March 19, 2010, 03:43 PM
|
|
Cricket Guru
|
|
Join Date: August 27, 2007
Posts: 14,497
|
|
কোথায় হারাল সেই শাহাদাত?
সবাইকেই অবাক করে দিচ্ছেন শাহাদাত হোসেন। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রথম অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। কিংবা ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড বা ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন। একটাই প্রশ্ন সবার—ফাস্ট বোলার থেকে কেন মিডিয়াম পেসার হয়ে গেলেন শাহাদাত?
চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের সময় ব্রড নিজেই নাকি ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘তোমার সমস্যাটা কী? আগে তো অনেক জোরে বল করতে!’ পিটারসেনেরও একই বিস্ময়, ‘টিভিতে তো তোমাকে অনেক জোরে বল করতে দেখেছি...!’ কারও প্রশ্নেরই ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেননি শাহাদাত। অভিযোগ মেনে নিয়ে শুধু বলেছেন, ‘হ্যাঁ...ঠিকই। আগের মতো জোরে বল করতে পারছি না।’ ১৩৫-৩৬ কিলোমিটার যাঁর বলের নিয়মিত গতি ছিল, প্রায়ই যা ১৪০-ও ছুঁয়েছে, সেই শাহাদাত অনেক দিন থেকেই নিষ্প্রভ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ চট্টগ্রাম টেস্টে গড় গতি ১২৫ কিলোমিটারের বেশি নয়। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ১১টা বলেই ঘণ্টায় ১৩০ কিমির চেয়ে বেশি গতি তুলতে পেরেছেন।
এই শাহাদাত আর যা-ই হোক, টেস্ট ক্রিকেটে অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে আসা শাহাদাত নন। ২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক। প্রথম টেস্টে খুব ভালো বল না করলেও জাতীয় দলের তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার তাঁর মধ্যে দেখেছিলেন ‘জেনুইন টেস্ট বোলারের’ প্রতিচ্ছবি, ‘শুরুতে খুব আক্রমণাত্মক বোলার ছিল ও। টেস্ট বোলারদের রিয়েল ক্যারেক্টার ছিল ওর মধ্যে। শ্রীলঙ্কানরা তো সব সময়ই ওকে খুব ভয় পায়।’
পারফরম্যান্সেও এর প্রমাণ রেখেছেন। বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার (৩) ইনিংসে ৫ উইকেট তাঁর। টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের এক নম্বর পেসার হিসেবেও বিবেচিত হতেন তাই। অভিষেক থেকে ধরলে বাংলাদেশের খেলা ২৯ টেস্টের মাত্র দুটিতেই ছিলেন না শাহাদাত। অভিষেকের পরই বাদ পড়েছিলেন পরের টেস্টে। ২০০৭ সালের মে মাসে ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলা হয়নি দ্বিতীয় টেস্ট। এরপর টানা ১৯ টেস্টে খেলার পর বাদ পড়লেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে আজ শুরু দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে।
কেন বাদ পড়লেন, সেটা কারোরই অজানা নয়। কিন্তু বাদ পড়ার কারণের পেছনের কারণটা কী? কেন তাঁর বল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আগের সেই আগুন! জাতীয় দলের কোচ জেমি সিডন্সের কাছে কারণটা একদমই সাদামাটা, ‘বাংলাদেশের উইকেটে জোরে বল করা কঠিন তার পক্ষে। তা ছাড়া ভালো সময়-খারাপ সময় তো যায়ই। সুহাস (শফিউল), রুবেল...আমাদের অন্য পেসারদের অবস্থাও একই।’ সিডন্সের ব্যাখ্যা যথেষ্টই ক্রিকেটীয়, তবে এর আরেকটা ব্যাখ্যা অভিযুক্ত করতে পারে শাহাদাতের বোলিং অ্যাকশনের পরিবর্তনকে। মূলত ২০০৮ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই কমতে শুরু করে তাঁর বলের গতি। লাইন-লেংথ ঠিক করতে গিয়ে শাহাদাতের বোলিং অ্যাকশনে ওই সময়ে কিছু পরিবর্তন আনেন শ্রীলঙ্কান বোলিং কোচ চম্পকা রমানায়েকে। পার্শ্বপ্রতিক্রি ায় গতি কমতে শুরু করায় অ্যাকশন পরিবর্তন নিয়ে একবার অসন্তোষও প্রকাশ করেছিলেন শাহাদাত। তবে পেছনের সেই কারণটা আর টেনে না এনে কাল একরকম আত্মসমর্পণ করেই বললেন, ‘আমি আসলে ফিট না। জোরে বল করার মতো ফিটনেসই নেই আমার। সেজন্যই আগের মতো পারি না। জোরে বল করতে হলে আরও ফিট হতে হবে।’
‘ফিট না’ মানে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা নয়। পায়ে পুরোনো একটা চোট আছে, তবে এমন নয় যে মাশরাফির মতো ছয়বার অস্ত্রোপচারের টেবিলে গেছেন। অন্য কোনো গুরুতর ইনজুরিতেও পড়তে হয়নি কখনো। তাহলে ফিটনেসের প্রশ্নটা আসে কোত্থেকে? শাহাদাতের যা ব্যাখ্যা, সেটার অনেক রকম অর্থই হতে পারে, ‘জোরে বল করার জন্য যে দম দরকার, সেটাই নেই এখন। ক্লান্ত হয়ে পড়ি তাড়াতাড়ি।’
জাতীয় দলের আশপাশে কান পাতলে শাহাদাতের ব্যক্তিগত জীবনের শৃঙ্খলা নিয়ে কিছু গুঞ্জন শোনা যায়। অভিযোগ আছে, মাঠের বাইরে তাঁর জীবনটা নাকি বড় বেশি অসংযমী। তারকা জীবন থেকে বয়সের চঞ্চলতাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়তো বর্তমান জাতীয় দলের অনেকের পক্ষেই কঠিন হচ্ছে, কিন্তু দুটোর সম্মিলনে পা পিছলে যাওয়ার উপক্রম শাহাদাতের। আগের সেই ফর্ম বা ফিটনেস হারিয়ে ফেলার পেছনে এই জীবনটারও দায় নেই তো? প্রশ্নটা কাল সরাসরিই জিজ্ঞেস করা হলে শাহাদাত সেটা স্বীকারও করলেন, আবার অস্বীকারও, ‘হ্যাঁ, একটা সময়ে হয়তো ডিসিপ্লিনে একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে সেটা এখন আর নেই। আমি এখন জানি, আমার জন্য কোনটা ভালো কোনটা খারাপ। এখন ভালো খেলাটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। খারাপ খেললে এসব কথা হয়ই।’
কথাটা আগেও শোনা গেছে শাহাদাতের মুখে। ভালো খেলাই নাকি সব সমস্যার সমাধান—আত্মবিশ্ব স ফিরে পাওয়ার মন্ত্র, সমালোচনার জবাবও। আপাতত শাহাদাতের কাছ থেকে সেই জবাব পাওয়ার অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে সবাইকে।
http://www.prothom-alo.com/detail/da...-20/news/50184
|