নট ফ্রম ঘানা, বাংলাদেশেরই জনপ্রিয় নায়ক অনন্ত। যিনি নিজে খান বাংলাদেশের খাবার। যিনি মনে করেন, বাংলা সিনেমাকে ইউটার্ন করিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজে। তাঁর হাই বাজেট সিনেমার কারণেই আজকের তরুণ-তরুণীরা সিনেমা হলে যাওয়া শুরু করেছে। তাঁর সিনেমার টিকিট পাওয়াও দুষ্কর। ঈদ উপলক্ষে সেই অ্যাকশন হিরো এবার এসেছেন রস+আলোয়। কথা বলেছেন নানা বিষয়ে। সঙ্গে ছিলেন সিমু নাসের
পত্রিকায় দেখেছিলাম, আপনি হেলিকপ্টারে করে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন সিরাজগঞ্জে। এত কিছু থাকতে হেলিকপ্টার কেন? মানুষকে ভড়কে দিতে না কি?
হা হা হা। হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করতে যাওয়া এইটা কিন্তু নতুন নয়। মানুষ এক্সসেপশনাল কিছু করতে চায়। আর আমরা যারা হিরো, তারা অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো, স্বপ্নের মানুষ। স্বপ্নের মানুষ স্বপ্নের মতোই কাজ-কারবার করবে, এটাই তারা চায়। তাদের সেই ফিলিংসটা দিতেই হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম।
আপনার কোনটা প্রিয়। গ্রীষ্ম নাকি বর্ষা?
গ্রীষ্মে গরম আর বর্ষায় বৃষ্টি। দুইটাই ঝামেলার। বাট বর্ষাকে বিয়ের পর এখন বর্ষাকেই বেশি ভালো লাগে।
আপনার গায়ের রং তো অনেক সুন্দর। এত পরিশ্রম করে এটা মেইনটেন করেন কীভাবে? কী কী ব্যবহার করেন?
যখন অভিনয় করতাম না, তখন ভোর ছয়টায় উঠে সংসদ ভবনে দৌড়াতাম। এখন সাতটায় ঘুম থেকে উঠি। আমার নিজেরই জিম আছে অনেক আগে থেকে। সেখানে জিম করি। সামনের ছবিতে দর্শকেরা আমাকে সিক্স প্যাক হিসেবে দেখতে পাবে। এ জন্য খাওয়া-দাওয়াও কন্ট্রোল করছি। সকালে চারটা ডিম খাই। কুসুম ফেলে দিয়ে শুধু সাদা অংশটা। তারপর হালকা গরম লেবুপানিতে অল্প মধু দিয়ে খাই। দুপুরে ভেজিটেবল স্যুপ আর সালাদ। আর রাতে ফলের রস, কখনো কখনো চিকেন গ্রিল খাই।
টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আপনার ‘আর ইউ ফ্রম গানা?’ তো এখন লোকের মুখে মুখে। এই বিষয়ে কিছু বলবেন?
আমি একজন এডুকেটেড লোক। আন-এডুকেটেড নই। আসলে আমরা অনেক কিছু না বুঝেই মজা করি। মজা করতে সমস্যা নেই। কিন্তু একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো, ওই দেশটার উচ্চারণ কিন্তু আসলে গানাই। এমনকি ঘানার লোকেরাও তাদের উচ্চারণে তাদের দেশটাকে ‘গানা’ বলেই ডাকে।
তা হলে ‘ম্যানসিসটার’?
আমি ঠিকই উচ্চারণ করেছি। হয়তোবা শুনতে ওই রকম শোনা গেছে। কারও যদি লিসেনিং পাওয়ার কম থাকে, তা হলে অনেক ভুল শুনতে পারে। একই কথা আপনি সামনাসামনি একরকম শুনবেন, ফোনে আরেক রকম শুনবেন, সিনেমায় আরেক রকম শুনবেন, টেলিভিশনে আরেক রকম। আমি অশিক্ষিত নই যে এসব উচ্চারণ আমি জানব না। আর একটা কথা কী, ১০০টা লোকের মধ্যে পাঁচজন একটু উল্টাপাল্টা কথা বলবেই। আমি জোর গলায় বলছি, রিয়েলি আই ডোন্ট বদার।
আপনি যদি আপনার কোনো ছবি দেশের বাইরে মুক্তি দেন, তবে প্রথমেই কোন দেশে মুক্তি দেবেন? ঘানা, ভারত, নাকি আমেরিকা?
আমার ছবি তো বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছেই। বিদেশে বাঙালিরা সেসব ছবি দেখে অনেক প্রশংসা করেছে।
আপনার ছবির লোকেশন তো অনেক সুন্দর। এ পর্যন্ত কোন কোন দেশে শুটিং করেছেন?
এ পর্যন্ত থাইল্যান্ড, ভারত, ভারতের রামুজি ফিল্ম সিটি, মালয়েশিয়া ও আমেরিকায় শুটিং করেছি।
পরবর্তী ছবির জন্য ঘানায় যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
না, সে রকম কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। পরবর্তী ছবির জন্য সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি। সেখানে অনেক সুন্দর লোকেশন আছে। আমাদের ছবি দেখে যাতে সবাই বলতে পারে, বিদেশ মানেই আমরা শুধু পাতায়া বিচে যাই না।
আপনি নিজে কখনো কি ঘানায় গিয়েছেন?
না, এখনো যাইনি।
তা হলে এত দেশ থাকতে আপনি ঘানার নাম কেন বললেন? বিশেষ কোনো দুর্বলতা আছে এই দেশ নিয়ে?
আসলে হয়েছে কী, সেদিন যে ছেলেটা রেস্টুরেন্টে বলেছিল, ‘দেখ দেখ বাংলা সিনেমার নায়ক’ সেই ছেলেটা ছিল শুকনা আর গায়ের রং কালো। দেখে মনে হচ্ছিল, সে আফ্রিকার কেউ। সে জন্যই আসলে ঘানার কথা মাথায় এসেছিল। পরে আমি তাকে বলেছিলাম, স্টিল ইউ আর চাইল্ড। তোমার ভবিষ্যৎ কী তুমি জান না। কিন্তু আমি জানি, আমি কী। আর না, আমার ব্যক্তিগত কোনো দুর্বলতা নেই ঘানা নিয়ে।
আপনার ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে অনেকে মজা করছে ফেসবুক, ব্লগে। আপনার উচ্চারণ...
মজা করতে সমস্যা নেই। তবে একটা কথা কী, এই দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই উচ্চারণে সমস্যা আছে। এটাকে আসলে সমস্যাও বলব না। যেমন হুমায়ূন আহমেদ, উনার উচ্চারণে পুরোটাই ময়মনসিংহের টান ছিল, আমাদের আগের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান উনারও একই ব্যাপার ছিল। তাই বলে তো উনারা ছোট হয়ে যাননি। মজা করলেই কেউ ছোট হয়ে যায় না। বেশির ভাগ সময়ই মানুষ যাকে ভালোবাসে, তাকে নিয়েই মজা করে। আমার বাংলাতে একটু সমস্যা আছে, আমি স্বীকার করি। কিন্তু আমি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছি, আমি যে বিজনেস করি সেখানে সারা দিন ইংরেজিতে কথা বলতে হয়। আমি জানি, কোনটা কী উচ্চারণ করতে হয়। আমি অশিক্ষিত নই।
চারদিকে আপনার এখন অনেক ভক্ত। তাদের বেশির ভাগই কোন ধরনের? ইংলিশ মিডিয়াম?
ভক্তের তো কোনো অভাব নেই। যেখানেই যাই খালি ভক্ত। বাংলাদেশে এমন কোনো এডুকেটেড ফ্যামিলি পাওয়া যাবে না, যেখানে আমার ভক্ত নেই। সেদিন সোনারগাঁও হোটেলে গেছি। একজন বিদেশি এসেও আমার সঙ্গে পরিচিত হলো, ছবি তুলল। তরুণ-তরুণীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে যেখানেই যাচ্ছি। ওয়েবসাইটে আমাদের ছবির রিভিউ করছে ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েরা।
কেন তারা আপনার ভক্ত বলে মনে হয়? কী কারণে? তারা আপনার কী পছন্দ করে বলে মনে হয়? অভিনয়, অ্যাকশন নাকি কথা?
আপনার ভেতর কোয়ালিটি থাকলে সবাই আপনার ভক্ত হবে। আর একেকজন একেকটার জন্য ভক্ত। কেউ আমার চেহারা দেখে, কেউ অভিনয় দেখে, কেউ অ্যাকশন দেখে। সেদিন শুনলাম একজন বলছে, আমাকে নাকি বাইরের হিরোদের মতো লাগে।
প্রচলিত আছে আমাদের সিনেমার দর্শক যারা, তারা পর্দায় স্লিম ফিগারের নায়িকা দেখতে চায় না। কিন্তু আপনার সিনেমায় দেখা যায় স্লিম ফিগারের নায়িকাদের। এটা কী ভেবে করলেন?
আসলে সারা পৃথিবীতেই কোথাও বাল্কি মেয়েকে নায়িকা হিসেবে দর্শকেরা পছন্দ করে না। কিন্তু আমাদের দেশের দর্শক যারা ছিল, তারা হয়তোবা সেটা পছন্দ করত। কিন্তু আমার টার্গেট ইয়াংরা। যারা এডুকেটেড তাদের জন্য আমি ছবি বানাই। তারা টিভির পর্দায় হিন্দি ছবি দেখে অভ্যস্ত। সেসব ছবিতে স্লিম ফিগারের মেয়েরাই নায়িকা হয়। তারা নাচলেও তাই ভালো লাগে। সেই ভালো লাগাটাই আমাদের সিনেমায় দিতে চাই আমি।
আপনার নিজের বাড়ি কোথায়? সেখানকার লোকজন কি আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করে? কী বলে তারা?
আমার বাড়ি ঢাকাতেই, তবে যদি দাদার বাড়ি বলেন তবে মুন্সিগঞ্জ। সেখানকার লোকেরা অনেক আগে থেকেই, মানে আমি সিনেমার হিরো হওয়ার আগে থেকেই আমাকে, আমার পরিবারকে নিয়ে গর্ব করে। আমরা বড় বিজনেসম্যান, এলাকায় আমাদের পরিবারের অনেক সমাজসেবামূলক কাজ আছে, সেগুলো নিয়ে সবাই গর্ব করে। বরং আমি নায়ক হওয়ার পর তারা একটু চিন্তিত যে এতে আমার ব্যবসার না ক্ষতি হয়ে যায়।
সিনেমায় আপনার ঠোঁট অনেক লাল দেখা যায়। লিপস্টিক ব্যবহার করেন না কি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে?
না, আমি কখনো ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহার করি না অভিনয়ের সময়। এফডিসিতে এক মেকআপম্যান একবার লিপস্টিক দিয়েছিল, তাকে বের করে দিয়েছিলাম। আমি ছোটবেলা থেকেই সিগারেট খাই না, তাই আমার ঠোঁট এমনিতেই গোলাপি।
আপনি বলেছেন শাকিব খান আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী নন। কাকে তা হলে আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?
অবশ্যই শাকিব আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। সে আমার প্রত্যেকটি ছবি হলে গিয়ে দেখে। সে আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে এ কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। দেশে আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যদি প্রতিদ্বন্দ্বীর কথা বলতে হয়, তবে হলিউডের টম ক্রুজই হলো আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী।
অভিনয়ের প্রতি আপনার এই তৃষ্ণা কোথা থেকে এল?
বিদেশে যখন থাকতাম, তখন উইকএন্ডে হলে গিয়ে ইংরেজি আর হিন্দি সিনেমা দেখতাম। তখন মনে হতো, আহা যদি বাংলা সিনেমাও এখানে চলত। সেই থেকেই ভাবতাম, দেশে এসে সিনেমা বানাব ইন্টারন্যাশনাল মানের।
বাংলা সিনেমাকে আপনি কোথায় দেখতে চান? অস্কারে কি আপনার ছবি নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে?
আপাতত আমি বাংলা সিনেমাকে ভালো মানের হিন্দি সিনেমার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিয়ে যেতে চাই। ইন্ডিয়ার মতো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চাই। আর অস্কার নিয়ে যেটা বললেন সেটা হলো দিবাস্বপ্ন, এখন বাংলা সিনেমার এই অবস্থায় অস্কারের স্বপ্ন হলো ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আমি এখন দেখতে চাই না।
আপনি এক রেস্টুরেন্টে এক ছেলেকে প্রশ্ন করেছিলেন, ইউ মিন বাংলা ছবির হিরো আন-এডুকেটেড? আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি একটু বলতেন—
আমি ও লেভেল আর এ লেভেল করেছি ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে। এরপর ম্যানচেস্টারে যাই, সেখানে বিবিএ এবং ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ি।
অবসর সময়ে কোথায় আড্ডা দেন?
মরা ছাড়া তো অবসর নেই। অফিস-বাসা-শুটিং এই হলো আমার অবসর। তবে বর্ষাকে নিয়ে সোনারগাঁও, র্যা ডিসন, কেএফসি এসব বড় হোটেল, রেস্টুরেন্টে মাঝেমধ্যেই যাওয়া পড়ে।
বর্ষার সঙ্গে সংসার কেমন চলছে? বর্ষার কোন জিনিসটা খুব ভালো?
সিনেমা করার আগে থেকেই কিন্তু বর্ষার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। অনেকে ভাবে, আমি হিরো হওয়ার পর। আসলে কিন্তু তা নয়। তখন থেকেই প্রেম, পরে বিয়ে। আমরা দুজন খুব ভালো আছি। আর বর্ষার একটা জিনিস খুব ভালো, সেটা হলো সে আরগুমেন্ট কম করে। কথা শোনে। তার কথা হলো, এত বড় একজন লোকের সঙ্গে আছি, এটা ভাগ্যের ব্যাপার।
আপনার ভক্ত-দর্শক, রস+আলোর পাঠকদের উদ্দেশে কি কিছু বলতে চান?
আপনারা যেখান থেকেই আসেন না কেন, মানে আপনি গানা থেকে আসেন, আপনার মা রাশিয়া থেকে আসুক, যাই হোক না কেন, ইউ আর ইটিং ফুড ফ্রম বাংলাদেশ। আসুন সবাই মিলে মজা করি, মজা করে বাংলা সিনেমা করি। আমার একটাই প্রমিজ—আমি নিরাশ করব না আপনাদের। ভালো ভালো ছবি উপহার দেব আপনাদের।
http://www.prothom-alo.com/detail/da...22/news/299879
Respect.