয়ে কথা না বলি।'
অর্থের বিনিময়ে আউট, নট-আউট কিংবা কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্ত দিতে রাজি এ আম্পায়ার ইন্ডিয়া টিভির গোপন ক্যামেরার সামনে এমন কিছু কথাও বলেছেন যেগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ইমেজ ক্ষুণ্ন করার জন্যও যথেষ্ট। যদিও বিসিবি এ বিষয়ে এখনই মুখ খুলছে না। কাল দুপুরে বোর্ড পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস শুধু জানিয়েছেন যে বিসিবি বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারেই নিয়েছে, 'আমরা এটাকে বরদাশত করব না। শক্ত হাতে দমন করব।'
এর আগে যথেষ্ট প্রমাণও পেতে চায় বিসিবি, 'এটা আমরা খতিয়ে দেখছি। তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করছি। সেসব হাতে এলে আমরা বসব। একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাঁকে কাল (গত পরশু) ফোন করেছিলাম। তদন্তের স্বার্থে যেসব তথ্য দরকার, সেসব তিনি আমাদের সংগ্রহ করতে বলেছেন। তদন্ত কমিটি তদন্ত করার পরই আমরা উপসংহারে পৌঁছাব।' প্রসঙ্গত, বিপিএলের সময় স্পট ফিক্সিংয়ের পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিসিবি ইমেজ অক্ষুণ্ন রাখতে তা ধামাচাপা দিয়েছে বলে ইন্ডিয়া টিভিকে জানিয়েছেন নাদির। সেই সঙ্গে বিসিবি দেশি আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকে- এমন কথাও বলেছেন তিনি। এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করতে চাইলেন না জালাল। ইতিমধ্যে অনেক কথা বলে ফেলা নাদিরকেও আপাতত বিরত রাখতে পারছে বিসিবি!
----------
http://www.kalerkantho.com/?view=det...e_id=1&index=1