October 11, 2009, 04:11 PM
|
Banned
|
|
Join Date: September 29, 2007
Posts: 17
|
|
বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে নতুন আসা শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
বাংলাদেশ থেকে লন্ডনের কলেজগুলোতে আগত নতুন শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দিন-দিন বেড়েই চলেছে। নগরীর পথে-পথে দিনের পর পর দিন ঘোরাঘুরি করে ন্যুনতম মুজুরীর বিনিময়েও একটি কাজ না পেয়ে অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন। অসমর্থিত এক খবরে প্রকাশ, পূর্ব লন্ডনের ইস্টহ্যাম এলাকাতে বাসরত এক ছাত্র চরম হতাশায় নিম্মজিত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
ইউকেবেঙ্গলির এই প্রতিবেদকদের সাথে গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে নিয়মিতভাবে কথাবার্তা হচ্ছে পূর্ব লন্ডনের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে। আলাপের বিভিন্ন পর্যায়ের বহু শিক্ষার্থীই জানান লন্ডন নগরী তাদের জন্য এখন দুঃস্বপ্ন; এমন খারাপ পরিস্থিতির (পড়ুনঃ http://portal.ukbengali.com/?q=node/302) মুখোমুখি হতে হবে জানলে দেশেই অবস্থান করতেন।
নোয়াখালী থেকে আসা নুরুল আজিম(২১) নামের এক শিক্ষার্থী জানালেন জব সেন্টারে প্রতিদিনই খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কাজের আশায়, কিন্তু কিছুতেই একটা কাজের সন্ধান মিলছেনা। কলেজের পড়া-লেখার মান দেখেও তিনি খুব ভেঙ্গে পড়েছেন। হতাশ আজিম বলেন, এত টাকা খরচ করে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের চেয়েও খারাপ মানের কলেজে পড়তে আসার কোন মানে খুঁজে পাচ্ছিনা। দুর্ভোগের কথা দেশে জানানোর পর আজিমের পরিবারের সবাই হতাশ হয়ে আছেন। ঢাকার ফুয়াদ হাসান (১৯) বিলেত এসেছেন জুলাই মাসের ১৮ তারিখ। বাবা-মায়ের এক মাত্র সন্তান হওয়ায় তাকে নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এখন পর্যন্ত কোনো কাজের সন্ধান পাননি ফুয়াদ। যে-পরিমাণ অর্থ-কড়ি নিয়ে এসেছিলেন, তা এখন একেবারে তলানীতে। বাঙালী এক শিক্ষক তাকে কিছুদিন ধরে খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। ফুয়াদ বলেন, "প্রতিদিন এভাবে একজনকে বিরক্ত করতে লজ্জা লাগে। বাবা-মা বলছেন দেশে ফিরে যেতে। আর কিছুদিন দেখে দেশে ফেরত যাব বলে মনে হচ্ছে। তবে কলেজ থেকে টিউশন ফি ফেরত যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের মধ্যে আছেন ফুয়াদ।
শুনা যাচ্ছে, কঠিন বাস্তবতার মধ্যে টিকে থাকতে না পেরে দেশে ফিরে যেতেও শুরু করেছেন কেউ-কেউ। দু'একটি ট্রাভেল এজেন্সীর কাছ থেকেও এ-সংবাদের পক্ষে তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা থেকে আসা সালাউদ্দিন আহমেদ(৩২) নামে এক শিক্ষার্থী জানান, যেসব কথা শুনে লন্ডনে এসেছিলেন তার কিছুই এখন মিলছে না। বহুজাতিক কোম্পানির চাকুরি ছেড়ে দিয়ে সালাউদ্দিন লন্ডনে এসেছিলেন। কিন্তু ভয়াবহ বিরুপ পরিস্থিতির মুখে তিনি দেশে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কলেজের কাছ থেকে টিউশন ফি ফেরত পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, কলেজ কিছুতেই টাকা ফেরত দিতে প্রস্তুত নয়। ঝামেলায় না জড়িয়ে দেশে ফেরত যাওয়াটা এখন সালাউদ্দিনের মূল লক্ষ্য।
মূলত পূর্ব লন্ডনের কলেজগুলোতে ভর্তি হয়ে লন্ডনে আসার ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা কম হলেও তাদের দুর্ভোগের মাত্রা কম নয়। আর সব কিছু বাদ দিলে থাকার জায়গার সমস্যাটিকে বিবেচনাতে ধরলে মেয়েদের সমস্যা অনেক বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, এত দুর্ভোগের কথা বাংলাদেশে জানলে অনেকে অনেক কথা বলবেন। দয়া করে আমাদের বিপদে ফেলবেন না। ইউকেবেঙ্গলির সাথে আলাপকালে অনেক শিক্ষার্থী জানান বিলেতে ছাত্র পাঠানোর ব্যবসা করা বাংলাদেশের স্টুডেন্ট রিক্রুটমেন্ট এজেন্সীগুলোর ব্যাপারে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলাপে জানা যায়, অনেক ঢাকাতে কোন-কোন এজেন্সী স্টুডেন্ট ভিসা যোগাড় করে দেয়ার কথা বলে একেক জনের কাছ থেকে ১০-১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কন্ট্রাক ভিসার নাম করে। এ-প্রসঙ্গে চট্টগামের শাখাওয়াত বলেন, কিছু দালাল নিশ্চিত ভিসার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। হাফিজুর রহমান নামের এক লোককে ভিসার ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে দাবী করেন শাখাওয়াত।
এদিকে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক ট্রায়াল শিফট এর কথা বলে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা কাজ করিয়ে বলেন পছন্দ হয়নি। এভাবেই কোন-কোন রেস্টুরেন্ট মালিক বিনা-পয়সাতে বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্রদের খাটিয়ে নিচ্ছেন। জুন্নুরাইন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন সেন্ট্রাল লন্ডনে এক পাকিস্তানী রেস্টুরেন্টে দুই দিন কাজ করার পর মালিক জানান তিনি এ-কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। ট্রায়াল শিফটে কোন মুজুরী হয়না বলে পাকিস্তানী মালিকটি খালি হাতে বিদায় করে দেন জিন্নুরাইনকে।
চরম অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে বসে থাকা এক দল শিক্ষার্থীর মধ্যে তাজুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেকদিন হয়ে গেল কাজ খুঁজে পাচ্ছিনা। বাংলাদেশ থেকে ৪০০ পাউন্ড নিয়ে এসেছিলাম এক মাসের খরচ হিসাব করে। এখন বন্ধুদের কাছে টাকা ধার করে খরচ চালাতে হচ্ছে। হতাশ কন্ঠে তিনি বলেন, সামনে মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া কোন পথ নেই। দেশে ফিরে কিছু করবো সেটাও চিন্তা করতে পারছিনা। বাবার সব সঞ্চয় খরচ করে লন্ডনে আসা। এখন সব কিছু অন্য রকম হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন সুযোগ পেয়ে বাঙালী পাড়ার অনেক জব-সেন্টারই কমিশনের অঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউকেবেঙ্গলির পক্ষ হতে নতুন আসা শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, প্রেসক্লাব এ ব্যাপারে এখনও তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহন করেন নি। তবে এখনকার পত্রিকাগুলোতে প্রতিনিয়ত এ-ব্যাপারে সংবাদ ছাপা হচ্ছে। আহমদ মনে করেন বাঙালী কমিউনিটিতে যারা স্বচ্ছল তারা যদি নিজেদের সন্তানদের বাংলা পড়ানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেন তাহলে কিছুটা সাহায্য হতে পারে।
|