‘ক্রিকেট-জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন’
চোটের কারণে দলে নেই, তবে বাইরে থেকেও ছিলেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের আনন্দ উদ্যাপনের মাঝেই খবর পেলেন জিতেছেন নামী ক্রিকেট ম্যাগাজিন ‘উইজডেন ক্রিকেটার’-এর বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের স্বীকৃতি। নিজের অর্জন, মাঠের বাইরে থেকে দেখা দলের জয় নিয়ে কাল কথা বললেন তামিম ইকবাল
বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের পরপরই আপনার এমন স্বীকৃতি, কেমন লাগল জানার পর?
তামিম ইকবাল: এই অনুভূতি ব্যাখ্যা করার ভাষা আমার জানা নেই। আমরা সিরিজ জয়ের পর অনেকক্ষণ মজাটজা করার পর যখন ফিরে যাচ্ছি, তখনই পেলাম খবরটা। আনন্দ যেন আকাশ ছুঁতে চাইল। নিঃসন্দেহে আমার ক্রিকেট-জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। সবচেয়ে ভালো লাগছে, টানা দুবার দুজন বাংলাদেশি এই স্বীকৃতি পেল।
একটু আফসোস হচ্ছে না, এমন একটা সিরিজে খেলতে পারলেন না?
তামিম: এক মুহূর্তের জন্যও মনে করি না আমি দলের বাইরে আছি। মাঠে হয়তো খেলছি না, কিন্তু মন তো দলের সঙ্গেই আছে। আমি নিজেকে এই সিরিজ-জয়ী দলের অংশই মনে করছি। আফসোসের কিছু নেই। কেবল তো শুরু হলো, এমন সিরিজ আমরা আরও জিতব।
কাল পুরো সময় ড্রেসিংরুমে ছিলেন?
তামিম: হ্যাঁ, একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এই সিরিজে মাঠের বাইরে থেকে আমি অনুভব করতে পেরেছি গ্যালারিতে দর্শকদের কেমন লাগে, ড্রেসিংরুমে কর্মকর্তাদের কেমন লাগে। মাঠে থাকলে এক রকম, বাইরে থাকলে আরেক রকম। কী যে উত্তেজনা, কী যে টেনশন!
উত্তেজনার বশে আবার চোট পাওয়া হাত কোথাও মেরে বসেননি তো!
তামিম: নাহ্, সেদিকে সতর্ক আছি। হাত এখন অনেক ভালো। দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। এত দিন শুধু পায়ের এক্সারসাইজগুলো করছিলাম, আজ থেকে হাতের এক্সারসাইজও করছি। ব্যথা অনুভব করছি না। আশা করি, জিম্বাবুয়ে সিরিজে পুরো ফিট হয়েই নামতে পারব।
বাইরে থেকে দেখে দলের কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে?
তামিম: একটা ইউনিট হিসেবে খেলা। আগে হয়তো আমি সেঞ্চুরি করতাম, শাহরিয়ার নাফীস বা সাকিব করত, কিন্তু এখন দল কারও একার ওপর নির্ভর করছে না। সবাই যার যার জায়গা থেকে সেরাটা দিচ্ছে। শচীন টেন্ডুলকার বা ব্রায়ান লারারা হয়তো একটা দলকে টানতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন অনেকের সমন্বিত অবদান। এই সিরিজে যেটা দেখেছি।
এ বছর একসময় টেস্ট রানের দিক থেকে সবার ওপরে ছিলেন, এখন আপনার চেয়ে বেশি টেস্ট খেলে ছাড়িয়ে গেছে তিনজন। আফসোস হচ্ছে না!
তামিম: ভীষণ আফসোস হচ্ছে। বছরে সবচেয়ে বেশি রান কার, এটা ব্যাপার না। কিন্তু এক বছরে হাজার রান করা প্রথম বাংলাদেশি হতে পারতাম আমি। শচীন-শেবাগ নয়টা করে খেলেছে, ট্রট দশটা। আর আমি সাতটা। দুটো টেস্ট বেশি খেলা মানে চারটা ইনিংস। যেমন ফর্মে ছিলাম, চার ইনিংসে বাকি দেড় শ রান হয়তো অনায়াসেই করতে পারতাম। আফসোস তো হবেই। সত্যি বলতে নিউজিল্যান্ড সিরিজে যদি টেস্ট থাকত তাহলে এখনই অস্ত্রোপচার করাতাম না। যা হোক, সুযোগ নিশ্চয়ই আরও আসবে।
যে মেয়াদকালের হিসেবে স্বীকৃতিটা পেলেন, সে সময়ের মাঝে সেরা ইনিংস কোনটাকে বলবেন?
তামিম: ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বললে ওল্ড ট্রাফোর্ডের সেঞ্চুরিটা। কারণ বছরের ওই সময় ওল্ড ট্রাফোর্ডের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন উইকেটগুলোর একটি। তবে লর্ডসের ইনিংসটার সঙ্গে অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে। আমার বাবা খুব ইতিহাসপ্রিয় ছিলেন। ইতিহাস গড়ার ব্যাপারগুলো তাঁর খুব ভালো লাগত। ওই সেঞ্চুরিটা তাই ছিল বাবার জন্য।
আপনি সব সময়ই বলেন, আইসিসির কোনো অ্যাওয়ার্ড পাওয়া আপনার স্বপ্ন...
তামিম: হ্যাঁ, বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার একটা পুরস্কার আমি পেতে চাই। তবে এখন পর্যন্ত উইজডেন ক্রিকেটারের এই স্বীকৃতিটাই আমার সেরা অর্জন।