January 27, 2012, 01:40 PM
|
|
Test Cricketer
|
|
Join Date: April 9, 2011
Favorite Player: Performing Tigers
Posts: 1,879
|
|
so sad
‘আমাদেরও মাটি পাবার অধিকার আছে’
জাকিয়া আহমেদ ও শাহেদ আলী ইরশাদ
রাজবাড়ী, দৌলতদিয়া থেকে ফিরে : মর্জিনার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল পানি। মুখে ঝড়ছিল আক্ষেপ। জীবনের শেষাংশে এসে তার মন এখন ধর্মের দিকে। বললেন, ‘শেষ বয়সে এখন খালি নামাজ পইড়া আল্লারে ডাকি। এখন মাটির নিচে যাইতে চাই।’
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ঘুপচি ঘরের সামনে ছোট্ট রান্নাঘরে বসেই কথা হচ্ছিল মর্জিনার সঙ্গে। বললেন, ‘এই পেটের জন্য এই বয়সে এখন চুরি, বদমাইশ, খারাপ কাজ করতে হয়।’
‘খারাপ কাজ করি আর মাফ চাইয়া আল্লারে ডাকি,’ আত্ম অনুশোচনায় ভোগা এই ষাটোর্ধ নারী। জীবনের একটি বড় অংশই যার কেটেছে যৌনপল্লীতে দেহ ব্যবসায়।
মর্জিনার চোখের জল যেন বলছিল অনেক কথা, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিল, দেখো, এই সমাজ এইসব মর্জিনাদের কী দিয়েছে আর কী নিয়েছে। মর্জিনারা দিয়েছে তাদের জীবনের সর্বস্বটুকু, কিন্তু তার বিনিময়ে তাকে কিছুই দেয়নি সমাজ। কারণ তারা সে তথাকথিত এই সমাজ থেকেই বিচ্ছিন্ন।
ওই দিন মর্জিনার রান্নার আয়োজন দুপুরের খাওয়ার জন্য ভাত আর আলু ভাজি।
যৌনপল্লীর যে দিকটাতে মর্জিনা থাকেন সেদিকটা পুরোটাই বৃদ্ধা হয়ে যাওয়াদের জন্য। মর্জিনার সঙ্গে কথা যখন জমে ওঠে তখন সেখানে এসে ভীড় করেন শেফালী, রেবেকা, সালমা, নূরজাহান, মাহবুবা, মনি বেগমসহ আরও অনেকে।
মর্জিনার কাছে প্রশ্ন, কেন এ পথে এসেছিলেন। কিছুটা সময় চুপ থেকে বলেন, ‘আমার বাবা মা কেউ ছিল না। বিয়ে হওয়ার দশ বছর পর স্বামী মারা যায়। সন্তান ছিল না। তাইলে আপনি বলেন, কে আমারে কর্ম করি খাওয়াবে? সব কিছুর জন্যইতো এ পেট দায়ী। আমারতো উপরে আল্লাহ আর নেিচ মাটি ছাড়া কেউ ছিল না।’
কবে এখানে প্রথম এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই সব ‘কতা কী আর মনি (মনে) আছে। সেত বহুত কাল আগের কথা। তয় মা, আমি কিন্তু এই হানে থাকবার চাইনি। গেছিলাম গা। কিন্তু বাইরে গিয়া টিকবার পারি নাই। তহন মনে করলাম, জায়গায় জায়গায় থাহার (থাকার) চাইতে এক জায়গায় থাকাই ভাল। তহন আবার ফেরত আইছি এই হানে। উপায় ছিল না বল্লাই এই হানে আসছি। সবাই আমাগোরে খারাপ কয়।’
৪০ বছরের মনি বেগম বলেন, তার জীবনের কথা। তিনি আছেন এখানে ৩০ বছর ধরে। ১০ বছর বয়সে মনি বেগম এখানে আসেন পাঁচ ভাইবোনের সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে। বাবা কাঁচা মালের ব্যবসা করতেন। কিন্তু তাতে সংসার চলত না। মনি বেগম বলেন, ভাইবোনদের বাঁচানোর জন্যই আমাকে এ পথ বেছে নিতে হয়েছে।
আপনার পরিবার আপনার এই পেশার কথা জানে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে জানত না। এখন জানে। তবে বাবারতো অনেক বয়স হয়েছে, সে বুঝতে পারে না, মা জানে। আর বড় ভাইত প্রথম প্রথম এখানে এসে পাগলের মত কান্নাকাটি করেছে।’
আপনারাত অনেক বছর ধরে এখানে আছেন, কেমন ছিল আগে এবং এখন কেমন? জানতে চাইলে মনি বেগম বলেন, আগে এখানে ছিল পাটকাঠির বেড়া, নোংরা ছিল, একটু বৃষ্টিতে পানি জমে যেত এখানে সেখানে। এখনতো আগের চেয়ে পরিবেশ অনেক ভাল হয়েছে।
আরও কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক পরিবর্তনের কথা বললেন মনি বেগম। বললেন, আগে স্থানীয়রা বলত, আমরা জুতা পায়ে দিতে পারব না, মৃত্যু হলে মাটি দিত না, কলা গাছের ভেলায় করে কত জনকে ভাসিয়ে দিয়েছে। মাওলানারা বলত, আমরা মারা গেলে কেন জানাজা হবে, কিন্তু আমার প্রশ্ন, মানুষ হিসেবে আমরা কেন মাটি পাব না?
কিন্তু এখন সেই দিন অনেকটাই বদলে গেছে। আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে চাই। একটি দ’ুটি করে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে করতে আজ অনেক কিছুই আমরা পেয়েছি।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মনি বেগম বলেন, একদল বলত, আমাদের দেখলে তাদের বাড়ির বৌ মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে, তাদের ইবাদত নষ্ট হবে। কিন্তু রাতের বেলায় দেখা যেত সেই লোকগুলোই এখানে এসে হাজির।
তিনি বলেন, সমাজকে বোঝাতে চাই আমরাও মানুষ। আমাদেরও মাটি পাবার অধিকার আছে।
মর্জিনা বেগম, মনি বেগমসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন দৌলতদিয়া প্রতিনিধি শাহেদ আলী ইরশাদ। ছবি তোলেন স্টাফ ফটো জার্নালিস্ট শোয়েব মিথুন।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
|