উল্টো অসহায় আত্মসমর্পণ
গুয়াংজুর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। উল্টো জুটল ৭৩ রানের বিশাল পরাজয়! গত নভেম্বরে গুয়াংজুতে এশিয়ান গেমস ক্রিকেটের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেটি ছিল টি-টোয়েন্টি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৫০ ওভারের ম্যাচেও ব্যবধানটা বড়ই রইল।
ইনিংসের শেষ বলে ১৯৭ রানে অলআউট পাকিস্তান। দুই শর নিচে প্রবল প্রতিপক্ষকে বেঁধে রাখার ‘তৃপ্তি’টা বাংলাদেশের ইনিংসের কিছুদূর যেতেই শেষ। উইকেট বিলানোর প্রতিযোগিতায় জয়টা আস্তে আস্তে চলে গেল নাগালের বাইরে।
তবে জয়-পরাজয়ের ব্যবধানটা দুই দলের মান বা শক্তির পার্থক্যেরও যথার্থ প্রতিফলক। পাকিস্তান সবদিক থেকেই এগিয়ে। তবে দুই ইনিংসেই শুরুটা ভালো করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। ৫৬ রানে তুলে নিয়েছিল পাকিস্তানের ৩ উইকেট, পরে ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৩ রান। কিন্তু প্রভাতের সূর্য এখানে মোটেই দিনের সঠিক পূর্বাভাস হতে পারেনি।
চাপ থেকে কীভাবে বেরোতে হয়, পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেটে ৭৮ রানের জুটি গড়ে সেটি দেখিয়েছেন বিসমাহ মারুফ ও জাবেরা ওয়াদুদ। ব্যাট হাতে ১০৬ বলে ৭৯, এরপর ২ উইকেট—ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে বিসমাহর হাতে। বাংলাদেশের মিডল-অর্ডার ধসিয়ে ৪ উইকেট পাওয়া স্পিনার নিনা রশিদ তাই থাকলেন আড়ালে। পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেট জুটির দুই অংশীদারসহ চারটি উইকেট তুলে নিয়েও আলোচনার বাইরে বাংলাদেশের স্পিনার খাদিজাতুল কুবরাও।
‘ব্যাটিং ভালো হয়নি, আরও অভিজ্ঞতা দরকার আমাদের’—বাংলাদেশ র অধিনায়ক সালমা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে হয়তো এ কথাই বলতেন। তা অনুমান করে সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে কোনো প্রশ্নই করলেন না কেউ! কোচ মমতা মাবেন দায়ী করলেন মিডল-অর্ডারে ব্যাটিং বিপর্যয়কে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ষষ্ঠ ম্যাচে পঞ্চম জয়—পাকিস্তান অধিনায়ক সানা মির সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘বাংলাদেশ ভালো শুরুর পরও ধরে রাখতে পারেনি। এই জয়ে আমাদের জন্য অনেক ইতিবাচক দিক আছে। তবে ফিল্ডিং নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। আমরা কয়েকটি ক্যাচ ফেলেছি। পুরো সামর্থ্য অনুযায়ী বল করতে পারিনি।’
তাতেই তো বাংলাদেশের ইনিংস ভাঙা হাট। জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা, আলগা বলে ফিল্ডারের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেওয়া—বড় চোখে লাগল এসব। ফুল টসে যেখানে চার হতে পারত, উল্টো ক্যাচ!
এত দিন বাংলাদেশের টপ-অর্ডারই ছিল বেশি দুশ্চিন্তার কারণ। কাল মিডল-অর্ডার বালুর বাঁধ। গোটা তিনেক ক্যাচ পড়ার পরও বাংলাদেশের মেয়েদের উইকেটে যাওয়া-আসার মিছিল থামেনি।
ওপেনার আয়েশা আক্তার মিডঅনে সহজ ক্যাচ দিলেন (৩৬ বলে ১৯)। শেষ ১০ ম্যাচে মাত্র ৫৩ রান করা ওপেনার সাথিরার জায়গায় সুযোগ পেয়ে পান্না ঘোষ ছিলেন পুরোপুরি টেস্ট মেজাজে। ৪০ বলে ১০ রান করে শট মিড উইকেটে ক্যাচ। চার নম্বরে আসা ফারজানা এক্সট্রা কাভার দিয়ে দারুণ একটা চার মারার পরপরই বিদায় (১২)।
দুই উইকেট, দুটি ক্যাচ—অধিনায়ক সালমার কাছে ব্যাটিংয়েও বাড়তি কিছু চাইছিল দল। তিনি সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু। সব মিলিয়ে অগোছালো ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছবি।
আয়োজনটা কি গোছানো? এত হাঁকডাক করে আয়োজন, অথচ মিরপুরের প্রেসবক্সে স্কোরারের দেখা মিলল ম্যাচের অর্ধেক শেষ হয়ে যাওয়ার পর।
http://www.prothom-alo.com/detail/da...15/news/201044