জাতিসংঘের মিশনে কেক কাটলেন ২১ মুক্তিযোদ্ধা
জাতিসংঘের মিশনে কেক কাটলেন ২১ মুক্তিযোদ্ধা, মধ্যমণি হুমায়ূন
কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্ িফোর.কম
নিউইয়র্ক : বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এবারের অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বসবাসরত ২১ মুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটা হয়। এ ঘটনা বাংলাদেশ মিশনের ইতিহাসে প্রথম।
অপরদিকে, নিউইয়র্কে চিকিৎসারত জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ অনুষ্ঠানে এসে তাঁর আঁকা দুটি ছবি বাংলাদেশ মিশন ও কন্স্যুলেটকে প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত মধ্য সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে আসার পর এটাই তার প্রথম প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
বাংলাদেশ মিশনের এ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের চলতি সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট নাসের আবদুল আজিজ আল নাসের, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও মহাসচিবের চিফ অব স্টাফ বিজয় নাম্বিয়ার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতিসংঘে ১৯৪ সদস্য রাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত ‘পিআর সংস্থা’র প্রেসিডেন্ট বীরগনিম আইটিমভা, সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্টের সিনিয়র স্পেশাল অ্যাডভাইজার রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রোজমেরী এ ডিকার্লোসহ দেড় শতাধিক দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রবাসীরাও উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটা হয় দু’দফায়। প্রথমে কাটেন নাসের আবদুল আজিজ আল নাসের এবং দ্বিতীয় পর্বে কাটেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক এবং জাতিসংঘ কর্মকর্তারা অবাক বিস্ময়ে একাত্তরের গেরিলাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
অনেকে মেতে উঠেন করতালিতে। পাকিস্তান মিশনের কূটনীতিকরাও ছিলেন সেখানে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এই প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে নিয়ে কেক কাটা হলো।
রাষ্ট্রদূত ড. একেএ মোমেন অনুষ্ঠানে আগত সকলকে স্বাগত জানান। এ সময় বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোমেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী তাদের দেশের নাগরিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানোর জন্যে।
দীর্ঘ ৪১ বছর পর হলেও বিষয়টি স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদ সস্ত্রীক অনুষ্ঠানস্থলে এলে সকলের মধ্যমণিতে পরিণত হন লেখক দম্পতি। নারী-পুরুষ প্রায় সকলেই তার কাছে যান এবং চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। এ সময় ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান মিস অ্যাসেক্স হুমায়ূনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি উঠান।
মিস অ্যাসেক্স শাড়ি পড়ে বাঙালি বেশে অংশ নেন এ অনুষ্ঠানে। তাকে সেখানে এনেছিলেন তার বাঙালি বান্ধবী মিস লাকী। দুদিন আগে গ্রামীণ বাংলাদেশের চিত্র এঁকেছেন হুমায়ূন আহমেদ। সেই চিত্র হস্তান্তর করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ড. মোমেনের কাছে। নিজের আঁকা আরেকটি চিত্র প্রদান করেন কন্সাল জেনারেল সাব্বির আহমেদ চৌধুরীর কাছে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে হুমায়ূন আহমেদকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটার প্রাক্কালে নাসের আবদুল আজিজ এবং বিজয় নাম্বিয়া তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের সামগ্রিক অগ্রগতির বিষয়টি এখন বিশ্বের অনেক দেশের কাছে মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে।’
মহাসচিবের বাণী পাঠ করেন বিজয় নাম্বিয়ার। সে বাণীতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন দর্শন হিসেবে দিক নির্দেশনামূলক ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ মিশন এবং বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের যৌথ উদ্যোগের এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘ স্বাধীনতার জন্য যে জাতি ৩০ লাখ জীবন দিতে পারে- সে জাতি একদিন বিশ্বজয় করবেই।’ তিনি বলেন, ‘বাঙালির চেতনার উন্মেষ সব সঙ্কটে আগ্নেয়গিরির সুপ্ত লাভার মতো বিকশিত হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনেও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। তাদের স্বাগত জানান রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের চৌধুরী।
এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদসহ শীর্ষ কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
__________________
jitsi jitsi jitsi
|