Thread
:
Foreign National those who supported Bangladesh in '71
View Single Post
#
48
December 12, 2011, 11:56 PM
PoorFan
Moderator
Join Date: June 15, 2004
Location: Tokyo <---> Dhaka
Posts: 14,850
বিদেশি সহযোদ্ধা
ভিক্তোরিয়া-বোর্হেস দুই সুহূদ
আলীম আজিজ |
তারিখ: ১৩-১২-২০১১
১ মন্তব্য
প্রিন্ট
ShareThis
« আগের সংবাদ
পরের সংবাদ»
ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো
১৯৭১ সালে পূর্ববঙ্গ যখন জ্বলছে, হাজার হাজার মানুষ প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে আশ্রয় নিচ্ছে ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোয় এবং প্রতিদিন বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে বাঙালির দুঃখ-দুর্দশার করুণ ছবি, তখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিবেকবান মানুষ—তাঁদের কেউ সাংবাদিক, কেউ কবি-লেখক, কেউ গায়ক, কেউ রাজনীতিবিদ—নানাভ বে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, নানাভাবে তাঁরা স্বাধীনতাকামী বাঙালির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁদের সঙ্গে সবিশেষ দুটো নাম যোগ করা যায়: ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো আর হোর্হে লুইস বোর্হেস।
১৯৭১ সালের ১১ জুন ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো ও লেখকদের লেখক হিসেবে খ্যাত হোর্হে লুইস বোর্হেস আর্জেন্টিনার একদল বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে হাজির হন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুই মারিয়া দ্য পাবলো পার্দোর দপ্তরে। সেদিন তাঁদের সাক্ষাৎকারের মূল লক্ষ্য ছিল তখনকার পূর্ব পাকিস্তান। তাঁরা পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে, কী ঘটছে সেখানে? ফলে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও তাঁদের বিবেকের তাড়নাকে অস্বীকার করতে পারেননি। সেদিন তাঁদের দাবি ছিল: ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোয় বাঙালিরা মানবেতর জীবন যাপন করছে, জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণসাহায্য নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াক আর্জেন্টাইন সরকার। তাঁরা মন্ত্রীর হাতে একটি স্মারকপত্রও তুলে দেন।
সেদিনের এই উদ্যোগের সঙ্গে ওকাম্পো-বোর্হেস তো ছিলেনই, ওই স্মারকে স্বাক্ষর করেছিলেন আর্জেন্টিনার শীর্ষস্থানীয় লেখক, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, আইনজীবী আর এল সালভাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইসমায়েল কুইলেস।
এই উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকায় সেদিন ছিলেন ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো, যাঁকে বোর্হেস উল্লেখ করেছিলেন ‘শ্রেষ্ঠ আর্জেন্টাইন নারী’ হিসেবে। তবে ওকাম্পোর লেখক-পরিচিতির চেয়ে বড় খ্যাতি ছিল কিংবদন্তিতুল্য সাহিত্যপত্রিকা সুর-এর প্রকাশক হিসেবে। তবে বাঙালি পাঠকের কাছে তাঁর পরিচিতি রবীন্দ্র-অনুরাগী হিসেবে। রবীন্দ্রনাথের সুদূরতম প্রেম, যাকে কবি স্বয়ং নামকরণ করেছিলেন ‘বিজয়া’, তাকে উৎসর্গ করেন কবিতাগ্রন্থ পূরবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৪ সালে আর্জেন্টিনা ভ্রমণকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর ভিলায় অতিথি হয়েছিলেন।
৭ এপ্রিল ১৮৯০ সালে জন্ম নেওয়া ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। ১৯৪৫ সালে প্রকাশ করেন নাৎসিবিরোধী সংকলন লেটার ফ্রানসেসে। এ ছাড়া আর্জেন্টাইন হিসেবেও তিনিই একমাত্র, যিনি নুরেমবার্গ বিচারকাজে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে স্বৈরাচার সরকার হুয়ান ডমিঙ্গো পেরনের বিরোধিতা করায় কারাবরণও করেন তিনি।
হোর্হে লুইস বোর্হেস ছিলেন লাতিন আমেরিকার এক ভিন্ন ঘরানার সাহিত্যিক। আর্জেন্টাইন, জন্ম বুয়েনস এইরেসে ১৪ আগস্ট ১৮৯৯ সালে। ১৯১৪ সালে তাঁর পুরো পরিবার চলে যায় সুইজারল্যান্ডে। ১৯২১ সালে আর্জেন্টিনায় ফেরার পরই বোর্হেসের লেখা প্রকাশ হতে শুরু করে। ১৯৬১ সাল থেকে তাঁর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসতে শুরু করে। স্যামুয়েল বেকেটের সঙ্গে যৌথভাবে পান ‘প্রি ইন্টারন্যাশনাল’ পুরস্কার।
১১ জুন ১৯৭১ সালে আর্জেন্টাইন মন্ত্রীকে দেওয়া স্মারকপত্রের ভাষ্য:
‘পূর্ব বাংলার সাম্প্রতিক ট্র্যাজিক ঘটনায় অবিশ্বাস্যসংখ্যক মানুষ—পুরুষ, মহিলা ও শিশু নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক সমস্যা। ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত থেকে ভারত শান্তি, সহাবস্থান ও সমমর্মিতার প্রতি নিবেদিত—হতভাগ্য শরণার্থী, যাদের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, তাদের খাওয়াতে-পরাতে ও বাসস্থান দিতে ভারত হিমশিম খাচ্ছে। ভারত যখন নিজেই জাতি গঠনের কাজে নিয়োজিত, তখন এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার একা বহন করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।
‘মানুষের ট্র্যাজেডি জাতীয়তা ও সীমান্তের বাধা মানে না; পৃথিবীর যেকোনো স্থানে ভোগান্তি, মৃত্যু ও বিপন্নতা সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের কারণ। তার পরও এটা দুর্ভাগ্যজনক যে পূর্ব বাংলায় যা ঘটছে, তার পরও বিশ্ববিবেক ঠিকভাবে জেগে ওঠেনি। এমনকি অন্য দেশের দায়ভার, যার সৃষ্টিতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই, তা প্রশাসনের মাধ্যমে মানবিক সমস্যা কমাতে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকারগুলোর কিছু সাহায্য-তহবিল থেকে থাকে, কিন্তু সংকটের যে আকার, তাতে পরিস্থিতির দাবি—বিশ্বমানবতা এগিয়ে আসুক, এ সমস্যার ভার বহনে অংশী হোক। এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, জাতীয় নয়।
‘এই বিশেষ ক্ষেত্রে জবাব কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে একাত্মতা ঘোষণা করা নয়, কিংবা কেবল অনুধাবনের সাক্ষ্য নয়, এটা হতে হবে ধনাত্মক ও সরাসরি সাহায্য—হতে হবে নগদ সাহায্য কিংবা দ্রব্যসামগ্রী, সেই সঙ্গে বিশ্ববিবেক জাগানো এবং এই সংকটকে সমষ্টিগত দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা তো রয়েছেই।
‘আশা করা যায়, আমাদের সরকার বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সংহতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাড়া দেবে এবং ভারতের ওপর আরোপিত দুর্দশা লাঘব করবে।’
Prothom Alo
PoorFan
View Public Profile
Send a private message to PoorFan
Find all posts by PoorFan