টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চাহিদাই হলো গতিশীল ও বৈচিত্র্যময় নেতৃত্ব। প্রতিটি মুহূর্তেই এখানে ভাঙতে হয় নিজেকে। অনেক সময়ই আপস করতে হয় নিজের সঙ্গে, পরমুহূর্তেই ছুটতে হয় রোমাঞ্চের পেছনে। কিছু ঘটার অপেক্ষায় না থেকে বরং নিজ থেকেই ঘটানোর উদ্যোগ নিতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো চুরি করে নিতে হয়। নেতৃত্বে একই সঙ্গে থাকতে হয় প্রত্যুৎপন্নমতিত ব এবং দূরদর্শিতা। খেলার ভাষা পড়ে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয় দ্রুত। এই গতির রথে চড়তে কতটা প্রস্তুত অধিনায়ক মুশফিক? ‘আশা তো করি, প্রস্তুত থাকব...গ্যাম্বলিং হোক বা যেকোনো সময় যেকোনো পরিবর্তন করি, চাইব সেটা যেন ক্লিক করে।’ মুশফিক বললেন বটে, তবে জুয়াখেলার আশ্বাসে ভরসা করার বিশ্বাস মিলছে না তাঁর গত কিছুদিনের অধিনায়কত্বে।
শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে বাগে পেয়েও যে বাংলাদেশ হারাতে পারেনি, বড় একটা কারণ মুশফিকের অতিরক্ষণাত্মক অধিনায়কত্ব। ৬৭ রানে প্রতিপক্ষের ৮ উইকেট কিংবা ৯০ রানে ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার পর যখন আরও চেপে ধরার কথা, মুশফিক তখন ভাবতে শুরু করেছেন ব্যাটিং পাওয়ার প্লে বা ইনিংসের শেষদিককার কথা। মূল বোলারদের পাওয়ার প্লের জন্য জমিয়ে রেখে বোলিং করিয়েছেন পার্টটাইমারদের, আলগা হয়েছে ফাঁস। জুটি খানিকটা গড়ে উঠতে না-উঠতেই ফিল্ডিং ছড়িয়ে দিয়ে আরও আলগা করে দিয়েছেন বাঁধন।
কোহলি-রাহানে বা স্টানিকজাই-শেনোয়ারিরা যখন বড় জুটি গড়ে তুলছেন, মুশফিককে মনে হয়েছে অসহায়। কোহলি ছন্দে থাকলে বিশ্বের সব বোলিং আক্রমণকে হয়তো তুলাধোনা করে ছাড়েন, কিন্তু আউট করার চেষ্টাটা তো থাকতে হবে! বোলিংয়ে ছিল না পরিকল্পনার ছাপ, অধিনায়ক বাতলে দিতে পারেননি পথ। ফিল্ডিং পজিশনে ভিন্ন কিছু চেষ্টা করার পথে তো কখনোই হাঁটেননি। ড্রাইভ ভালো খেলা ব্যাটসম্যানের জন্য হয়তো কিছুক্ষণ দুটি শর্ট কাভার রেখে ড্রাইভ খেলানোর চেষ্টা করা যায় কিংবা সোজা ব্যাটে ভালো খেলা ব্যাটসম্যানের জন্য নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে ঘেঁষে রাখা যায় কোনো ফিল্ডার। কোহলি-সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের মতো ব্যাটসম্যানরা থিতু হয়ে গেলে নাটকীয় কোনো বোলিং পরিবর্তন করা কিংবা অভাবনীয় কোনো জায়গায় ফিল্ডার রাখা। এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচটির কথাই ভাবুন। ম্যাথুস-চতুরঙ্গরা যখন একের পর এক ব্লক করে সাকিবের ওভার শেষ করে দিচ্ছেন, তখন কেন নয় একটি স্লিপ বা সিলি পয়েন্ট কিংবা সিলি মিড অন-অফ? প্রথাগত পথে কাজ না হলে কেন নয় ভিন্ন কিছু চেষ্টা করা! এসবে কাজ হবেই, সেই নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু প্রতিপক্ষকে একটু ভাবানো, একটু ভড়কে দেওয়া, খানিকটা অস্বস্তিতে ফেলা তো যায়।
গত দুই সিরিজে বারবার প্রশ্ন উঠেছে একাদশ নির্বাচন নিয়েও। প্রশ্ন উঠেছে একাদশে জায়গা পাওয়া কজনের ভূমিকা নিয়ে। বাজে ফর্মের কারণে বাদ দেওয়া মাহমুদউল্লাহকেই আবার চোট পাওয়া সোহাগ গাজীর বদলে নেওয়া হয়েছে। দলে এসে মাহমুদউল্লাহ আবার সরাসরি একাদশেও ঢুকে গেছেন। অধিনায়ক যুক্তি দেখিয়েছেন মাহমুদউল্লাহর বোলিং সামর্থ্যকে। পরদিনই আবার মাহমুদউল্লাহকে পর্যাপ্ত বোলিং না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘আপনারাই বলেন রিয়াদ ভাই অরিজিনাল বোলার নয়।’ সোহাগের বদলে স্পেশালিস্ট বোলার সানি কেন নয়, এই প্রশ্নে মুশফিক বললেন, ‘সানি ভাই কয়েকটি ম্যাচে ভালো বোলিং করেছে...সৌভাগ্যবশত.. ।’ দলের নতুন একজন সম্পর্কে যখন অধিনায়ক এমন বলেন বা বিভ্রান্তিকর কথা বলেন সিনিয়র কারও ভূমিকা নিয়ে, সবাইকে সেটি ভুল বার্তা দেয়।
More at
http://www.prothom-alo.com/sports/ar...A6%95%E0%A7%87