The title says it all. There are so many stories (pictures) that make us sad or angry. Let's share 'em all in this thread. Hopefully, we'll (I'll) be able to do something about it in the near future, inshAllah.
A homeless boy shivers in the bone-chilling cold Monday night at the capital's Kamalapur Rail Station as the cold spell continues in the country.
Star Report Siddiqul Islam came from Kushtia to the port city to sell peanuts.
With his shabby clothes, a dilapidated blanket and makeshift bed under the shed of Chittagong Parade Ground gallery, he drew the attention of local youths.
“He told me that he could not sleep for a moment last night in severe cold,” one of them said. The 58-year-old was trembling perilously.
In the afternoon, he was found dead.
From Monday night to yesterday, extreme cold weather claimed 10 lives across the country -- Siddiqul in Chittagong, four including a minor boy in Chuadanga, two in Rangpur and one in Bagerhat. Two workers passed away while sleeping on a launch at Mawa river port.
In last five days, as many as 1,783 people, mostly from cyclone Aila affected areas, were hospitalised in Khulna, reports our correspondent from the district.
Fahimul Islam Mondol, a doctor of Pirgachha Upazila Health Complex, said about 24 people including four kids, suffering from pneumonia, cold diarrhoea, asthma and other cold related diseases were admitted to the hospital yesterday, our district corresponded reports.
The Met office source said sky remained overcastted almost for the last one week.
In the country, the lowest temperature was recorded in Jessore where mercury went down to 10.3 degrees Celsius. In the capital, it was 12.5 degree C.
From midnight till noon today, dense fog would prevail in different places, especially in the river areas, the Met office said.
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
Originally Posted by Electrequiem Does anyone know to what philanthropy I can donate money and/or winter clothing to for people in Bangladesh? Urgent! Please let me know ASAP.
Can someone from dhaka find that out for us please...thanks!
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
Originally Posted by FagunerAgun
idrink20, you feel sad which is normal. I feel sad as well.
So do most of us except those politicians and autocrats who can change the fate of these boys. We can help but we cannot change.
Thanks FagunerAgun vhaya for ur response. I understand ur frustrations...
------------------------------------------
Yes, together we can change lives one person at a time, one good deed at a time. We don't have the power to change our corrupted politicians and autocrats ...but we certainly have powers to change ourselves, alhamdulillah!
We certainly can't sit around and wait for someone to come and rescue us. We need to be that someone...we need to do it ourselves!
We need to do our BEST and
Allah will do the REST!!!
-------------------------------------------
some ideas...during this winter, may be we can donate some warm cloths/money to our poor relatives, neighbors, orphans...and so on! It doesn't even have to be in Bangladesh only...we can help out wherever we live!
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
Last edited by idrinkh2O; December 21, 2011 at 06:55 PM..
ঢাকা : দিনের বেলায় জায়গাটি ব্যবহৃত হয় সচেতন নাগরিকদের নিরাপদ সড়ক পারাপারের জন্য। আর গভীর রাতে সেখানে ঘুমানোর জায়গা তৈরি করে নেয় দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ।
তবে ঘুমানোর জায়গা হিসেবে স্থানটি গরমের মৌসুমের তুলনায় শীতের মৌসুমেই বেশি অগ্রাধিকার পায়। আর তাই গ্রীষ্মে সেখানে ছিনতাইয়ের ঘটনার বাড়াবাড়ি থাকলেও শীতে এই ভয় থাকে কিছুটা কম।
কারণ অভাবী মানুষগুলোই সেই জায়গাটিকে শান্তিতে নিদ্রাযাপনের জন্য দখলের কারণে ছিনতাইকারিরা খুব একটা সুবিধা করতে পারে না।
যে জায়গাটির কথা হচ্ছে তা নগরবাসীর কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত কাওরানবাজার আন্ডারপাস বা ভূগর্ভস্থ সড়ক পারাপার।
দায়িত্বপালনকালে বুধবার গভীর রাতে সেখানে গিয়ে দেখা গেল ছোট্ট করিডোরটিতে দুই সারিতে প্রায় শ`খানেক মানুষ যার যতটুকু সম্বল কাপড় দিয়ে নিজেদের মুড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পৌষের শুরু থেকেই বইতে শুরু করেছে উত্তরের তীব্র কনকনে হাওয়া। কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের কাওরানবাজার এলাকার প্রশস্ত সড়কের উভয়পাশে সেই কনকনে হাওয়ার তীব্রতা যেন আরও একটু বেশি।
সহকর্মী ফটো সাংবাদিক রাজিবকে একের পর এক ছবি তুলতে দেখে আন্ডারপাসে প্রায় নিয়মিত নিদ্রা যান যারা, তাদের মধ্যে কয়েকজন এগিয়ে এলেন কথা বলার জন্য।
কথা হয় মো. নবী, কামাল, আক্কেল সহ আর ওঅনেকের সং্গে।
কামাল জানান, গরমের সময় কাওরানবাজারের দুই দিকের সড়কের ফুটপাতে ঘুমাতে যে পরিমাণ শান্তি, ঠিক তার উল্টো অশান্তি হয় শীতের সময়। আর তাই একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্য শীতে তারা বেছে নেন কাওরানবাজারের আন্ডারপাসটিকে।
কামাল বলেন, “এইহানে কোন জায়গা আগে থেইকা ঠিক করা থাহেনা। তয় যে আগে আসে সে আগে জায়গা পায়। এহানে বেশিক্ষণ কেউ ঘুমায়না। কেউ ঘুমায় কাওরানবাজারের রাতের কাম শেষ কইরা, আবার কেউ কেউ কাম শুরুর আগে এট্টু ঘামায়া লয়।”
পথাচারী পারাপারের জায়গা দখল করে ঘুমিয়ে আছেন- জানতে চাইলে হেসে উঠে আক্কেল আলী বলেন, “স্যার আমরা আছি বইলাই বরং এই শীতে লোকজন রাতের বেলা লিশ্চিন্তে (নিশ্চিন্ত) পার হয়। তয় রাইতের বেলা তেমন লোকজন এইহানে আহেই না। গরমের সময় আমরাও থাকি না আর ছিনকার (ছিনতাইকারি) মামারা পাবলিকের সব লইয়া জায়গা।”
এসব অভাবী মানুষগুলোর জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ শীতবস্ত্র নিয়ে হঠাৎ হঠাৎ উপস্থিত হন কিছু এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শীত নিবারণের জন্য তারা দিয়ে যায় পুরোনো কাপড়। তবে তাও আবার বেশির ভাগ বরাদ্দ থাকে শিশু ও নারীদের জন্য।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. নবী বলে উঠলেন, “স্যার, কতক্ষণ আগে আপনাগো মতন কয়েকজন লোক হঠাৎ আইসা পুরানা কাপড়চোপড় দিয়া গেল। তয় বেশিরভাগই দিছে ঘুমায়া পড়া পোলাপানগো আর মাইয়াগো। আমারা চাইছিলাম; কিন্তু আমগো সবাইরে দেয় নাই।”
রাজীবের ছবি তোলা আর ছিন্নমূল মানুষগুলোর সাথে কথা বলার ফাকে এক সময় দেখা গেল ঘুমন্ত মানুষের সারি পুরো আন্ডারপাসটিকে দখল করে ফেলেছে। আর নবী, কালাম, আক্কেল আলীদের মতো গুটিকয় যারা জেগে ছিলেন তারাও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চলে আসার সময় পেছন হতে শোনা গেল, “স্যার এমন কিছু খবর দেখাইয়েন না যেন আমাগো আবার ছিনকার কইয়া এহান থন উঠায়া দেয়। অনুরোধ এমন কিছু লেইখেন জানি কয়টা গরম কাপড় পাই। শীতে খুব কষ্ট হয়গো স্যার...।”
তীব্র শীতে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে প্রতিদিনই মানুষের মৃত্যু সঙবাদ আসছে। পাতলা কাপড় জড়িয়ে কুণ্ডলি পাকিয়ে ঘুমিয়ে থাকা দরিদ্র মানুষগুলো দেখে মনে হয়- হাটুতে মুখ গুজে তারা যেন শীত নয়; মৃত্যুকেই এড়িয়ে যেতে চাইছে।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
রাজবাড়ী, দৌলতদিয়া থেকে ফিরে : মর্জিনার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল পানি। মুখে ঝড়ছিল আক্ষেপ। জীবনের শেষাংশে এসে তার মন এখন ধর্মের দিকে। বললেন, ‘শেষ বয়সে এখন খালি নামাজ পইড়া আল্লারে ডাকি। এখন মাটির নিচে যাইতে চাই।’
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ঘুপচি ঘরের সামনে ছোট্ট রান্নাঘরে বসেই কথা হচ্ছিল মর্জিনার সঙ্গে। বললেন, ‘এই পেটের জন্য এই বয়সে এখন চুরি, বদমাইশ, খারাপ কাজ করতে হয়।’
‘খারাপ কাজ করি আর মাফ চাইয়া আল্লারে ডাকি,’ আত্ম অনুশোচনায় ভোগা এই ষাটোর্ধ নারী। জীবনের একটি বড় অংশই যার কেটেছে যৌনপল্লীতে দেহ ব্যবসায়।
মর্জিনার চোখের জল যেন বলছিল অনেক কথা, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিল, দেখো, এই সমাজ এইসব মর্জিনাদের কী দিয়েছে আর কী নিয়েছে। মর্জিনারা দিয়েছে তাদের জীবনের সর্বস্বটুকু, কিন্তু তার বিনিময়ে তাকে কিছুই দেয়নি সমাজ। কারণ তারা সে তথাকথিত এই সমাজ থেকেই বিচ্ছিন্ন।
ওই দিন মর্জিনার রান্নার আয়োজন দুপুরের খাওয়ার জন্য ভাত আর আলু ভাজি।
যৌনপল্লীর যে দিকটাতে মর্জিনা থাকেন সেদিকটা পুরোটাই বৃদ্ধা হয়ে যাওয়াদের জন্য। মর্জিনার সঙ্গে কথা যখন জমে ওঠে তখন সেখানে এসে ভীড় করেন শেফালী, রেবেকা, সালমা, নূরজাহান, মাহবুবা, মনি বেগমসহ আরও অনেকে।
মর্জিনার কাছে প্রশ্ন, কেন এ পথে এসেছিলেন। কিছুটা সময় চুপ থেকে বলেন, ‘আমার বাবা মা কেউ ছিল না। বিয়ে হওয়ার দশ বছর পর স্বামী মারা যায়। সন্তান ছিল না। তাইলে আপনি বলেন, কে আমারে কর্ম করি খাওয়াবে? সব কিছুর জন্যইতো এ পেট দায়ী। আমারতো উপরে আল্লাহ আর নেিচ মাটি ছাড়া কেউ ছিল না।’
কবে এখানে প্রথম এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই সব ‘কতা কী আর মনি (মনে) আছে। সেত বহুত কাল আগের কথা। তয় মা, আমি কিন্তু এই হানে থাকবার চাইনি। গেছিলাম গা। কিন্তু বাইরে গিয়া টিকবার পারি নাই। তহন মনে করলাম, জায়গায় জায়গায় থাহার (থাকার) চাইতে এক জায়গায় থাকাই ভাল। তহন আবার ফেরত আইছি এই হানে। উপায় ছিল না বল্লাই এই হানে আসছি। সবাই আমাগোরে খারাপ কয়।’
৪০ বছরের মনি বেগম বলেন, তার জীবনের কথা। তিনি আছেন এখানে ৩০ বছর ধরে। ১০ বছর বয়সে মনি বেগম এখানে আসেন পাঁচ ভাইবোনের সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে। বাবা কাঁচা মালের ব্যবসা করতেন। কিন্তু তাতে সংসার চলত না। মনি বেগম বলেন, ভাইবোনদের বাঁচানোর জন্যই আমাকে এ পথ বেছে নিতে হয়েছে।
আপনার পরিবার আপনার এই পেশার কথা জানে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে জানত না। এখন জানে। তবে বাবারতো অনেক বয়স হয়েছে, সে বুঝতে পারে না, মা জানে। আর বড় ভাইত প্রথম প্রথম এখানে এসে পাগলের মত কান্নাকাটি করেছে।’
আপনারাত অনেক বছর ধরে এখানে আছেন, কেমন ছিল আগে এবং এখন কেমন? জানতে চাইলে মনি বেগম বলেন, আগে এখানে ছিল পাটকাঠির বেড়া, নোংরা ছিল, একটু বৃষ্টিতে পানি জমে যেত এখানে সেখানে। এখনতো আগের চেয়ে পরিবেশ অনেক ভাল হয়েছে।
আরও কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক পরিবর্তনের কথা বললেন মনি বেগম। বললেন, আগে স্থানীয়রা বলত, আমরা জুতা পায়ে দিতে পারব না, মৃত্যু হলে মাটি দিত না, কলা গাছের ভেলায় করে কত জনকে ভাসিয়ে দিয়েছে। মাওলানারা বলত, আমরা মারা গেলে কেন জানাজা হবে, কিন্তু আমার প্রশ্ন, মানুষ হিসেবে আমরা কেন মাটি পাব না?
কিন্তু এখন সেই দিন অনেকটাই বদলে গেছে। আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে চাই। একটি দ’ুটি করে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে করতে আজ অনেক কিছুই আমরা পেয়েছি।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মনি বেগম বলেন, একদল বলত, আমাদের দেখলে তাদের বাড়ির বৌ মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে, তাদের ইবাদত নষ্ট হবে। কিন্তু রাতের বেলায় দেখা যেত সেই লোকগুলোই এখানে এসে হাজির।
তিনি বলেন, সমাজকে বোঝাতে চাই আমরাও মানুষ। আমাদেরও মাটি পাবার অধিকার আছে।
মর্জিনা বেগম, মনি বেগমসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন দৌলতদিয়া প্রতিনিধি শাহেদ আলী ইরশাদ। ছবি তোলেন স্টাফ ফটো জার্নালিস্ট শোয়েব মিথুন।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
কেএলও জঙ্গির সঙ্গে নামের মিল
১০ বছর ধরে ভারতের জেলে বাংলাদেশের মিল্টন
--------------------------------------------------------------------------------
রক্তিম দাশ, ব্যুরো চিফ, কলকাতা
বাংলাদেশের মিল্টন, ডানে কেএলও জঙ্গি মিহির দাস মিল্টন
কলকাতা : রাজ্যের এক শীর্ষ কেএলও জঙ্গির সঙ্গে নামের মিল থাকায় ১০ বছর ধরে কোচবিহারের জেলে আটক রয়েছেন বাংলাদেশের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হোসেনের সন্তান আসিফ ইকবাল মিল্টন।
মিল্টন বাংলাদেশের কামাত আঙারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভুরুঙ্গামারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন।
জানা গেছে, ২০০০ সালের ১১ ডিসেম্বর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার সাহেবগঞ্জ বাজারে টালিউডের অভিনেত্রী ‘রূপা গাঙ্গুলি নাইট’ নামে একটি জলসা দেখতে আসেন মিল্টন। রাত আড়াইটার দিকে ফেরার পথে সীমান্ত অতিক্রম করতে গেলে বিএসএফ তাকে আটক করে।
জানা যায়, ওইদিন জলসার কারণে বিএসএফ ও বিডিআরের আলোচনাক্রমে সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে ৩শ’ থেকে ৪শ’ মানুষ যোগ দিয়েছিল। তারপরেও মিল্টনকে আটক করা হয়।
অনুপ্রবেশকারি হিসেবে বিএসএফ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কয়েকমাস সাজা খাটার পর ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তুফানগঞ্জ জেল থেকে পুলিশ তাকে পুশব্যাক করার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু পরের দিন ২৭ ডিসেম্বর মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কেএলও শীর্ষ জঙ্গি মিহির দাস ওরফে মিল্টন সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০০২ সালের ২৯ জুন মিল্টনকে পাঠানো হয় কোচবিহার জেলে। তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধি ১২০বি/১২১এ/১২২/১২৩/১২৪বি/৩৮৪ ধারায় মামলা করে পুলিশ। কোচবিহার ফার্স্ট ট্রাক কোর্টে তার বিচার চলছে। অতিরিক্ত জেলা জজের আদালতে এখনও তার মামলা চলছে।
মিল্টনের আইনজীবী আবদুল জলিল আহমেদ বাংলানিউজকে ফোনে বলেন, ‘ওর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে। মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে। আমি চাই ও ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরে যাক।’
বাংলাদেশ থেকে মিল্টনের মা মামিদা বেগম জানান, ‘পুত্রশোকে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে দিন। ছেলেকে দেখে আমি মরে যেতে চাই।’
বাংলাদেশ থেকে মানবাধিকারকর্মী সোহলে রানা সম্প্রতি কোচবিহারের এসেছেন। তিনি মিল্টনের মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু নাম মিল্টন হওয়ার কারণে তাকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করে রাখা হয়েছে। মিল্টন একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার নামে বাংলাদেশে কোনো মামলা নেই। তাকে যখন ধরা হয়, তখন তার বয়স ছিল ২৪।এখন বয়স ৩৪ বছর।’
যাকে নিয়ে এই নাম বিভ্রাট সেই কেএলও জঙ্গি মিহির দাস ওরফে মিল্টন ২০০৩ সালে ভুটানে সেনা অভিযানের সময় রয়েল ভুটান আর্মির হাতে ধরা পড়ে। মিহির ২০১১ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা দুঃখজনক। আমি কোচবিহার জেলে তিন দিন ছিলাম। তখন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি আমার জন্য ঘটল, আমি দুঃখিত। আমি চাই তাকে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া হোক। আমি একজন কেএও জঙ্গি হিসেবে ছাড়া পেতে পারি, অথচ নির্দোষ এক যুবক, কলেজ ছাত্রকে ছাড়া হচ্ছে না?’
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
ম্যাডাম আসেন না, তাই আমিই ওষুধ দিই’
--------------------------------------------------------------------------------
শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্ট ফোর.কম
রাজশাহী : ‘অফিস খুললেই লোকজন এসে অসুখ-বিসুখের কথা বলে। ডাক্তার ম্যাডাম না থাকলে তাদের তো আর ফেরানো যায় না। তাই সমস্যা শুনে যতদূর সম্ভব আমিই ওষুধপত্র দিয়ে তাদের বিদায় করি। প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, ভিটামিন ওষুধ বেশি দিতে হয়। তাই বলে দামি ওষুধও কম লাগে না। তবে তা বুঝে শুনে দিতে হয়।’
এভাবেই অকপটে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার ৮ নম্বর বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র র এমএলএসএস টিপু সুলতান।
এক সপ্তাহে তিনদিন গিয়েও দেখা মেলেনি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র র চিকিৎসকের। অবশেষে গত মঙ্গলবার ১২টা ৩৬ মিনিটে মোবাইলে কথা হয় তার সঙ্গে।
এমএলএসএস টিপু সুলতানই এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র র প্রাণপুরুষ। তবে তিনিও অফিস খোলেন ইচ্ছেমতো। বেশির ভাগ দিনই সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে অফিস খুললেও দুপুরে ১টার মধ্যেই চলে যান।
ফলে বেশির ভাগ সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ি তালাবদ্ধ থাকে। আর কেন্দ্রের এমবিবিএস চিকিৎসক থাকেন পবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র । স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তার নাম পর্যন্ত জানেন না, তার দেখা পাওয়া তো অনেক দূরের কথা।
সরজমিন পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরপর তিনদিন গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীর পবা উপজেলার ৮ নম্বর বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র র চিকিৎসক থাকেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তার অবর্তমানে এখানে আসা বিভিন্ন রোগীcj ওষুধ দেন এমএলএসএস। খেয়ালি ব্যবস্থাপনার কারণে রোগীদের সেবা দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি এখন নিজেই ধুঁকছে।
কেবল বড়গাছি ইউনিয়নেই নয় পবার প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র র বর্তমানে একই অবস্থা। অবশ্য দু’একটি ব্যতিক্রম আছে দৃষ্টান্ত হিসেবে। চিকিৎসকদের উদ্দেশে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘গ্রামে না থাকতে পারলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশের পরও এ অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। অনেক চিকিৎসক গ্রামে বদলি নিলেও থাকেন শহরে। আর বসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে চিকিৎসার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল রানা।
তিনি বলেন, খাতাকলমে এ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র একজন এমবিবিএস চিকিৎসক, একজন মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন এমএলএসএস আছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর একদিনও এখানকার চিকিৎসককে দেখিনি। এমনকি তার নামও জানা নেই।
সোহেল রানা বলেন, চিকিৎসক ছাড়া বাকি যে স্টাফ আছেন তারা কেউই নিয়মিত অফিস করেন না। রোগী দেখা তো দূরের কথা।
একজন এমএলএসএস আছে, (টিপু সুলতান) তিনিই রোগীদের মাঝে মধ্যে ওষুধপত্র দেন। সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলেও দিনের পর দিন তিনিই এ কাজটি করছে।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্ ে ডাক্তার না বসার কারণে আমি স্বাস্থ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিসহ অন্যদের নিয়ে কয়েকবার সভা করেছি। এ ব্যাপারে সভা করে তার রেজুলেশন কপি ডিসি এবং সিভিল সার্জন (সিএস) অফিসে দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এখন আপনারা লিখে যদি ডাক্তারকে আনতে পারেন তাহলে ইউনিয়নের তৃণমূল মানুষের বিশাল উপকার হবে।’
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭, ১৯ ও ২৪ জানুয়ারি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র র দরজায় তালা। আর পাশেই সাঁটানো আছে ‘ডা. মো. গোলাম মোস্তফা নওহাটায় নিয়মিত রোগী দেখছেন’ পোস্টার। যেন এখানে কাউকে না পেলে সেখানে যাওয়ার ঈঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে।
তবে ওই তিনদিন দেখা মেলেনি এমএলএসএস টিপু সুলতানেরও। নম্বর যোগাড় করে তার সঙ্গে কথা সাড়তে হয় মোবাইলেই।
টিপু সুলতান জানান, তার বাড়ি পবার দারুশার একটি গ্রামে। বর্তমানে অফিসের কাজে সিএস অফিসে আছেন। এ জন্য তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই।
ওষুধ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়েই এ কাজটি করতে হয়।
এদিকে, রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে পাওয়া যায় পবার ৮ নম্বর বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র র এমবিবিএস চিকিৎসক শাহানা আক্তারের নাম ও মোবাইল নম্বর। কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি প্রথমে কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন।
পরে সরজমিন তাকে না পাওয়া এবং ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়।
শাহানা বলেন, ‘আমি প্রতি বুধবার সেখানে যাই। বাকি সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকি। কারণ, সেখানে জনবল সংকট রয়েছে। আর আমার নিয়োগের নির্দেশনায়ও এভাবে বলা হয়েছে।’ তবে এ সময় তিনি ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র না যাওয়ার নানা কারণ ও সমস্যার কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সেখানে টয়লেট নেই। এটি বড় সমস্যা। আমি নারী হিসেবে শহর থেকে গিয়ে সারাদিন টয়লেট ছাড়া কীভাবে থাকি।’ উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ংলগ্ন ইউপি ভবনেই টয়লেট আছে।
তিনি বলেন, ‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ি ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এ জন্য বসতেও ভয় লাগে। আর আমি যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্র যাই তখন চেয়ারম্যান সাহেব থাকেন না। তাই তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘পাশেই ইউপি ভবন আছে সেখানে আমাদের একটি জায়গা দিলেই পারেন। তাহলে আমি রোজ বসবো।‘
অপরদিকে, ডা. শাহানার নিয়োগপত্রে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বসার কথা রয়েছে কিনা- এ বিষয়ে কথা হয় পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, শাহানা আক্তারের পোস্টিং বড়গাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ই। কিন্তু জনবল সঙ্কট দেখিয়ে সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলাউদ্দিন একটি চিঠির মাধ্যমে শাহানাকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র র পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বসার অনুমতি দিয়ে গেছেন। তবে এ চিঠি কতোটা নিয়মসিদ্ধ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
পবার মথুরা গ্রামের ভুক্তভোগী নূরুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গিয়ে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। সেখানে তিনি যখনই যান কেন্দ্রটি খোলা পান না। আর কেন্দ্র খোলা পেলেও ডাক্তার থাকেন না। বাধ্য হয়ে ঘুরে আসতে হয়। ছুটতে হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তার মতো অনেকের একই অবস্থা।
বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আতাহার আলী বাংলানিউজকে বলেন, সভাপতি হলেও তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্র র ডাক্তারকে দেখেননি।
তিনি বলেন, এখানকার রোগীরা যে চিকিৎসা পান না সে বিষয়টি ইতোমধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। আর এ বিষয়টি তিনি নন, পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খতিয়ে দেখবেন। এটি তার দায়িত্ব।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এখানে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
‘দুদিন এক রকম ঘরে বন্দি অবস্থায়ই ছিলাম। ’৭১ সালের যুদ্ধ দেখিনি। তবে শুনেছি, কি বিভৎস নির্যাতন চলেছে মানুষের ওপর। মনে হচ্ছিল, আমরা যেন একাত্তর সালে ফিরে গেছি।’ কথাগুলো আমাকে বলেছিলেন ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বোসপাড়া গ্রামের এক হিন্দু যুবক, যিনি ২০০১ সালের ২ ও ৩ অক্টোবর হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামের মানুষের ওপর বিএনপি-মৌলবাদী গোষ্ঠীর উন্মত্ত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী।
নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা উপজেলার কেএম কলেজের প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল মুক্তিযুদ্ধের শহীদ নিতাই মণ্ডলের পুত্র। একাত্তরে রঞ্জিত হারিয়েছেন পিতাকে। তারপরও ২০০১ সালের ৯ অক্টোবর তার পরিবার ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনাকে তিনি ’৭১-এর চেয়েও নারকীয় ও বিভৎস বলে বর্ণনা করেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকারদের হাতেও আমরা এ রকম নির্যাতনের শিকার হইনি।’
২০০১ সালের ১ অক্টোবর রাত থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ বছর পরে যেন দেশে এসেছিল আরেকটি ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভিনদেশি পাকিস্তানি হায়েনাদের পাশে ছিল অল্প কিছু সংখ্যক এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরেরা। আর ২০০১ এর হায়েনাদের সবাই ছিল এ দেশী। নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর পাশাপাশি একাত্তরের পরাজিত জামায়াতিদের সঙ্গে ’৭৫ পরবর্তী খুনি-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী সবগুলো অপশক্তি, যাদের মধ্যে ছিল না বিন্দুমাত্র মানবতাবোধ, তারাই সম্মিলিতভাবে হিংস্র উন্মত্ত আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্ত চেতনার বাঙালির ওপর।
এ কারণেই বোধ হয়, ত্রিশ লাখ বাঙালির প্রাণহানির একাত্তরের চেয়ে ২০০১ এর ভয়াবহতাকে অনেকের কাছেই বেশি মনে হয়েছে। নির্যাতিত প্রভাষক রঞ্জিত কুমার মণ্ডল ঘটনার ব্যাখ্যা করছিলেন এভাবে, ‘এবারের নৃশংসতা একাত্তরকে ছাড়িয়ে গেছে। কেননা, জামায়াতিরা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমিনীদের মতো মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী চক্র আর অপশক্তিগুলো।’
আর ৯ বছর পরে ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা-নির্যাতন সম্পর্কিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনও একই সত্যই তুলে ধরছে। সরকারের কাছে গত বছরের ২৪ এপ্রিল দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে মাত্র ১ বছর ৩ মাসে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ হাজার নেতা-কর্মী ও মৌলবাদী ক্যাডার সন্ত্রাসী বাহিনীর ৩৬২৫টি অপরাধের নানা প্রমাণভিত্তিক তথ্য তুলে বলা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধের সংখ্যা আরো ১৪ হাজার, অর্থাৎ পরিস্থিতির ভয়াবহতা ছিল আরো ৫ গুণ বেশি।
১ অক্টোবর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ওই রাত থেকেই সারা দেশের মতোই ফরিদপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে-অভিযোগে নির্বিচার নির্যাতন শুরু হয় আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষের ওপর। সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষেরা। হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, মন্দির ও ক্ষেতে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং চাঁদা দাবি ও আদায়ের সে ভয়াবহতা নেমে এসেছিল হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলের ওপরই। অনেকে পালিয়ে যান বিভিন্ন স্থানে। অনেককে চাঁদা দিয়েই এলাকায় থাকতে হয়, কেননা, চাঁদা না দিলে হত্যা বা দেশছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ ও নিরীহ-অসহায় বিবেচনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলে তুলামূলকভাবে বেশি। তাদেরকে জমি-জমা, বাড়িঘর ও এলাকা থেকে বিতাড়িত করে দখল করতে নারকীয় নির্যাতন চালানো হয়। ওই সময় বাঙালির সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। নারকীয় এ নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায় সেবার সব ধরনের আলোকসজ্জা, বাদ্য-বাজনা, মাইক ব্যবহার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতি বর্জন করে অনাড়ম্বর পূজা উদযাপন করে। পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতে কালো ব্যানার ও কালো পতাকা টানিয়ে চলে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, স্মারকলিপি পেশ, গণঅনশন, মানববন্ধন ও নীরবে প্রতিমা বিসর্জনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি।
ভোরের কাগজের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ও পাশাপাশি জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা(বছর খানেকের জন্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম সে সময়।
স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের সঙ্গে নিয়ে অন্তত মাস তিনেক আক্রান্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদী গোষ্ঠীর নির্যাতন-সন্ত্রাসের সংবাদগুলো তুলে ধরেছিলাম ভোরের কাগজ-জনকণ্ঠে। মিডিয়ার মাধ্যমে বিএনপি-জামাতের রোষাণলে বিপন্ন মানবতাকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছিলাম আমরা প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণমাধ্যমগুলোর কর্মীরা। নির্যাতনের সেসব ভয়াবহতা দেখে সাংবাদিকতার সাধারণ নির্লিপ্ততার বাইরে আসতে বাধ্য হয়ে আমরাও বিষ্ময়ে, আতঙ্কে বিমূঢ় হয়েছিলাম, ‘মানুষ মানুষের ওপর এভাবে নির্যাতন চালাতে পারে!’
১ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে রাতের অন্ধকারে মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের বোসপাড়া গ্রামের মনিশঙ্কর বোসের বাড়ির মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৬ অক্টোবর রাতে মৌলবাদীরা ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রথখোলা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও বাসস্ট্যান্ড সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভেঙে ফেলে। ১১ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের শেতলা মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে একদল মৌলবাদী সন্ত্রাসী নগরকান্দা উপজেলার চৌমুখা গ্রামের নমশূদ্র পাড়ার সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মন্দিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেখে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা ৩টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
নির্বাচনের পরদিন থেকে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকায় কথিত সন্ত্রাস দমন কমিটি গঠন করে বিএনপি-জামায়াতিরা এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যারা নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছেন বা ভোট দিয়েছেন তাদের তালিকা করে চাঁদাবাজি, মারপিট, হামলা ও নির্যাতন চালায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ২৭ অক্টোবর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জীবন করকে মারাত্মকভাবে কোপায় তারা। ২৮ অক্টোবর একই কারণে ২৮ অক্টোবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ কর্মী জাকিরের। ওই সময়
অন্যদিকে ২ অক্টোবর সকাল থেকে লাঠিসোঠা ও অস্ত্রসস্ত্রসহ মধুখালী উপজেলার বাগাট বাজার ও বোসপাড়া গ্রামে নেমে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের নেতৃত্বে মৌলবাদী গোষ্ঠী। বাগাট ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের চিহ্নিত রাজাকার সালাম ফকিরের ছেলে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী কর্মী জাকির ফকিরের নেতৃত্বে ৪০ জনের বেশি বিএনপি সমর্থক এ হামলা চালায়। তারা বেছে বেছে বাগাট বাজারের আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর করে। দোকানের মালামাল লুটপাট করা হয়। এদের হাতে প্রহৃত হন বাগাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র সিকদারসহ অারো কয়েকজন। পরে এ দলটিই বাগাট বাজার সংলগ্ন বোসপাড়াসহ অন্য গ্রামগুলোতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলায়েত হোসেনের বাড়িসহ ৮টি হিন্দুবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর শেষে হুমকি-ধামকি দেয়। তারা মনিশঙ্কর বোসের একটি ঘরে আগুন দিয়ে সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই করে দেয়। পরদিন ৩ অক্টোবর সকাল থেকেই পুনরায় বিএনপি-মৌলবাদী গোষ্ঠী হুমকি দিতে শুরু করে নিরীহ গ্রামবাসীদের। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো এলাকাবাসী। অনেকে ভয়ে-আতঙ্কে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।
৫ অক্টোবর গভীর রাতে ভাঙ্গা বাজারের নিজের তেলের মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অতুল চন্দ্র সাহা। ৬ অক্টোবর রাতে ভাঙ্গা উপজেলারই অাজিমনগর গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের ওপর নির্যাতনও ’৭১ এর বর্বরতাকে হার মানায়। ‘নৌকায় ভোট দেওয়ার মজা দেখাচ্ছি’ বলে রাত ৯টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের ভাই হাবি, পলাশ, মোঃ সেকেন, জামাল, এসকেন, কামাল ও টেক্কা নামক ৭ বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসী হামলা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে পরিবারটির গৃহকর্তা পেছনের দরোজা খুলে পালিয়ে যান। বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা ঘরের মধ্যে জোর করে ঢুকে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় মায়ের সামনেই ওই পরিবারের কলেজ পড়ুয়া কন্যাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করতে শুরু করে। মা সন্ত্রাসীদের হাতে-পায়ে ধরে মেয়ের ইজ্জত ভিক্ষা চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদম মারপিট করে। রাত একটা পর্যন্ত এ পৈশাচিক নির্যাতন চালানোর পর সন্ত্রাসীরা ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটিকে বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করে এবং ভোররাতে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে যায়।
ওই তরুণী পরে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে বাঁচলেও বাঁচতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নের গোয়ালপোতা গ্রামের তরুণী বিলকিস আক্তার। পুরো পরিবার নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে বিএনপি নেতা করিম মাতবরের পুত্র সৈয়দ আলী মাতবর ও তার আত্মীয় গঞ্জের খাঁ ও আকমালের নেতৃত্বে ১৬ অক্টোবর রাতভর ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভোরে বাড়ির অদূরে একটি বাঁশঝাড়ের বিলকিসের শরীরের চেয়ে কম উচ্চতার বাঁশের সঙ্গে উড়না পেচিয়ে বিলকিসের লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হলেও ময়না তদন্তে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার আলামত মিললে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায় এবং প্রভাবশালীরা পরিবারটিকে হুমকি দিতে থাকে। হতদরিদ্র পরিবারটির বাড়িতে কবর দেওয়ারও জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে বিলকিসের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়।
পায়ে ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলেও দুই চোখ বাঁচাতে পারেননি নগরকান্দা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী হায়দার মোল্লা। ১ অক্টোবর রাত থেকেই মাঝারদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদুজ্জামান শাহীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়ে হায়দারসহ মাঝারদিয়াসহ ৫টি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। দেড় মাস পর হায়দার বাড়িতে ফিরলে ১৯ নভেম্বর রাতে শাহীদ চেয়ারম্যানের ১৫/২০ জন ক্যাডার সন্ত্রাসী হামলা চালায়। প্রাণভয়ে হায়দার ঘরের চালে আত্মগোপন করলে সেখান থেকেই টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে তাকে মাটিতে ফেলে চারজন হাত-পা পাড়িয়ে ধরে রাখে, একজন গলায় পা দিয়ে চেপে রাখে এবং দুজন বুকের ওপর বাঁশ চেপে রাখে। মোকো, ইউনুস ও ইলিয়াস- এই তিন সন্ত্রাসী চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে হায়দারের দুই চোখ তুলে নেয়। চোখ তোলার সময় হায়দার সন্ত্রাসীদের হাত-পা ধরে ‘এখন থেকে বিএনপি করবো’ বলে অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের মন গলেনি।
এর আগে শাহীদ চেয়ারম্যানের লোকজন মাঝারদিয়া গ্রামের পাঁচটি এলাকাসহ অাশেপাশের আরো ৪টি গ্রামের শতাধিক পরিবারকে তাড়িয়ে দিলে তারা মাঝারদিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক চেয়ারম্যান হামেদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হামেদ চেয়ারম্যানও পালিয়ে থাকতে বাধ্য হলে দীর্ঘ দু’মাস শত শত মানুষকে রেখে খাওয়ান তার স্ত্রী।
সেখানেও গ্রামের ৩ দিক থেকে হামলা চালায় কয়েক হাজার সন্ত্রাসী। ওই গ্রামে আমাদের ঢুকতে হয়েছিল পুলিশি প্রহরায়। আমরা যখন গ্রামটিতে গেলাম, তখনো চলছিলো চোরাগুপ্তা হামলা পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও। মোটরসাইকেল পাশের মাঝারদিয়া বাজারে রেখে হাটা পথে গ্রামে ঢোকার সময় গ্রামটির মুখে পাহারায় থাকা বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমাদের লক্ষ্য করে বলেছিল, ‘পুলিশ নিয়ে ঢোকা হচ্ছে, যাওয়ার সময় সাংবাদিকতার মজা টের পাইয়ে দেবো’। হুমকির মুখে চারপাশে পুলিশ পাহারায়ই বের হতে হলো ফের।
মাঝারদিয়া ব্রিজ এলাকার সম্ভ্রান্ত ইব্রাহিম মাতুববর পালিয়ে গেলে তার স্ত্রী রোমেছাও আশ্রয় নেন হামেদ চেয়ারম্যানের বাড়িতে। মাঝে একদিন তিনি বিএনপির সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা নিজের বাড়িতে গিয়ে শিশু সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ভাতের হাড়িতে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে খাবার লুটপাট করে নিয়ে যায়।
সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের চর চাঁদপুর গ্রামে চলা এরকমই এক নির্যাতনের খবর পেয়ে অন্য একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে ছুটে গিয়েছিলাম ওই গ্রামে। ২৭ নভেম্বর দুপুরের দিকে আমাদের মোটরসাইকেল বাজার ছাড়িয়ে চর চাঁদপুর গ্রামের পথে এগিয়ে যেতে দেখলাম, মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি খালি গায়ে কাধে গামছা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আমাদের দেখতে পেয়েই থেমে গেলেন এবং ঘুরে দৌঁড় দিলেন যে দিক থেকে আসছিলেন, সেদিকেই। অনেক কষ্টে তাকে থামানো গেলেও থরথর করে কাঁপছিলেন তিনি। ‘আমরা তার জন্য ক্ষতিকর কেউ নই’-অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে এটুকু আশ্বস্ত করার পর জানা গেলো, তিনি হিন্দু নমশূদ্র-শীল সম্প্রদায়ের মানুষ এবং চর চাঁদপুর গ্রামের নির্যাতিত ৮টি নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবারের একটির গৃহকর্তা। আগের দিনই তাদের ওপর নেমে এসেছিলো নারকীয় তাণ্ডব। নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন তাদের বাড়িঘরে এখনো বিদ্যমান। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদেই যাচ্ছিলেন নিকটবর্তী বাজারে।
অপরিচিত আমাদের দেখে নতুন নির্যাতনের আশঙ্কা-আতঙ্কে বাড়ির দিকে দৌঁড় দিয়েছিলেন অন্যদের খবর দিয়ে পালিয়ে রক্ষা পেতে। ২৬ নভেম্বর ভোর ৭টায় ওই হামলা শুরু হয় ‘এখন আর তোদের বাজানরা নেই- কেউ বাঁচাতে পারবে না। নমদের(হিন্দু)থাকতে দেওয়া হবে না। গাট্টি-বোঁচকা বেঁধে ওপার চলে যা’- এ হুমকি দিয়েই।
গ্রামের বিএনপি নেতা বলে দাবিদার আদেলউদ্দিন বেপারির নেতৃত্বে তার পুত্র গোলাম বেপারি, ভাই মানা বেপারি, আজগরপ প্রামাণিক, অখিল প্রামাণিক, রব বেপারি ও আক্কাস বেপারির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা ও মুগুর নিয়ে হামলে পড়ে বৃদ্ধ রমেশ চন্দ্র শীল, তার বৃদ্ধা স্ত্রী হামি শীল, পুত্র সুকুমার শীল, পুত্রবধূ সবিতা, কার্তিক চন্দ্র শীল, রমেশ চন্দ্র শীল, সুরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, তার স্ত্রী চারুবালা বাড়ৈ, নিতাই চন্দ্র বাড়ৈ, অনীল চন্দ্র বাড়ৈ, কাশিনাথ বাড়ৈ ও তার স্ত্রী শোভা রানী বাড়ৈসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে নির্বিচার মারধর করা হলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মহিলা ও শিশুরাও সেদিন রক্ষা পাননি। প্রাণভয়ে পাশের বাড়িতে পালালেও টেনেহিচড়ে এনে মারধর ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয়। বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা।
বর্বর ওই নির্যাতনের হাত থেকে অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচাতে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন কমান্ডার রাজ্জাক মুন্সী, কালাম ও ইউনুসসহ অনেক মুসলমান প্রতিবেশী এগিয়ে এলে তারাও লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আমাকে মোবাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি দিয়েছিলেন ওই আসনের বিএনপি’র প্রার্থী এবং পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
এ ছাড়াও ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর-রঘুনন্দনপুর এলাকার পরিবহন ড্রাইভার নূরুল ইসলাম শেখ, কাঠ ব্যবসায়ী এম এ হাসান ও সোহবান শেখসহ শতাধিক মানুষ, বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া ইউনিয়নের সূর্যদিয়া গ্রামের গোবর্ধন ভট্টাচার্য, উত্তম ভট্টাচার্য, চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের দিলীপ কর, তার মা কালিদাসী কর, স্ত্রী রমা রানী, সন্ধ্যা কর, নারায়ণ সাধু, সত্য কুমার সাহা, তার পুত্র স্বরুপ কুমার সাহা, সঞ্জিব কুমার দাস, যদুনাথ চুনিয়া ও মিন্টু কুমার দত্ত, নগরকান্দা উপজেলার লস্কারদিয়া ইউনিয়নের সাকরাইল গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল ও আটাইল গ্রামের সরোয়ার মাতুব্বর, ফুলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কালিপদ মণ্ডল, পরেশ মণ্ডল, গোকুল মণ্ডল, যুধিষ্ঠির মণ্ডল, গৌরাঙ্গ মণ্ডল, সুশীল মণ্ডল ও ইয়াবলদি গ্রামের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল শেখ, ডাঙ্গি ইউনিয়নের চৌষাড়া গ্রামের মনিরুদ্দিন শেখ, হাশেম শেখ, মিজানুর রহমান, হাকিমুদ্দিন শেখ ও মোজাহার শেখ শতাধিক পরিবার, তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া গ্রামের আদেল মোল্লাসহ অসংখ্য মানুষ আহত বা মারধরের শিকার হন ওই সময়কার মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনে।
প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই সন্ত্রাসীরা নির্যাতনের ঘটনা পুলিশে বা অন্য কাউকে না জানাতে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে কোনো কোনো স্থানে গেলেও নীরব ভূমিকা পালন বা সন্ত্রাসীদের সহায়তার অভিযোগ ওঠে। কেউ কেউ আরো অভিযোগ করেন, ঘটনা জানিয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি, জড়িতদের গ্রেপ্তার করেনি বা নির্যাতিতদের নিরাপত্তা দেয়নি। অনেকে লোকলজ্জা ও প্রাণের ভয়ে থানায় জানাতে বা মামলা দিতেও সাহস পাননি। নির্যাতনকারী অথবা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে-আতঙ্কে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাননি। এমনকি নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়েও ‘আমাদের ওপর কোনো হামলা বা নির্যাতন করা হচ্ছে না’ মর্মে ১১ অক্টোবর মুচলেকা প্রদান করতে বাধ্য হন বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের উত্তর হাসামদিয়া গ্রামের নির্যাতিত ১৪ হিন্দু পরিবার। প্রভাবশালীরা এ মর্মে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদনপত্র তৈরি করে জোরপূর্বক পরিবারগুলোর প্রধানদের স্বাক্ষর নিয়ে পাঠিয়ে দেন।
সবচেয়ে আতঙ্কজনক ছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক, কোনো নির্যাতন হচ্ছে না, ‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা, কাল্পনিক বা অতিরঞ্জিত প্রমাণে বিএনপি-জামায়াতের উর্ধ্বতন নেতা ও সাংবাদিকদের(!) নিয়ে জেলা বা উপজেলা সদরের পুলিশ কর্মকর্তাদের রীতিমতো গাড়ি নিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে টহল দিতে দেখেছি সে সময়। দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি(!) রক্ষায় তাদের করা তদন্তে ধরা পড়ে, জেলায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে! সেসব তদন্ত প্রতিবেদন চলে যায় সরকারের শীর্ষ মহলে আর ছাপা হয় দিনকাল, সংগ্রাম, ইনকিলাবসহ তাদের সমর্থক মিডিয়ায়। অার ওইসব মিথ্যা ও কল্পকাহিনী(!)প্রচা -প্রকাশকারী সাংবাদিক অর্থাৎ আমাদের বানানো হয়, যুবলীগ কর্মী এবং সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের চক্রান্তকারী হিসেবে।
তবে সরাসরি হুমকি দিয়ে নির্যাতিতদের ঘটনা মিথ্যা বলতে বাধ্য করা, সাজানো সাক্ষী দিয়ে সাজানো তদন্ত কার্যক্রম চালানোর রিপোর্ট প্রকাশেও আমরা দেরি করিনি। আইন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও প্রকৃত সত্য ও পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি এ ‘তদন্ত জালিয়াতি’ ফাঁসে অগ্রণী ভূমিকা নেয়।
এগুলো মাত্র একটি জেলার মাত্র তিন মাসের প্রকাশ্যে আসা নির্যাতন-সন্ত্রাসের খতিয়ান, যা মানবতাকে শিউরে দেয়। আরো অসংখ্য ঘটনার কথা আমরা জানতে পারিনি। আর বিএনপি-জামায়াতের পুরো ২০০১-২০০৬ সময়কালে শুধুমাত্র ফরিদপুরেই সংঘটিত সব ঘটনা তুলে ধরতে গেলে পুরো একটি ইতিহাস বইই লিখতে হবে! সারা দেশের কথা তো বলাই বাহুল্য।
এসবও তো মানবতাবিরোধী অপরাধ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চেয়ে এসব অপরাধ কম কিসে? বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা একাত্তরকেও হার মানিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সরকার চূড়ান্তভাবে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করে বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিলেন। আর এবার চিহ্নিত হয়েছে ২৬ হাজার। নির্যাতনের নানা মাত্রায় এসব অপরাধী তাই যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও কম অপরাধ করেননি।
ওই সব আক্রান্ত গ্রামগুলোতে গিয়েও বার বার মনে হচ্ছিলো, একাত্তরের যুদ্ধকবলিত বাংলাদেশের পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্যাতনের শিকার কোনো গ্রামে বুঝি অলৌকিকভাবে ঢুকে পড়েছি ৩০ বছর পরে।
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী, আব্দুল আলীমদের একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এদের প্রায় সবাইসহ চিহ্নিত আরো যুদ্ধাপরাধীরাও ২০০১ পরবর্তী মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন যুদ্ধাপরাধীদের নব্য দোসর ও রক্ষার ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত বিএনপি-জামায়াত-আমিনী-মৌলবাদী-জঙ্গি চক্র।
স্বাধীনতার ৪০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি বলেই দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিদের সিরিজ ও নানা বোমা হামলা, হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, জেএমজেবি, হিজবুত, বাংলাভাইমার্কা মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠির উত্থান ঘটেছে। আর এসবের নেপথ্য-প্রকাশ্য স্রষ্টা যে বিএনপি’র ঘাড়ে সওয়ার হওয়া যুদ্ধাপরাধীরা-এটাও এখন ষ্পষ্ট।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি ২০০১ পরবর্তী নির্যাতন-সহিংসতারও বিচার তাই পৃথক পৃথক ট্রাইব্যুনালে শুরু হওয়া জরুরি। না হলে তারা আবারো একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বাংলাদেশকে অন্ধকারের যুগে ফিরিয়ে নেবে, যেমনটি নিয়েছিল ২০০১-২০০৬ সময়কালে।
যখন ফরিদপুরে নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মী ছিলাম, এ ধরনের দু:সময়ে বিপন্ন মানবতাকে রক্ষার লক্ষ্যে মানুষের মানবিকতার গুণগুলোকে জাগিয়ে তুলে প্রতিবাদে-প্রতিরোধে আর সাহসে-সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করতে জড়াতাম নানা আয়োজনে-কর্মসূচিতে। এসব আয়োজনে একটি স্লোগান-বক্তব্য রাখতাম প্রায়ই, ‘কে জাগিবে আজ, কে করিবে কাজ, কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ’
আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে-পরের সেনা ক্যু চেষ্টা, বিডিআরসহ নানা হত্যাকাণ্ড, বিএনপি-মৌলবাদী অপশক্তির সম্মিলিত সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্র, এখনো চলমান তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা সব এক সূত্রে গাথা, যা রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। ’৭৫ এর পরে অন্ধকার গর্তে লুকিয়ে থাকা বিষধর সাপেদের গর্ত থেকে বীরদর্পে বেরিয়ে এসে বার বার ছোবল দিতে দেখে আমরাও তার প্রমাণ পেয়েছি। এসব সাপেদের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে পিষে মেরে ফেলার জন্য সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সদা জাগ্রত থাকতে হবে, যেমনটি বীর বাঙালি জেগে আছে ’৭১-’৭৫ এর খুনিচক্রের বিচার চেয়ে।
৪০ বছর ধরে চলে আসা বাংলা জননীর লাজ-কলঙ্ক ঘুচাতে কে কে নয়, সবাইই তাই জাগবেই, জাগতেই হবে।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
ঢাকা: শিশু সিয়ামের হাতে কাঠের ফ্রেমের প্ল্যাকার্ডের উচ্চতাও প্রায় তারই সমান। সামনে দাঁড়ানো বন্ধু রাজনকে বলল,‘সানডে-মানডে কোলজ কইরা দিমু’। বেলা ৩টায় এ শিশুর কি আসলেই কথা ছিল খালেদা জিয়াকে মগবাজারে স্বাগত জানাতে রমনা থানা বিএনপি’র মিছিলের অগ্রভাগে অবস্থান নেওয়ার।
সিয়ামের হাতের প্ল্যাকার্ডে রয়েছে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি। শহীদ জিয়াকে লাল সালাম জানানো হয়েছে সেখানে। এ লাল সালাম কী আমাদের রাজনীতির লাল লজ্জা নয়?
বিএনপি’র গনমিছিলে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা ছিল আর অনেকে। এদিকে বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতেও ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের গনসমাবেশে গিয়েও দেখা মেলে ১১ বছরের রায়হান, অয়ন, ১২ বছরের শিবু, আপেলসহ অনেকের।
আইনপ্রতিমন্ত্রী যখন মঞ্চে বিরোধী দলের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আর দেশের জঞ্জাল পরিস্কারের কথা বলছিলেন, তখন তার সামনেই স্লোগান দিচ্ছিল রায়হানরা। ভঙ্গ হচ্ছিল শিশুনীতি ২০১০ এবং জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ।
খালেদা জিয়া মগবাজার মোড়ে আসার প্রায় দুঘন্টা আগেই রমনা থানা বিএনপি মোড়ে আসে। ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফেস্টুন ধরে দাড়ায় সিয়াম। জানতে চাইলাম ফেস্টুনের যাদের ছবি আছে সবাইকে চিনো? একে একে সবার নাম বলে দিল।
খিলগাও টেম্পু স্ট্যান্ডের একটি যাত্রীবাহী লেগুনার হেলপার সিয়াম। থাকে মগবাজার বাটারগলিতে। গলির রিপন ভাই নিয়ে এসেছে আজকের মিছিলে। ৫০ টাকা দিয়ে বলেছে দুপুরে ভাতও খাওয়াবে। কিন্তু তখনো দেশনেত্রী বাড়ি ফিরেননি বলে সিয়ামের খাওয়াও হয়নি।
এর আগেও আওয়ামীলীগ-বিএনপি দু’দলের মিছিল মিটিংয়েই অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সিয়ামের। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত পেয়েছে সে এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে।
দেখা মিললো সহোদর দুই জনের সঙ্গেও। ১১ বছরের রাজনের ছোট ভাই সুজন। সুজনের বয়স ৯। তাদের বাবা কাঠ মিস্ত্রিরি কাজ করে শহীদবাগের একটি ফার্নিচারের দোকানে। দুজনেই স্কুলে যায়। প্রভাতী বনশ্রী স্কুলের ৫ম এবং ৩য় শ্রেণীর ছাত্র এ দু ভাই। ৫৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ফেস্টুন নিয়ে গনমিছিলের জোয়ারে ভাসছিলো দুই শিশু।
প্যাচাল পাড়ার বেশী সময় ছিল না এই দুই শিশু রাজনৈতিক কর্মীর। একটু পরেই রাজনের পেছন পেছন হাটা দিল সুজন।
সন্ধ্যার আগে আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ছোটাছুটি করছিল রায়হান আর অয়নরা। শিশু বয়সের লাবণ্য মুখে নেই। শক্ত মুখে কাঠিন্যেরই ছাপ। রাজনীতির নিষ্ঠুরতা তাদের মুখে ‘মায়া ভাইয়ের পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’ স্লোগান ধরিয়েছে।
অয়নের বাসা লালবাগে, এতিমখানার পেছনেই। তার বাবা লিটন ওয়ার্কশপে কাজ করেন। তিন ভাই দু-বোনের মধ্যে সেই তৃতীয়। গত রাতে এলাকার বড় ভাই কাদের অয়ন এবং রায়হানকে জানায় আজ বিকেলে এখানে আসলে ১০০ টাকা করে দিবে। এ জন্যেই এখানে এসেছে বলে জানাল রায়হান।
জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শিশুর লালন পালন ও বিকাশের জন্য পিতামাতার উভয়ের দায়িত্বকে সক্রিয় করে তুলতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র উদ্যোগী হবে। আমাদের রাষ্ট্রের রাজনেতিক দলগুলোর এ উদ্যেগ নেয়াটা হয়তো এই ভিন্ন ধারায়।
অনুচ্ছেদ ২৭ এ শিশুর উন্নয়নের ব্যাপারে বলা হয়েছে প্রতিটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য উন্নত জীবন মানের ব্যবস্থার প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে। অনুচ্ছেদ ২৮ এ দেয়া হয়েছে শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকার।
রাজনীতিবিদদের কথা ছিল জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩২ টি অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করবে। অথচ তারাই নিয়ে আসছে শিশুদের ঝূকিপূর্ণ রাজনীতি প্রাঙ্গনে। যার প্রভাব পড়ছে শিশুর কোমলমতি মনে আর এর ফলে শিশুর সামাজিকিকরণ হচ্ছে ভিন্নভাবে।
বাংলাদেশের শিশু নীতি ২০১০ অনুযায়ী শিশুকে রাজনীতিতে ব্যাবহার করা যাবে না। রাজনীতিবিদরা এ নীতির অনুমোদন দিলেও মানছেনা তারা নিজেরাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর সঙ্গে যখন শেয়ার করছিলাম এই অভিজ্ঞতার কথা ও বলছিলো, ‘দেশের রাজনীতির অাবর্জনায় এখন আর সাধারন মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের ইচ্ছে নেই। তাই মিছিল সমাবেশে লোক বাড়িয়ে মত এবং শক্তি প্রদর্শনের জন্যে কোমমতিতে শিশুদের ব্যবহার করছেন রাজনীতিবিদরা।’
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
তামাক কারখানার ঝুকিপূর্ণ কাজে ৫শ’ শিশু শ্রমিক!
--------------------------------------------------------------------------------
শাহেদ আলী ইরশাদ, গোয়ালন্দ প্রতিনিধি
বাংলানিউজটোয়েন্ট ফোর.কম
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী): রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় তামাক কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে ৫শ’ শিশু শ্রমিক। চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি সত্ত্বেও এসব কোমলমতি শিশুদের জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই এসব কাজ করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গোয়ালন্দ ফিডমিলস, উজানচর নতুন পাড়া মডার্ন হ্যাচারিজ সংলগ্ন, বিশ্বনাথপাড়া, গোয়ালন্দ পৌর ভবন এলাকার কারখানায় দেড়শতাধিক নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করে প্রায় ৫শ’ শিশু।
ওইসব শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও পরিশ্রম অনুযায়ী বেতন দেয়া হয় না। নির্ধারিত মাসিক বেতন নেই এসব তামাক প্রস্তুত কারখানায়। নেই উৎসব ভাতাও। চুক্তিতে গুল কৌটায় ভরে মোড়ক লাগানোর পরে প্যাকেট করে ১৪৪ কৌটার জন্য দেয়া হয় ৫-৬ টাকা। এভাবে প্রতিদিন একজন শিশু শ্রমিক ৪০-৫০ টাকা রোজগার করতে পারে। উল্লেখ্য, গুল মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর আর শিশুদের ক্ষেত্রে তো ক্ষতির মাত্রা আরও বেশি।
চাকরি যাওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারীকর্মী জানান, মরণব্যাধি আক্রান্ত হওয়ার কথা জেনেও অভাবের কারণে কম বেতনে গুলের কারখানায় কাজ করছি। একদিন কাজের রেট (দাম) বাড়াতে বলায় কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছিল, তাই অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়েই কম বেতনের চাকরি করছি।
শিশু শ্রমিক সেলিনার (৮) সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ইচ্ছে থাকা সত্বেও স্কুলে যেতে পারছে না সে। সারাদিন মায়ের সাথে ১ ভাই ও ১ বোন কারখানায় কাজ করে। চুক্তিতে কাজ করতে হয়। তাই সাথে ছেলে-মেয়েরা থাকলে আয় একটু বেশি করা যায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দের ৩০টি সরকারি, ১৪টি বেসরকারি, ২টি নিবন্ধনবিহীন ও ৩ কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০১১ সালের শিক্ষর্থীর সংখ্যা ছিল ১৫হাজার ৪শ’ ৬৬জন। ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১শতাংশ অর্থাৎ ৩ হাজার ৩শ’ ১৫জন। স্কুলে না যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০শতাংশ। আর এসব শিশুরাই বিভিন্নস্থানে কাজ করে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সবার জন্য বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ, পরিচালনা কমিটির মাসিক সভা, হোম ভিজিট করা হয়। তামাক কারখানায় কোনো শিশু শ্রমিক কাজ করে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আহমেদ আল মারুফ বাংলানিউজকে জানান, তামাক শিল্পে কাজ করার ফলে শিশুরা স্বাস্থ্যহীনতা, শারীরিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিসসহ জটিল-কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
গোয়ালন্দ পৌর মেয়র শেখ মো. নিজামের মালিকানাধীন মেসার্স পদ্মা ইন্ডাসট্রিজে তামাকের পাতা ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় গুল। গুল উৎপাদনে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ শিশু শ্রমিকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করায় এসব শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসার স্বার্থে স্থানীয় পৌর মেয়র স্কুলগামী এসব শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ন কাজ করাতে দ্বিধাবোধ করছে না। তাদের অভিযোগ, এত খুঁকিপূর্ণ কাজ সত্ত্বেও কোমলমতি এসব শিশু শ্রমিক বেতনের বাইরে আর কোনও সুবিধা-সহযোগীতা পায় না।
রাজবাড়ী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন খান বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশের সংবিধানে ২৮৪ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো ব্যক্তি ১৬বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে চাকরিতে নিয়োগ করলে বা কাজ করার অনুমতি দিলে ৫হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
গোয়ালন্দ পৌর মেয়র শেখ মো. নিজাম তার মালিকানাধীন কারখানায় শিশুদের দিয়ে কাজ করানো প্রসংঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘গুল উৎপাদনের কাজে কোনো শিশু শ্রমিককে আমরা নিয়োগ করিনি। শুধু ৪০জন নারী শ্রমিক কাজ করে। কোনো শিশু যদি তার মায়ের সাথে এসে কাজ করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করার কিছু নেই। কেননা, দুর্ঘটনা হলো দুর্ঘটনা (অ্যাকসিডেন্ট ইজ অ্যাকসিডেন্ট)।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিমের প্রশ্নের জবাবে আশরাফ এ কথা বলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, পত্রপত্রিকায় লেখা হয় দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করার কারণ নেই, দেখতে হবে কাউকে হত্যা করা হয়েছে কি না। তিনি বলেন, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটালে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে আমাদের কিছু করার নেই।’
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আশরাফের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সাংসদ তারানা হালিম বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা নিছকই একটি দুর্ঘটনা নয়। সতর্ক হলে যা এড়ানো যায়, সেটা দুর্ঘটনা নয়। আইনেও আছে, কারও অবহেলার জন্য মৃত্যু হলে তা ৩০৪ ধারায় হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সড়কের সব দুর্ঘটনাকে কেবল দুর্ঘটনা বলা যায় না। এ কথার প্রতিবাদ জানাতেই আমি কথা বলতে দাঁড়িয়েছি।’
ফজলুল আজিম মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, সড়ক মেরামতের জন্য অপেশাদার ও দলীয় লোকদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাও জড়িত। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চান ফজলুল আজিম।
জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার টেন্ডার, চাঁদাবাজে বিশ্বাস করে না। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম এ জব্বাবের আরেক প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ সড়কগুলোতে এখন ৪০-৪২ টনের ট্রাক চলাচল করে। এ জন্য সড়কের অবস্থা ভয়াবহ হচ্ছে। তবে এলজিইডিকে ব্যবস্থা নিতে হবে গ্রামকে গ্রামের মতো রাখার।
এনজিওর জন্য নতুন আইন: এনজিও কার্যক্রমে জড়িত অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-২০১১-এর প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
আজ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে মো. ইসরাফিল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সংসদকার্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
মন্ত্রী বলেন, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো ‘দ্য ফরেন ডোনেশন (ভলেন্টারি অ্যাক্টিভিটিস) রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৮’-এর সংশোধন ও এর সঙ্গে ‘দ্য ফরেন কনট্রিবিউশন (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’ একত্র করে নতুন আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রস্তাব বেড়েছে: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী জানান, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট তিন লাখ ৬৫ হাজার ২৪১ দশমিক ৮৮৫ মিলিয়ন টাকার বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। মোট ৩৭টি দেশ থেকে এ বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে বলেও জানান মন্ত্রী।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
কাজী লিয়াকত আলী। বয়স ৪০। স্থায়ী নিবাস মানিকগঞ্জের হরিরামপুর। অস্থায়ী আবাস রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন রোড। এটুকু পরিচয় হয়তো লিয়াকতকে দেশজুড়ে পরিচিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা (আত্মহত্যা) লিয়াকতকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। লিয়াকতের পরিবারের দাবি, আত্মহত্যার কারণ ‘শেয়ারবাজার’।
প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন শেয়ারবাজার তথা বাজারের উত্থান-পতন লিয়াকতের আত্মহত্যার কারণ হলো? উত্তরটা হলো, লিয়াকত ছিলেন এই বাজারের একজন বিনিয়োগকারী। নিজের সঞ্চয় ও ধারের টাকা এনে তিনি বাজারে খাটিয়েছেন। ভেবেছিলেন, শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করবেন। আর সে টাকা দিয়ে নিজেদের, বিশেষত ছোট্ট মেয়ে কাজী মনীষার জীবনের সচ্ছলতা নিশ্চিত করবেন। কিন্তু সেটি আর হলো কই? জীবন থেকে নিজে তো পালিয়ে গেলেন লিয়াকত। মনীষার সামনে রেখে গেলেন অনিশ্চিত ও অসহায় এক জীবন।
গত বুধবার লিয়াকতের বাসায় গিয়ে জানা গেল, মনীষার স্কুলে যাওয়া আপাতত বন্ধ। পরিবারের সবাই এখন লিয়াকতের মৃত্যশোকে মূহ্যমান। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো শক্তিটুকুও হারিয়েছেন লিয়াকতের স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী তাহমিনা আকতার। মৃত্যুর খবরে আগত অতিথিরাই এখন পরিবারটির দেখভাল করছেন।
বাবা নেই, এই সত্যের গভীর উপলব্ধির বয়স এখনো হয়নি মনীষার। তাই এখনো স্বভাব চঞ্চলতায় সে ঘরের মধ্যে একা একাই দৌড়ঝাঁপ করে বেড়ায়। দরজা খোলার আগমনী সংকেতে (কলবেল) ছুটে আসে দ্বারে। বাবার ঘরে ফেরার আকুলতা চোখে।
বাবার হাত ধরেই রোজ স্কুলে যাওয়া-আসা করত সাড়ে চার বছরের মনীষা। আত্মহত্যার দিন সকালেও মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসেছিলেন লিয়াকত। সেটাই শেষ বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়া ওর। লিয়াকতের শাশুড়ি মমতাজ বেগম জানান, ‘প্রতিদিনের মতো গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি, ২০১২) সকালেও মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যায় লিয়াকত। এরপর বাসায় ফিরে আসে। তবে মনীষাকে স্কুল থেকে আনার সময় হলে আমাকে পাঠাল। বলল, তার কী যেন জরুরি কাজ আছে। সে জন্য বাইরে যাবে। তাই মনীষাকে আনতে স্কুলে যেতে পারবে না।’ কিন্তু মনীষাকে নিয়ে বাসায় ফিরেই মমতাজ বুঝতে পারলেন লিয়াকতের জরুরি কাজটা কী। মনীষার বাবার নিথর দেহটি যে ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে গলায় দঁড়ি দেওয়া অবস্থায় ঝুলছিল!
লিয়াকতের বাসা থেকে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দূরত্ব সামান্যই। সেই বাজারেরই আলাদা দুটি ব্রোকারেজ হাউসের দুটি বিও হিসাবের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন লিয়াকত। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ঋণ ও নিজের পুঁজি মিলিয়ে শেয়ারবাজারে লিয়াকতের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল এক কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে নিজের ছিল ৭৮ লাখ টাকা। বাকিটা ঋণ। টানা দরপতনে লিয়াকত ৬১ লাখ টাকা পুঁজি খুঁইয়েছেন। আত্মহত্যা করার দিনের হিসাব এটি।
ফুলেফেঁপে ওঠা সময়ে নয়, ২০১১ সালের শেষার্ধে লিয়াকত এই বিনিয়োগ করেন যখন বাজারের মূল্যসূচক ছয় হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। আবার লিয়াকতের পত্রকোষ বা পোর্টফোলিওর যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, তাঁর কেনা বেশির ভাগ শেয়ারই ছিল ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন তার পরও কেন লিয়াকতকে এই বিরাট লোকসানের মুখে পড়তে হলো?
শেয়ারবাজার সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, লোকসানের জন্য লিয়াকতের দায় যতটুকু তার চেয়ে বেশি দায় বাজার নিয়ন্ত্রকদের। কারণ তাঁরা বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারেননি। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ বাজারের অস্থিরতা জিইয়ে রেখেছে। তাঁদের অদূরদর্শিতা ও কর্মকাণ্ড বাজারকে অস্বাভাবিক এক উচ্চতায় টেনে তুলেছিল, তাঁদের কথাবার্তা ও পদক্ষেপ লাখ লাখ মানুষকে প্রলুব্ধ করেছিল এই বাজারে ছুটে আসার জন্য।
অস্বাভাবিক উচ্চতা থেকে বাজারের পতনটা অনিবার্য ছিল। কিন্তু সেই পতনের বেলায়ও বাজারের ওপর চলল নানা হস্তক্ষেপ। তাতে স্বাভাবিক পতন বা সংশোধনের চেয়ে অস্বাভাবিকতা দেখা দিল। কিছুদিন পরপরই পতন ঠেকানোর নামে এলোমেলো পদক্ষেপ নিয়ে আরও পতন অনিবার্য করা হলো।
বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই প্রায়ই বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সঠিক সময়ে ভালো শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে লোকসানের ঝুঁকি কম। লিয়াকতের পরিবার হয়তো এখন প্রশ্ন করতে পারে, ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও কেন লিয়াকতকে এতটা লোকসানের মুখে পড়তে হলো? জানা গেছে, লিয়াকত প্রতিদিন লেনদেন করতেন না। তার মানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের চিন্তা থেকেই এই বাজারে এসেছিলেন। কেনাবেচার পরিবর্তে শেয়ার ধরে রেখেছিলেন লাভের আশায়।
হ্যাঁ, লিয়াকতের একটি বড় ভুল ছিল, তিনি ধারদেনার টাকা এনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। শেয়ারবাজার এ রকম ধারদেনা করে বিনিয়োগের জায়গা নয়। এটি জানা-বোঝার বিনিয়োগের একটি জায়গা। আবার শেয়ারবাজারে জেনে-বুঝে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লাভের সম্ভাবনা যেমন থাকে তেমনি লোকসানের ঝুঁকিও কম নয়। তবে উপযুক্ত সময়ে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের পরামর্শটি ঠিকই আছে। সমস্যা হলো, একটি স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ বাজারের অভাব। এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নীতি-নির্ধারক ও বাজার পরিচালকদের।
আবার এ কথাও ঠিক যে আমাদের শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীরা অনেক সময়ই যৌক্তিক আচরণ করেন না। এ দায় বিনিয়োগকারীদের মেনে নেওয়া উচিত। লোকসান দিয়েই তাঁরা তাদের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়ে থাকেন। কিন্তু নীতি-নির্ধারক বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের ব্যর্থতার দায় কতটা মেনে নেয়?
আমাদের বিনিয়োগকারীদের আচরণ যেমন বিশ্বের সুশৃঙ্খল কোনো শেয়ারবাজারের সঙ্গে তুলনা করা যায় না, ঠিক তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা নীতি-নির্ধারকদের আচরণেরও কি তুলনা চলে? বিশ্বের কোনো দেশের শেয়ারবাজারে কি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হয়? বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কিছু হলেই মন্ত্রীর কাছে ছুটতে হয়? শেয়ারবাজার কি রাজনীতির ময়দানে পরিণত হয়? অথচ সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রায়ই বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারের উদাহরণ দেন। সেই আলোকে নীতি-সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা তাদের করা উচিৎ।
বিনিয়োগকারীর আচরণ যেমন তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে নীতি-নির্ধারক—কারও আচরণই বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সঙ্গে মেলে না। আর মেলে না বলেই এ দেশে শেয়ারবাজারে মৌলিক কাঠামোর কোনো সূত্রই কাজ করে না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলোও খুব কাজে লাগে না। আর তাই নীতি-নির্ধারক থেকে বিনিয়োগকারী সবারই দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার পরিবর্তন দরকার। তা না হলে বাজারের বড় খেলোয়াড়রা বড় পুঁজির প্রভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বোকা শুধু বানাবে না, পুঁজি হারিয়ে হাহাকার করার দিকে ঠেলে দেবে।
শেয়ারবাজার নিয়ে লিয়াকতের জ্ঞান কতটুকু তা অজানা থেকে গেল। এখন শুধু জানা গেল, মনীষা পিতৃহীন হয়েছে। তবে যে কাজটি লিয়াকত করলেন তা কখনো সমর্থন করা যায় না। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকেও মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। সব হারিয়েও নতুন করে জীবন সাজায়। সেই তুলনায় লিয়াকত তো শুধু টাকা হারিয়েছেন। আর সবই তো তাঁর ছিল। সাড়ে চার বছরের ফুটফুটে এক কন্যাশিশু, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন—সবই। আর একেকটি জীবন মানে তো একেকটি আলাদা জগৎ। এতগুলো জগৎ থাকতে শুধু অর্থের জন্য জীবন থেকে পালিয়ে গিয়ে লিয়াকত কি সত্যি পালাতে পারলেন? এই দুঃসহ স্মৃতির ভার মনীষাসহ পরিজন যে আজীবন বয়ে বেড়াবে, তা থেকে তিনি তাঁদের কীভাবে মুক্ত করবেন?
আরও যাঁরা এই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের অনুরোধ করব, লিয়াকতের মতো চিন্তা ভুলেও করবেন না। জীবন অনেক বেশি মূল্যবান। সংগ্রাম করে শত দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকতে পারাটাই জীবনের বড় সার্থকতা। নিজের পরিবার-পরিজনের প্রিয় মুখগুলোকে বারবার মনে করুন। তাঁদের দিকে তাকিয়ে জীবনের সার্থকতার স্বাদটুকু ফেলে কিছু অর্থের জন্য জীবনকে ব্যর্থ করে দেবেন না।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
শিক্ষক একজন, শিক্ষার্থী দুই শতাধিক!
--------------------------------------------------------------------------------
নান্দাইল সংবাদদাতা
বাংলানিউজটোয়েন্ট ফোর.কম
নান্দাইল (ময়মনসিংহ): শিক্ষক একজন, শিক্ষার্থী দুই শতাধিক! ভাবতেই অবাক লাগে। এমনই দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নের চরকমর ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিগত ২ বছর ধরে বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক একাই পুরো বিদ্যালয়ের ধকল সামলাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষক ছিলেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে ২ শিক্ষক দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষা অফিস ম্যানেজ করে সুবিধাজনক স্কুলে চলে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে দিন দিন ঝরে যাচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
একমাত্র শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসে মাসিক সমন্বয় সভা ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজে চলে গেলে স্কুল চালান চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক রহিমা আক্তার (৩৬)।
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা করে কেটে নিয়ে দেওয়া হয় রহিমার সম্মানী ভাতা।
বুধবার সরজমিনে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে আসেনি একমাত্র সহকারী শিক্ষক মাহবুবুর রহমান। ফলে বহিরাগত শিক্ষক রহিমা আক্তার (৩৬) দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর হট্টগোল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসে ৪২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৬ জন উপস্থিত। তাদের কাছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম জানতে চাইলে কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বাংলানিউজকে জানান, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অভাব থাকায় আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসে ৩৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত। তাদের দেশের রাষ্ট্রপতির নাম জিজ্ঞেস করলে এক নম্বর রোলধারী তাওহিদা আক্তার জানায়, এরশাদ। ৪ নম্বর রোলধারী আফজাল হোসেন সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন এরশাদ নয়, আরেক জন। তবে রাষ্ট্রপতি কে তা সে বলতে পারেনি।
পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাসে ১৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত রয়েছে ৮ জন। ওই ক্লাসে জাতির জনকের নাম বলতে পারেনি কেউ। একাত্তরে কার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল প্রশ্ন করা হলে ৪ নম্বর রোলধারী সুমী আক্তার উত্তর দেয় জিয়াউর রহমান।
উপজেলার চরকমর ভাঙ্গা গ্রামের জয়নাল আবেদিন মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, ‘এটা আমাদের ছেলেমেয়েদের ভাগ্যের দোষ। শিক্ষকরা এ বিদ্যালয়ে কিছুদিন থাকার পর অন্য বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে চলে যায়। ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে আসে আর যায়।’
চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক রহিমা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ‘এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বিবেকের তাড়নায় বিদ্যালয়ে যাচ্ছি।’
সহকারী শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ১ম শ্রেণীতে ৮০, ২য় শ্রেণীতে ৬০, ৩য় শ্রেণীতে ৪২, ৪র্থ শ্রেণীতে ৩৬ এবং ৫ম শ্রেণীতে ১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আতাউল মজিদ বাংলানিউজকে জানান, ১৯৭৩ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ে ১ জন শিক্ষক রয়েছে।
মাঝেমধ্যে ডেপুটেশনে একজন আসেন আবার কীভাবে যেন চলেও যান।
বিষয়টি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।
এদিকে, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ এমদাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, শিগগিরই ওই বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে একজন শিক্ষক দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কেটে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের বেতন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পাশে বসা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিও) মাকসুদা বেগম উত্তেজিত হয়ে এর প্রতিবাদ জানান।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
সরকারি স্কুলবিহীন ইউনিয়ন
--------------------------------------------------------------------------------
হাতিয়া সংবাদদাতা
বাংলানিউজটোয়েন্ট ফোর.কম
হাতিয়া (নোয়াখালী): শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের সরকারি-বেসরকারি নিরন্তর চেষ্টা কোনো কাজেই আসেনি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে।
প্রাথমিক শিক্ষার হাতে খড়ি দেয় যে সরকারি প্রতিষ্ঠান তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি এ দ্বীপ ইউনিয়নে। ফলে মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই ইউনিয়নের ১০ হাজার শিশু।
হাতিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দে বাংলানিউজকে জানান, নিঝুম দ্বীপে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় কয়েক হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
ওই ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়নে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।
কোনো স্কুল না থাকা প্রসঙ্গে হাতিয়া উপজেলার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম বাংলানিউজকে জানান, বারবার সংসদে এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করা হলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ওয়ালিউল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি স্কুল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ওই ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় ২৮ হজার মানুষ স্বাস্থসেবা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসা র্কমর্কতা (আরএমপি) নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ওই ইউনিয়নে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন জরুরি।
প্রসঙ্গত, সরকারি হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের জনসংখ্যা ২৮ হাজার। এ বিশাল জনসংখ্যার জন্য এ ইউনিয়নে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও নেই।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
eta pore choke pani atkate parlam na...Allah amader shobaike vhalo kechu korar, other shahajjo korar toufiq dan korun...ameen!
------------------------------------------------------------------------- বাপ-মা থাকলে ইসকুলে যাইতাম’
--------------------------------------------------------------------------------
ইসমাইল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্ট ফোর.কম
ছবি : শোয়েব মিখুন/ বাংলানিউজটোয়েন্ট ফোর.কম
ঢাকা: ‘বাপ-মা থাকলে ইসকুলে যাইতাম। স্কুলে যাইতে তো আমগোও ইচ্ছা করে’। কথাটা স্বাধীন এই বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ এক নাগরিকের। নাম তার মানিক। দেশের নাগরিক হিসেবে পাওনা একটি মৌলিক অধিকারও যার জোটেনি। উল্টো মানিক-রতনদের দারিদ্রের বোঝা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে মিরপুর মাজারের মতো এলাকাগুলোতে।
‘মানিক-রতন’। যেন একই বৃন্তের দুটি তাজা ফুল। কিন্তু সব ফুলই শেষমেষ প্রস্ফুটিত হয়ে সুবাস ছড়াতে পারে না চারপাশে। কিছু ফুলেরা অযত্নেই নষ্ট হয়ে যায়। লোকচক্ষুর আড়ালে এক একটা জীবন হয়ে যায় এক একটি গল্প। সেই গল্পে থাকে না রাজা-গজা কিংবা ডালিমকুমারের গল্প, সেই জীবনের গল্প মানেই নষ্ট হওয়ার গল্প।
না এই মানিক রতন আদতে কোনো ফুল নয়। এই মানিক-রতন হলো মিরপুর মাজার নিবাসী দুই মানব সন্তান। রাতের ঢাকায় সঙবাদ সংগ্রহ করার অভিযানে মাঝে মধ্যে অনেক কিছুই দেখা যায়। সেই অনেক কিছুর দেখার মাঝে দেখা মেলে আলোকচিত্রের দুই মানিক রতনের। রাস্তায় বেড়ে ওঠা অনাথ সন্তান ওরা। শৈশবে পেরোনোর আগেই তাদের নাম উঠে গেছে বাউন্ডুলের খাতায়। মাজারের পীর ভক্তদের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়েই চলে ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা। আর যেটুকু টাকা বাকি থাকে সেই অর্থ দিয়ে চলে শারিরীক কষ্ট নিবারণ তা বোধ লোপ করার জন্য মাদক সেবন। কখনও বা ওই সর্বগ্রাসী মাদকের যোগান দিতে পা বাড়াতে হয় নষ্ট জগতে।
মিরপুর এক নম্বরের মাজারে মানিক-রতনের মতো পরিবার-পরিজনহীন অর্ধশতাধিক শিশুর আনাগোনা থাকে সব সময়। অধিকাংশের বাবা-মায়ের যেমন পরিচয় নেই, তেমনি দিন-রাত এদের কাছে বিশেষ পার্থক্য সৃষ্টি করে না।
শিক্ষা বঞ্চিত এসব শিশুর যে বয়সে বাবা-মায়ের স্নেহে বেড়ে ওঠার কথা, সেই বয়সে তারা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে।
শনিবার তখন মাঝরাত। প্রায় আড়াইটার দিকে মিরপুর ১ নম্বরের পাশে মাজারের সামনে ৭/৮টি শিশুকে আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখতে পেলাম। মাজারের গেট ও মাজার মার্কেটের বারান্দায় শীর্ণ দেহে জীর্ণ বস্ত্র জড়িয়ে শুয়ে আছে আরো ২৫/৩০ জন। এদের বয়স ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। কেউ এক জনের মাথার ধারে অথবা কারও গায়ে পা দিয়েই শুয়ে পড়েছে তারা।
এমনি একজনের নাম শাহীন। পিতৃ-মাতৃহীন শাহীনের বাড়ি ময়মনসিংহে। তার কণ্ঠেই ফুটে ওঠে তার একান্ত নিজের কথা। ‘আল্লাহ দেন...’ বইলা দিনের বেলা মাজারে বইসা থাকি বলেই জানায় আমাদের।
বাবা-মা কেউ নেই নারায়নগঞ্জের মিরাজের (১০)। চার বছর থেকে এখানে আছে সে। কিছু সময় মিরপুর কাচা বাজারে সবজি কুড়িয়ে বিক্রি করে, আর কিছু সময় বন্ধুদের সাথে মাজার কেন্দ্রিক কিছু টাকা আয় হয় তার।
বরিশালের রাব্বি (১১) দিনের বেলা ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করে। তার বাবা নেই, মা ঝিয়ের কাজ করে। কিন্তু সে থাকে বন্ধুদের সাথে মাজারে।
এরকম বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছিন্নমুল শিশুরা এসে ভিড় জমায় মিরপুরের এই মাজারে। কিছু এনজজিও এদের নিয়ে কাজ করলেও বৃহৎঅর্থেই তারা অবহেলিত। রাষ্ট্রের তরফ থেকে নেই তাদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্তা।
মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত এসব শিশু। ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া কাচা টাকা দিয়ে রাতের বেলা দল বেধে নেশা করতে তারা এখন অভ্যস্ত। তাদের কাছে দল বেধে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন সুদূর পরাহত।
মাজারের গেটে ছয় বছর থেকে আছেন যশোরের সদর থানার রাবেয়া খাতুন (৪৫)। স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় তিনি চলে আসেন মাজারে। রাতের বেলা শোবার পাটি ভাড়া দেন প্রতিটি ২০ টাকা দরে।
মাজারে শ’খানেক শিশু ভিক্ষা করে। তারা তামাক, বিড়ি, ড্যান্ডি সেবন করে। অনেকে ছোট-খাট চুরির ঘটনাও ঘটায়।
এই মানিক রতনেরাই হতে পারতো আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন কারিগর। কিন্তু নেশা, হাতাশা, দারিদ্রতা, রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা সবকিছুর দায়ে চেপেছে তাদের ওই ছোটো কাধে। আজ তাদের কাধে শুধুই দারিদ্রের বোঝা। রতনদের চোখে আর তারা জ্বলে উঠে না।
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
A journalist couple was killed at their West Rajabazar residence in the city early Saturday.
Sagar Sarwar, a news editor of private TV channel Maasranga Television, was slaughtered while his wife Meherun Runi, a senior reporter of ATN Bangla, stabbed to death, said Harunur Rashid, additional deputy commissioner (Tejgaon zone).
Their five-year old son Mahi Sarwar Megh, who was sleeping at an adjacent room, found his parents lying in a pool of blood on the floor of their bedroom when he woke up in the morning.
Mahi informed his grandmother about the killings over telephone around 6:30am, Runi’s mother told The Daily Star.
real people, real stories ! reading users' comments, seems like Singaporean people are in the dark when it comes to foreign labor force discrimination and exploitation.