তাল গাছের আড়াই হাত...
হ্যাঁ...এই প্রবাদটাই মনে পড়ে বারবার আমাদের ক্রীকেটের বারবার হোঁচট খাওয়া দেখে। হয়তো শুনেছেন অনেকেই প্রবাদটা...অর্থটাও জানেন ভালই। তবুও যাদের কাছে এটা অপরিচিত, তাদের জন্য একটু ব্যখ্যা করি। তুলনাটা দিয়েছিলেন নটরডেম কলেজের একজন অংকের শিক্ষক...৮০% নম্বর পাওয়া ছাত্র আর ১০০% নম্বর পাওয়া ছাত্রের মধ্যে পার্থক্য বুঝাতে। এই দুজন ছাত্রের মধ্যে নম্বরের পার্থক্য মাত্র ২০, কিন্তু এই দুজনের ডিটারমিনেশন এবং পরিশ্রমের পার্থক্য আসলে প্রায় আকাশ-পাতাল।কারন ১০০ তে ৮০ পেতে যত পরিশ্রম করতে হয়...১০০ তে ১০০ পেতে পরিশ্রম করতে হয় প্রায় তার দ্বিগুন! কিন্তু তার সাথে তাল গাছের কি সম্পর্ক?! অবশ্যই আছে সম্পর্ক। কারন তাল গাছের শেষ মাথায় যে আড়াই হাত পথ...ওই শেষ ২০ নম্বরের মতই তা অতি দূরাতিক্রম্য!
এদেশের ক্রীকেট তাল গাছের ওই শেষ আড়াই হাতে এসে খাবি খাওয়া শুরু করেছে। কারন গোঁজামিল দিয়ে যদিওবা কোনভাবে ৮০ নম্বর পর্যন্ত যাওয়া যায়...পরের ২০ তো আর এত সোজা না রে ভাই!
সত্যি কথা হল...এই পুরো দেশটাই আটকে যাচ্ছে আড়াই হাতের চক্করে দিনে দিনে। কেন ভাইয়েরা খামাখা শুধু ক্রীকেটারদেরকে দোষ দেন? সাকিবের অন্তর্জ্বালার দিকে একবার ভাল করে দেখুন! এই ছেলেটা সত্যি সত্যিই যুগের চেয়ে অনেক আগানো এক ব্যক্তিত্ব। খুবই সরল ভাষায় বলে ফেলেছে সে কোথায় আসল গলদ। সেটা হল পারিপার্শ্বিকতা! নট এনাফ কোয়ালিটি প্লেয়ার্স ইন পাইপলাইন টু মেক ইউ টেক দা এক্সট্রা স্টেপ্স!
এবার আসেন ভাইয়েরা পাইপলাইনের সমস্যায়। নিষ্ঠুর সত্যি কথা হল...শক্ত প্রথম শ্রেনীর কাঠামো ছাড়া আজকে এদেশের ক্রীকেট যেখানে এসেছে, প্রত্যেক বাংলাদেশীর উচিৎ তাকে শতবার কূর্নীশ করা! কারন এটা একটা মিরাকেল্ ছাড়া আর কিছুই না! কেবলমাত্র খেলোয়াড়দের আর সমর্থকদের প্রচন্ড নেশা আর আবেগের জোরেই এসেছে এতদূর বাংলাদেশের ক্রীকেট! নয়তো এত দূর্বল প্রশাসন আর কাঠামো নিয়ে এত স্বপ্ন দাঁড়াবার কথাই না মোটেও!
আমরা আজকে খেলোয়াড়দের পেশাদারীত্ব, দেশপ্রেম, এদেশের মানুষের নীতিবোধ...চিত্তের দূর্বলতা ...এসব নিয়ে ভয়াবহ আত্ম-সমালোচনায় মুখর। কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাসের দশক পার হবার পরও রাজনৈতিক কামড়াকামড়ি আর আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতায় জর্জরিত ক্রীকেট প্রশাসকরা দিতে পারেনি কোন পেশাদারী মেরুদন্ড এদেশের ক্রীকেটকে। দেশের মানুষের ক্রীকেট প্রেম আর কিছু পাগলা খেলোয়াড়ের (সাকিব তার মধ্যে বোধকরি এক নম্বর) উজাড় করা প্রচেষ্টা খেলাটাকে ৮০ নম্বরের কাছাকাছি তো এনেছে। কিন্তু ওই শেষ আড়াই হাত পার করবে কে? বিদেশী কোচ? বরফ-পানিতে চোবানো 'হাই-পারফর্মেন্স স্কোয়াড'?? নাকি কর্পোরেট স্পন্সর্শিপের 'প্লেয়ার হান্ট' প্রোগ্রামে খুঁজে পাওয়া কোন রত্ন???
কেও পারবে না এরা। কারন আমাদের দরকার সারা দেশ থেকে প্রতিযোগীতা করার মত মানের ১১১ জন...যার মাঝে বেছে বেছে নেওয়া হবে ১১ জন! এই মানসম্পন্ন ১১১ জনকে তৈরী করতে পারে কেবলমাত্র এবং কেবলমাত্র একটা উচ্চ মানের প্রথম শ্রেনীর কাঠামো।
শুনে রাখো বিসিবি...তোমরাই আজ আসল কালপ্রীট্! শুনে রাখো হে দেশের নোংরা রাজনীতির ধারক ও বাহকেরা... শুধু ক্রীকেট নয়, দেশের প্রতিটা সেক্টরকে আড়াই হাতের চক্করে আটকে দেবার সর্বৈব দায়ভার তোমাদেরই। যত দিন যাবে...সময়ের সাথে এই সত্যই বারবার সামনে আসবে। তোমাদের এই কুম্ভকর্ণের ঘুমের মাঝে দেশের খেলা...কিম্বা অন্য কোন পথে আসা সকল সাফল্য...তার সব কিছুকেই আমি অন্তর থেকে কূর্নিশ করি!!
আর তোমাদের দেই অন্তর থেকে ধিক্কার!!!...
__________________
Well...you only get one chance to make your first impression somewhere...!
|