হায় বিসিবি!
লুৎফর গত বৃহস্পতিবার বিকেএসপিতে যে ভাষায় বিসিবি সভাপতি এবং আরও দুজন পরিচালককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, সন্দেহাতীতভাবে তা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। চাকরিজীবী মানেই চাকর এবং চাকরবাকর দিয়ে ক্রিকেট হয় না—এই বৈপ্লবিক তত্ত্বের জনক হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। কিন্তু বিসিবির ছায়াতলে থেকে যেভাবে এর পাল্টা জবাব দেওয়া হলো, সেটি তো আরও আপত্তিকর। লুৎফর রহমান শুধুই একজন ব্যক্তি। নিজের কোনো আপত্তিকর কাজের দায়ও শুধুই তাঁর। বিসিবি তো তা নয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গৌরব ক্রিকেটের পতাকা তুলে ধরার দায়িত্বে থাকা একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
তুচ্ছ একটা ঘটনা কেন এমন ‘বিসিবি বনাম ব্যক্তি’-এর রূপ নেবে? নিয়েছে, কারণ বিসিবির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে লুৎফরের বিরোধটা অনেক পুরোনো। সেটির মূলেও ক্লাব রাজনীতিই। আর এটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয় যে, টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ১৪ বছর পরও বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই ক্লাব-রাজই চলছে। মোহামেডানের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় বেরিয়ে এসে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন লুৎফর। দেদার টাকা খরচ করে ভালো দল গড়ার সঙ্গে ‘চ্যাম্পিয়নস লাক’ মিলিয়ে ভিক্টোরিয়া পর পর দুবার চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়া ছেড়ে গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্সের স্বত্ব কিনে নিয়েও। একদা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে রিয়াল-বার্সার মতো চিরবৈরী আবাহনী-মোহামেডান তাই ‘বাদলকে ঠেকাও’ মিশনে এককাট্টা হয়ে গেছে বেশ আগেই। বছর আড়াই আগে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ইউসুফের ছাড়পত্র-বিতর্কের সময়ই যা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। যেটি আরও নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে গত প্রিমিয়ার লিগে। লুৎফরের গুছিয়ে ফেলা দল এলোমেলো করে দিতেই আবিষ্কার করা হয়েছে ‘প্লেয়ারস বাই চয়েস’ নামে অদ্ভুত এক পদ্ধতির। ক্রিকেটাররা প্রতিবাদ করায় জানানো হয়েছে, এটি শুধুই এই বছরের জন্য। আগামীবার থেকে আবার আগের নিয়ম। বছরটি কী কারণে ‘হ্যালির ধূমকেতু’ দেখতে পাওয়ার মতো এমন ব্যতিক্রমী, এই প্রশ্নের জবাব এত হাস্যকর ছিল যে, তা আর লিখতে ইচ্ছা করছে না।
লুৎফরকে চরমতম শাস্তি দেওয়ায় বিসিবির সব পক্ষেরই এমন প্রবল উৎসাহ ছিল যে, নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেও রেহাই মেলেনি। লুৎফরের আপত্তিকর ভাষাটাই শুধু ধর্তব্যে নেওয়া হয়েছে, বক্তব্য একদমই নয়। যদি প্রশ্ন হয়, তাঁর অভিযোগগুলো কি খতিয়ে দেখা হয়েছে? ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে গড়াপেটা আর আম্পায়ারদের প্রভাবিত করা নিয়ে অনেক কথাই তো বাতাসে ভেসে বেড়ায়! ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান কোনো ক্লাবের কোচের পদে থাকলে সত্যিই কি স্বার্থের সংঘাত হওয়ার কথা নয়? বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান কি কাউকে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ দিয়ে জানতে চেয়েছেন, গত সোমবার মিরপুরে ‘হোম অব ক্রিকেট’ কীভাবে শয়ে শয়ে বহিরাগতের চারণভূমিতে পরিণত হলো? মিছিল-টিছিল শেষে তাঁরা বিসিবিতে আপ্যায়িত হলো কীভাবে? বিসিবির মতো একটা জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বহির্দেয়াল কীভাবে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ব্যানারে ছেয়ে গেল? এই প্রশ্নগুলো বিসিবি সভাপতিকে বিব্রত (ক্ষুব্ধও কি নয়!) করে না থাকলে তো বুঝতে হয়, উত্তরগুলো তাঁর জানা।
http://www.prothom-alo.com/sports/ar...A6%AC%E0%A6%BF