View Single Post
  #177  
Old February 5, 2012, 12:08 PM
nakedzero's Avatar
nakedzero nakedzero is offline
Cricket Legend
 
Join Date: February 3, 2011
Favorite Player: ShakTikMashNasir(ShakV2)
Posts: 2,024
Default ক্রিকেটার মায়ের লড়াই




একদিকে ৯ মাসের শিশু। অন্যদিকে ক্রিকেটের টান। দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাও শামীমা আক্তার পিঙ্কির কাছে একটা লড়াই। লিখেছেন বদিউজ্জামান

ফিল্ডিংয়ে ব্যস্ত শামীমা আক্তার পিঙ্কি। কিন্তু একটু পর পরই চোখ চলে যাচ্ছিল ড্রেসিংরুমে। সেখানে বেবি সিটারে শুয়ে ছেলে মাসনুন আহমেদ। ছেলে কাঁদছে নাকি হাসছে, সেটা দেখতেই বারবার তাকাতে হচ্ছিল সেদিকে।
মাত্র নয় মাস বয়স মাসনুনের। ১৬ জানুয়ারি ছেলেকে মাঠে নিয়ে প্রথম খেলতে এসেছিলেন জাতীয় মহিলা দলের অলরাউন্ডার। প্রায় দুই বছর পর মাঠে নামলেন। জাতীয় মহিলা ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে খেললেন ঢাকার হয়ে। ফেরাটা অবশ্য মন্দ হয়নি। নেমেই নরসিংদীর বিপক্ষে পেয়েছিলেন ৪ উইকেট!
এতটুকু দুধের শিশুকে সারা দিন বাইরে রেখে খেলতে খারাপ লাগে না? পিঙ্কির উত্তর, ‘খারাপ তো লাগেই। যত যা-ই বলুন না কেন, আমি তো মা। যখন দেখি ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি ফিল্ডিংয়ের কথা ভুলে যাই। মনোসংযোগ ধরে রাখতে পারি না। কিন্তু একটু পরই আবার মনে হয়, এমন করলে তো খেলতে পারব না। মনকে শক্ত করি, সান্ত্বনা দিই নিজেকে। খেলায় ফিরি।’ —দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছিলেন পিঙ্কি। বেশি কষ্ট লাগে এই জন্য যে ছেলেটা অন্য কারও কোলে একদমই থাকতে চায় না।
বিয়ের পর সাধারণত বাঙালি মেয়েরা ঘরকন্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখানেই আর দশজনের সঙ্গে আলাদা পিঙ্কি। বিয়ে হয়েছিল তাঁর কম বয়সে। তখন নবম শ্রেণীতে পড়তেন। খেলাধুলার প্রতি ভীষণ টান ছিল পিঙ্কির। সেই টানেই বিয়ের পরও ছুটে যান মাঠে। অংশ নেন বিভিন্ন টুর্নামেন্টে।
অ্যাথলেটিকস দিয়ে খেলোয়াড়ি জীবনের শুরু পিঙ্কির। এরপর হলেন ফুটবলার। একদিন ক্রিকেট কোচ ফরিদা বেগমের পরামর্শে ফুটবল ছেড়ে মন দিলেন ক্রিকেটে। তার পর থেকে ক্রিকেটেই আছেন। বিয়ে, মা হওয়া—জীবন আপন গতিতে বাঁক নিলেও ক্রিকেট তাঁর কাছে রয়ে গেছে আগের মতোই।
তবে এ জন্য লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। প্রকাশ্যে বাধা হয়ে না দাঁড়ালেও শ্বশুর-শাশুড়ি চেয়েছিলেন মাঠের পাট চুকিয়ে তাঁদের বউমা ঘর-সংসারে মনোনিবেশ করুক। আর স্বামী আবু সাঈদ খান ভেবেছিলেন, অ্যাথলেটিকসে বেশি দূর যাওয়ার সুযোগ না থাকায় একদিন আপনাআপনি খেলা ছেড়ে দেবেন পিঙ্কি। কিন্তু তাঁদের চাওয়াটাকে অপূর্ণ রেখে পিঙ্কি হয়ে গেলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার। যখন ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেল বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল, প্রথম ওয়ানডেটা খেলার খুব ইচ্ছা ছিল পিঙ্কির। কিন্তু দুধের শিশুকে রেখে মাঠে নামা হয়নি। স্বীকৃত প্রথম ওয়ানডেটি না খেলতে পারার তাই একটা আফসোস আছে তাঁর, ‘ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম ম্যাচ খেলে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারলে খুবই ভালো লাগত।’
স্বামী আবু সাঈদ মাস তিনেক আগে কঙ্গোতে গেছেন জাতিসংঘ মিশনে। সেখান থেকেই টেলিফোনে খোঁজখবর নেন। একদিন একটা অনুরোধও করেন, ‘খেলাটা কি ছেড়ে দেওয়া যায় না?’ স্বামীর সে চাওয়ার পর নিজের সঙ্গেই অনেক লড়াই করেছেন পিঙ্কি। সে লড়াইয়ে পিঙ্কির খেলোয়াড়-সত্তাই জয়ী হয়েছে। স্বামীকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তারও আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খেলা চালিয়েই যাবেন, ‘আমি ক্রিকেট ছেড়ে থাকতে পারব না। আমার ক্রিকেট খেলার বয়সও শেষ হয়ে যায়নি। এখনো আমি দেশকে অনেক কিছু দিতে পারব। যখন মনে হবে খেলা ভালো লাগছে না, তখনই ব্যাট-প্যাড তুলে রাখব।’
দুধের শিশুকে কোলে করে মাঠে আসাটাও তো একটা লড়াই। এ লড়াইয়ে তাঁকে সাহায্য করেন মা মনোয়ারা বেগম। কোথাও গেলে মাকে সঙ্গে নিয়ে যান। মাঠে নামার আগে ছেলেকে তুলে দেন মায়ের হাতে। সতীর্থ ক্রিকেটাররাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁর দিকে। কফিন টানা থেকে শুরু করে অন্য অনেক ছোটখাটো কাজও হাসিমুখে করে দেন সতীর্থরা। এ জন্য পিঙ্কি খুব কৃতজ্ঞ তাঁদের কাছে। ঢাকায় ক্যাম্পিংয়ের সময় ভাই-ভাবির কাছে রেখে যান ছেলেকে। ছেলের কথা ভেবে কষ্টও পান। কঠিন এই পথচলায় পিঙ্কির প্রেরণা ফুটবলার বান্ধবী রওশন আরা আক্তার বুলু, ‘সন্তান মাঠে নিয়ে এসে তাকে অনেক দিন খেলতে দেখেছি। বুলু পারলে আমি কেন পারব না?’
পিঙ্কির কণ্ঠে ঝরে পড়ে এই লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার প্রত্যয়!



SOURCE
Reply With Quote