View Single Post
  #13  
Old February 9, 2011, 04:23 PM
Murad's Avatar
Murad Murad is offline
Cricket Sage
 
Join Date: July 30, 2006
Favorite Player: MAM & MBM
Posts: 19,850

অনুশীলন ছিল না। কিন্তু সকালে আইসিসির স্মারক ব্যাটের জন্য অটোগ্রাফ দিতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। কানাডার বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য কালই চট্টগ্রামে উড়ে গেছে বাংলাদেশ দল। সেটার গোছগাছ ছিল। কাল রাতেই ঢাকায় পা রেখেছে ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঈদের আনন্দ মাটি করে দেওয়া কানাডা

যেন নবাবি দরবার। মজলিসই বলা ভালো। ঝাড়বাতির মায়াবী রোশনাই। বাইরে সতর্কভঙ্গিতে, খুঁতখুঁতে চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সান্ত্রি-সেপাই। ভেতরে পারিষদদের ব্যস্তসমস্ত ছোটাছুটি।
কাল শেরাটন হোটেলে ছিল সে রকমই এক উৎসব। পরশু থেকে বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দিন ছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবের একার সংবাদ সম্মেলন। কাল আরেকটি ব্যস্ত দিন। ক্রিকেটারদের, কর্মকর্তাদের; সাংবাদিকদেরও।
অনুশীলন ছিল না। কিন্তু সকালে আইসিসির স্মারক ব্যাটের জন্য অটোগ্রাফ দিতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। কানাডার বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য কালই চট্টগ্রামে উড়ে গেছে দল। সেটার গোছগাছ ছিল। কাল রাতেই ঢাকায় পা রেখেছে ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঈদের আনন্দ মাটি করে দেওয়া কানাডা। প্রথম অতিথি দল বলে বাড়তি একটা কৌতূহল তাদের নিয়েও।
সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা ছিল শেরাটন হোটেলের উন্মুক্ত ‘মিডিয়া সেশনে’। চাতক সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হলো বাংলাদেশ দলের চার তারকা—সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবাল, স্পিন-সেনাপতি আবদুর রাজ্জাক, বড় মঞ্চে ঝলসে ওঠার শিল্পী মোহাম্মদ আশরাফুল আর অলরাউন্ড-ভরসা মাহমুদউল্লাহকে।
ইতস্তত ঘুরঘুর করতে দেখা গেল কোচ জেমি সিডন্সকেও। কপালে চিন্তার ভাঁজ, পেশাদারি খোলসের ভেতরে ভেতরে একটু যেন রোমাঞ্চিতও। এটা যে তাঁরও প্রথম বিশ্বকাপ!
সাংবাদিকদের ক্ষুধা যেন অন্তহীন। আক্ষরিক অর্থেই কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ দলের ছায়াসঙ্গী হয়ে আছেন তাঁরা। ‘আশরাফুল, আপনার লক্ষ্য কী?’ ‘সাকিব, পারবেন তো?’ ‘তামিম দেখিয়ে দিতে হবে কিন্তু...।’ শুধু রোজকার রুটিন প্রশ্ন হয়ে থাকে না, সাংবাদিকদের কণ্ঠেও যেন মিশে থাকে সমর্থকদের আবদারের সুর।
এদিন ছবিটা অবশ্য একটু আলাদা। সাংবাদিকেরা এবার তারকাদের কাছে ছুটে গেলেন না। তারকারাই এলেন সাংবাদিকদের কাছে। চার টেবিলে পালাক্রমে এসে বসলেন আশরাফুল, রাজ্জাক, তামিম, মাহমুদউল্লাহরা। একটু বৈঠকি ঢঙে। রাজ্জাকরা কখনো গুরুগম্ভীর উত্তর দেন। কখনো দুষ্টুমি। কখনো সপ্রাণ হাসি।
একজনের সাক্ষাৎকার শেষ হতে না-হতেই আইসিসির কর্তা তাড়া দেন, ‘কুইক কুইক, দিস উইল বি দ্য লাস্ট কোয়েশ্চেন।’ শেষ প্রশ্ন করার ব্যস্ততা দেখা দেয় সবার মধ্যেই। সনাতন সাংবাদিকেরা নোট হাতড়ান, ‘ডিজিটাল’ সাংবাদিকেরা রেকর্ডারের বোতাম।
এক কোণে আবার টিভি সাংবাদিকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। গোটা পঁচিশ টিভি ক্যামেরা তাক করা। আইসিসি বিশ্বকাপ সহযোগীদের শতেক লোগো লাগানো ব্যাকস্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে সেই একই কথা বলে যান তামিমরা। তার পরও শুনতে ভালোই লাগে।
কথার গুঞ্জন, ব্যস্ত ছোটাছুটি, আলোকচিত্রীদের মুহুর্মুহু ঝলসে ওঠা ক্যামেরার ফ্লাশ—এতসবের ভিড়ে শেরাটনের মার্বেল রুমে ভেসে বেড়াল একজোড়া শব্দ—‘কোয়ার্টার ফাইনাল’ ‘কোয়ার্টার ফাইনাল’। সাংবাদিকেরা বলেন, ক্রিকেটাররাও। তামিম বেশ স্পষ্ট করেই জানালেন, ‘এবার আমাদের লক্ষ্য দ্বিতীয় রাউন্ড। গতবার যেতে পারলে এবার কেন পারব না?’ তামিমের প্রশ্নটায় সায় জানানোর ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন সবাই।
পরিসংখ্যান-প্রিয় আশরাফুল দিলেন আরেকটু বিশদ ব্যাখ্যা, ‘দেখুন, নিজেদের কন্ডিশনে যেকোনো বড় দলকে হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে আমাদের চারটি ম্যাচ জিততে হবে। হল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাব ধরে নিচ্ছি। এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দুটিকে হারালেই হবে।’
ভারত? ভারতের কথা বললেন না! গতবার তো ভারতকে হারিয়েই শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপের অভিযান। সাংবাদিকদের ভিড়ে ওঠা মৃদু গুঞ্জনটা থামিয়ে দিলেন আশরাফুল, ‘আসলে ভারতকে হারানো এবার কঠিন হবে। তবে চারটি নয়, আমরা সবগুলো ম্যাচ জয়ের জন্যই খেলব।’
একজন এই প্রশ্নও তুললেন, আয়ারল্যান্ড-হল্যান্ডকে হালকা করে দেখে পচা শামুকে আবার পা কাটবে না তো! মাস ছয়েক আগেই তো এই দুই দলের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। আশরাফুল আশ্বস্ত করলেন, ‘আয়ারল্যান্ড ওদের কন্ডিশনে খেলেছে, আমাদের কন্ডিশন স্পিন-সহায়ক। আর হল্যান্ডের বিপক্ষে তো কার্টেলড ম্যাচ ছিল।’
সাংবাদিকদের খিদে মেটে না। কোয়ার্টার ফাইনালের কথা অনেক হয়েছে। ফাইনাল না হোক, নিদেন সেমিফাইনালের কথা তো বলা উচিত। তামিম ক্ষুধা মিটিয়ে দিলেন, ‘দেখুন, কোয়ার্টার ফাইনাল মানেই তো আর মাত্র তিনটা ম্যাচ!’ আশরাফুল ‘ইমপসিবল ইজ নাথিং’টা অনুবাদ করলেন তাঁর ভাষায়, ‘যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।’
বাংলাদেশ দলে ক্রিকেটারদের মধ্যে শোনা যায় দারুণ ঐক্য। সেটার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকল কালকের কথাবার্তা। তামিম তাঁর নিজস্ব দাপুটে ভঙ্গিতে বলেন, আশরাফুল নিচু স্বরে; কিন্তু মূল ভাষ্য একটাই। দলের লক্ষ্য হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালের কথা সবাই বলেছেন। একই সঙ্গে চাপ প্রসঙ্গটাও দিয়েছেন উড়িয়ে।
কিন্তু বিশ্বকাপ ঘিরে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে উন্মাদনার যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তার আঁচ কি লাগে না তাঁদের গায়ে? তারকার খোলস ছেড়ে রক্তমাংসের তামিম দেখা দিলেন এবার। বাংলাদেশ দলের প্রতি অকুণ্ঠ এই ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞতা জানালেন। এবং বললেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি, ‘আমি বলব তিনিই খাঁটি সমর্থক, দলের দুঃসময়েও যিনি পাশে থাকেন। আশা করব, বিশ্বকাপে আমাদের কঠিন সময় এলেও যেন সবাই পাশে থাকে।’
তা তো থাকাই উচিত। ভেতরে ভেতরে চলছে সমর্থকদের সেই প্রস্তুতি। বাইরে থেকে দেখলে ঢাকা ঢাকাই আছে। সেই ভিড়—রাস্তায় কি ফুটপাতে। সেই চাঞ্চল্য। এরই মধ্যে কান পাতলে শোনা যায় অন্য এক ছন্দ। বিশ্বকাপের আগমনী সুর। দরজায় খিল এঁটে বসে আছে যে চরম ক্রিকেট-বিরাগী, কদিন পর তার বাড়ির ছাদে গর্বিত ভঙ্গিতে লাল-সবুজ উড়তে দেখলে বিস্মিত হবেন না



২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে লজ্জা উপহার দেওয়া কানাডা কাল ফুলেল অভ্যর্থনাই পেল। বিশ্বকাপের প্রথম অতিথি যে তারাই!

http://www.prothom-alo.com/detail/da...10/news/130428
__________________
~*Islam is the only way to attain peace in life, be it personal, family or political.*~
Reply With Quote