ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম নরউইচ ম্যাচটি দেখা, ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা আর হোটেলের প্রাঙ্গণে নিজেরা নিজেরাই গা ঘামিয়ে নেওয়া—প্রথম তিনটি দিন কেটে গেল এভাবেই। এয়ারটেল উদীয়মান তারকাদের আসল কাজটা শুরু হলো কাল থেকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সকার স্কুলে পাঁচ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ।
প্রথমে জানা গিয়েছিল, প্রশিক্ষণ হবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রথম দলের অনুশীলন ভেন্যু ক্যারিংটন মাঠে। ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ পরে নিশ্চিত করেছে, ওখানে হবে শুধু শেষ দিনের প্রশিক্ষণ। কাল তাই শুরু হলো সেলফোর্ড সিটি রেডস স্টেডিয়ামে। এটি আসলে রাগবি দল সেল শার্কসের মাঠ। এটাও দুর্দান্ত।
কৃত্রিম সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠের চারদিকের টিলায় ওক-পাইনের সারি। খানিক দূরেই একটা বেসরকারি বিমানঘাঁটি। খুব নিচু দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছে। অনীক, সোহান, হাফিজ, খোকন, মাহবুব, মশিউরদের স্বপ্নগুলোও তো এ রকম নিচু থেকে অনেক ওপরে উঠতে শুরু করল। বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে ওরা পা ফেলল সবুজ গালিচায়, ‘এত সুন্দর মাঠ আমরা কখনো দেখিনি। যদি দেশে এমন মাঠে খেলার সুযোগ পেতাম!’
বড় এই মাঠটার দুই প্রান্তে একই সঙ্গে শুরু হলো দুটি দলের প্রশিক্ষণ। এক প্রান্তে বাংলাদেশ, অন্য প্রান্তে ভারত। খেলোয়াড় সংখ্যায় বাংলাদেশের কাছে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত গোল খেয়ে গেল। বাংলাদেশ এয়ারটেল রাইজিং স্টার দলে ১২ জন খেলোয়াড়, ভারতের দলে ১১ জন!
প্রধান প্রশিক্ষক মিক বেনেট, তাঁর দুই সহকারী ড্যান বারবার ও অ্যান্ডি কানিংহ্যাম। প্রথম দিনে তরুণ এই দুই সহকারী কোচই মাঠে নেমে প্রশিক্ষণ দিলেন। পার্শ্বরেখায় দাঁড়িয়ে তত্ত্বাবধান করলেন বেনেট। বাংলাদেশ দলের প্রশিক্ষক বারবারই বেশি তরুণ, বয়স কোনোক্রমেই ত্রিশ পেরোনোর কথা নয়। অ্যান্ডি তাঁর চেয়ে বড়জোর দুই বছরের বড়।
অথচ কী অসাধারণ এঁদের প্রশিক্ষণ-পদ্ধতি! ফুটবলের পেশাদার জগতে এখন তরুণ কোচদের ছড়াছড়ি কেন, এর মধ্যেই তো উত্তরটা পাওয়া যায়।
খেলোয়াড়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দু-একটি ভিনদেশি শব্দ জেনে রাখা উচিত। বারবার দ্রুত দৌড়ে এলেন এয়ারটেল বাংলাদেশের মার্কেটিং কমিউনিকেশনস ম্যানেজার মামুন আর রশিদের কাছে। বলুন তো ‘হাউ আর ইউ’ ‘ভেরি গুড’ আর ‘থ্যাংক ইউ’র বাংলা কী হবে? শব্দগুলো জেনে নিয়েই ছেলেদের কাছে জানতে চাইলেন বারবার, ‘তোমরা কেমন আছ?’ সমস্বরে উত্তর, ‘খুব ভালো, স্যার।’ নিদের্শনামতো অনুশীলন ঠিক করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই কোচ ছেলেদের বললেন, ‘খুব ভালো, খুব ভালো। ধন্যবাদ।’
কোচের সঙ্গে একাত্ম হয়ে এয়ারটেলের ১২ জন উদীয়মান তারকা প্রথম সেশনটি করল দারুণ তৃপ্তির সঙ্গে। দুই ঘণ্টার স্কিল ট্রেনিংয়ে একটুও ক্লান্তি বোধ করল না তারা!
স্কিল ট্রেনিংয়ের প্রথমে হলো, এক বনাম এক বল নিয়ন্ত্রণ, সংঘবদ্ধ আক্রমণ, সংঘবদ্ধ রক্ষণ ও তিন বনাম তিন ম্যাচ। এক বনাম একে রিয়াল মাদ্রিদের সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আদনান ইয়ানুজাইকে বেশি করে তুলে ধরলেন বারবার। এ পর্বে ভারতের ছেলেদের চেয়ে বাংলাদেশের ছেলেদের পারফরম্যান্সই উজ্জ্বল মনে হলো। বারবার এই প্রতিবেদককে কাছে ডেকে নিয়ে চুপিচুপি জানতে চাইলেন দুটি ছেলের নাম—অনীক ও মাহবুব। ওদের বেশ মনে ধরেছে কোচের। তবে এটুকুতেই বাকিদের ব্যাপারে যে তাঁর আগ্রহ কম সেটি বুঝে নেওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি। অনুশীলনের এখনো চার দিন পড়ে রয়েছে।
Full story
http://www.prothom-alo.com/sports/article/204460/