[roman]

http://www.shamokal.com/

মাশরাফির অনুরোধ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শুধু হাত দুটোই জোড় করলেন না, বিনয়ের সঙ্গে মাথা ঝুঁকিয়ে অনুরোধ করলেন, 'প্লিজ আপনারা এ ধরনের প্রশ্ন আমাদের আর জিজ্ঞাসা করবেন না। আমাদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা না বলাই ভালো। ক্রিকেটারদেরও এ নিয়ে কথা না বলা ভালো। যাকে (তামিম ইকবাল ) নিয়ে ইস্যু ছিল সে এখন দলে ফিরেছে। সামনে আমাদের একটা টুর্নামেন্ট। এ মুহূর্তে সবারই মনোযোগ মাঠের পারফরম্যান্সে। আমি দলের সঙ্গে তিন-চার দিন ধরে অনুশীলন করছি। মনে হয় না মাঠের বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে তারা ভাবছে।' তামিমকে ঘিরে বাহাত্তর ঘণ্টা ধরে চলা বিতর্ক দলের ওপর প্রভাব পড়বে কি-না? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে গতকাল এভাবেই পুরো দলকে অভিভাবকের মতো আগলে রাখলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মনে করিয়ে দিলেন আগের দিন বলা মুশফিকুর রহিমের সেই কথাটি। 'মাশরাফি ভাইয়ের উপস্থিতিই অনেক বড় ব্যাপার। পুরো দলকে চাঙ্গা করে রাখতে পারেন তিনি।' সত্যিই তার উপস্থিতি দলের মধ্যে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। মুখ কালো করে থাকা তামিম ইকবালের গলা জড়িয়ে ধরে খুনসুটি করা থেকে সাকিবের কাঁধে হাত রেখে গল্পে মজে ওঠা_ এসবই সম্ভব কেবল মাশরাফির জন্য। এগারো মাস ধরে ঠিক এ মুহূর্তগুলোই বাড়িতে বসে বসে মিস করছিলেন মাশরাফি। 'অনেক দিন পর দলের সঙ্গে থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সত্যি কথা বলতে কি, গত ১১ মাস এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। শুধু ভাবতাম, কবে বাংলাদেশ দলে ফিরে আসব। এখন আমাকে নিজের কাজটা করতে হবে। পারফর্ম করে দলে টিকে থাকতে হবে।' যেখানে দাঁড়িয়ে গতকাল মাশরাফি এ কথাগুলো বলছিলেন এক বছর আগে সে মাঠই মাশরাফির চোখে জল দেখেছিল। বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ার খবর মিরপুরের মাঠে দাঁড়িয়েই শুনেছিলেন। অনেক ইচ্ছা ছিল তার, ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবেন। সে ইচ্ছাটা মাশরাফির আর পূরণ হয়নি।
বছর ঘুরে আবারও সেই ভারত আসছে ঘরের মাঠে। ১২ মাসের পুরনো সেই জিদটা কি এখনও তাজা আছে মাশরাফির মধ্যে? আবারও বিশ্বকাপের কথা মনে না করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেন মাশরাফি। তবে এশিয়া কাপ এবং ভারতকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কোনো বাঁধ তৈরি করলেন না। 'আমার একটি উইকেট এবার মিস হয়ে গেল। শেবাগ আসছেন না ঢাকায়। আমার রাশিতে কিন্তু শেবাগের উইকেট ছিল। অনেকবার তাকে আউট করেছি আমি...' শেবাগের কথা বলতে গিয়ে শিশুর মতো হাসি লেগেছিল মাশরাফির ঠোঁটে। কিন্তু শচীনকে নিয়ে বলতে গিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস ছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। কেননা সবাই জানে শততম সেঞ্চুরির আশায় শচীনভক্তরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকার বিমান ধরবেন। এই শচীনকে কি থামাতে পারবে বাংলাদেশ? 'অনেকেই বলছে শচীনের ফর্ম নেই। আমি কিন্তু তা মনে করি না। শচীনের সেঞ্চুরি হলে মনে হয় না আমরা কেউ আটকাতে পারব। তবে একা শচীনকে নিয়ে আলাদা করে ভাববার কিছু নেই। গৌতম গম্ভীর, রোহিত শর্মা সবাইকে নিয়েই পরিকল্পনা করতে হবে আমাদের।'
১৬ মার্চ ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবেন মাশরাফিরা। এ ছাড়া পাকিস্তান আর শ্রীলংকার মুখোমুখি হতে হবে ঘরের ছেলেদের। এশিয়ার তিনটি দলই যে এই মুহূর্তে বিশ্বের শক্তিশালী দল, সেটা মেনে নিয়েছেন মাশরাফি। 'আমরা অবশ্যই প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য নামব। কিন্তু এমন পরিকল্পনা করছি না যে, এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে হবে আমাদের। এশিয়া কাপ নিয়ে ভাবছি না, আমরা তিনটি আলাদা আলাদা ম্যাচ ভাবছি। আমরা যদি এর মধ্যে অন্তত একটা ম্যাচ জিততে পারি তাহলে সেটাই হবে আমাদের জন্য আলাদা একটা পাওয়া। এশিয়া কাপ ঘিরে চিন্তা করতে গেলে বড় একটা চাপ এসে যাবে ক্রিকেটারদের মধ্যে।'
দিন দিন দলের মেনটর হয়ে যাওয়া মাশরাফি কি শুধুই কথা দিয়ে দলকে উজ্জীবিত করবেন? ১১ মাস পর দলে ফিরে এসে কি পারবেন আগের মাশরাফিকে সবার সামনে তুলে ধরতে? হাঁটুতে অপারেশনের পর মাঠে নেমে সাবধানতা দেখাতে গিয়ে কি নিজের বোলিং গতির সঙ্গে সমঝোতা করবেন না? মনের জড়তা কাটিয়ে তিনি কি পারবেন শতভাগ গতিতে বোলিং করতে? এতগুলো প্রশ্নের একটাই উত্তর ছিল মাশরাফির। 'আমি আগেই বলেছি, দায়বদ্ধতা এবং প্রচেষ্টা। এই দুটি ব্যাপারে আমি কখনও আপস করি না। প্রথম ম্যাচে নেমে যদি চোটও পাই তাহলেও আমার কিছু যায়-আসে না। কিন্তু আমি আমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েই বোলিং করব। দেশের জন্য আমি সবকিছু দিতে প্রস্তুত।'
চোয়াল শক্ত করে বলা মাশরাফির এ কথা শুনতে শুনতেই মনে হচ্ছিল, কেন দলের প্রত্যেক ক্রিকেটার তাকে উদাহরণ হিসেবে সব সময় সামনের আসনে রাখেন।