February 6, 2010, 05:04 AM
|
|
Cricket Legend ICC WT20 2016 Fantasy Winner
|
|
Join Date: March 8, 2008
Location: BanglaCricket.com
Favorite Player: Mashrafe Mortaza
Posts: 5,236
|
|
Mashrafe's ball ended his career!
নেপিয়ার থেকে মাসুদ পারভেজ
মাশরাফির বলে শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার
স্লেজিং কী জিনিস, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে তাঁর অভিষেকের দিনেই। নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের হয়ে ওপেন করতে নামা গ্র্যান্ট রবিনসনকে ত্যক্ত-বিরক্ত করেই ছেড়েছিলেন অকল্যান্ডের আন্দ্রে অ্যাডামস-কাইল মিলসরা। এর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ক্রিকেট মাঠেই একটি দুর্ঘটনার শিকার রবিনসনকে ওই দুই ফাস্ট বোলার ক্রমাগত বলে যাচ্ছিলেন, 'বল তোমার গায়েই মারতে যাচ্ছি। আমি মাশরাফির চেয়েও জোরে বল করি।' এতটুকু পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এই গ্র্যান্ট রবিনসনটা আবার কে?
আপনার দোষ নেই। এই নামে যে কোনো ক্রিকেটার আছেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের মিডিয়া ম্যানেজার মাইকেল হেনস্টকও তো জানতেন না! অনেক খোঁজাখুঁজির পর হ্যামিল্টনে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের রিসেপশনে পাওয়া গেল তাঁর ই-মেইল ঠিকানা। এই সূত্র ধরে যোগাযোগের পর জানা গেল, তিনি হ্যামিল্টনেই থাকেন। ২০০৮ সালের আগস্টে ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার পর থেকে পুরোদস্তুর ব্যাংকার। ২০০৫ সালে ওয়াইকাটো ইউনিভার্সিটি থেকে ফিন্যান্সে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে অনার্স পাস করায় চাকরি পেতেও সুবিধা হয়েছে। ওয়েস্টপ্যাক ব্যাংকে ঢুকে গেছেন বিজনেস অ্যানালিস্ট হিসেবে। গত বুধবার হ্যামিল্টনের ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, এক গ্রাহককে নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত তিনি। তাঁকে বিদায় করার পর বললেন, 'এই ভদ্রলোকের ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। আমার এ রকম ৫০ জন গ্রাহক আছে। আমরা তাঁদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করছি।'
অখ্যাত এ ক্রিকেটারের নিজের ক্রিকেট জীবনেও আছে এ রকম ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা। এর সঙ্গে যে মাশরাফি বিন মর্তুজার একটা যোগসূত্র আছে, নেল-মিলসের স্লেজিং থেকেই তা কিছুটা বুঝতে পারার কথা। ২০০১ সালের ৭ ডিসেম্বর সফরকারী বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের ওপেনার ছিলেন এই রবিনসন। সেদিন সকালে মুখোমুখি হওয়া ২২তম বলটি যেন তাঁর জীবনে এক বিভীষিকাই নামিয়ে এনেছিল। মাশরাফির বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন। হেলমেটের উপরিভাগ ও গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বল আঘাত হানে তাঁর বাঁ চোখের কোনায়। রক্তঝরা সেই মুহূর্তটার কথা ভেবে এখনো শিউরে ওঠেন রবিনসন, 'দুর্ভাগ্য যে ওই সময়টায় আমার জ্ঞান ছিল। দেখছিলাম যে আমার রক্তে উইকেট ভেসে যাচ্ছে।'
সেখান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে পামারস্টন নর্থের এক হাসপাতালে যাওয়ার পথে চেতন আর অচেতনের মাঝামাঝি অবস্থায়ই ছিলেন। হাসপাতালে আট ঘণ্টার জটিল এক অস্ত্রোপচারের পর বাঁচানো গিয়েছিল তাঁর দৃষ্টিশক্তি, 'আসলে আমার নাক ও চোখের ওপরের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে মাথার খুলিতেও ফাটল ধরেছিল। ডাক্তাররা আমার মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও করেছিলেন। আট ঘণ্টার অপারেশনে তাঁরা আমার মস্তিষ্কে গিয়ে বসে থাকা খুলির হাড়ের ছোট টুকরোগুলোও বের করেছিলেন। এখন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারাটাই তো আমার সৌভাগ্য।'
বেঁচে আছেন ওই ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় কৃত্রিম অনেক উপাদান নিয়েই, 'আমার চোখ বাঁচাতে আটটি প্লেট ও ২০টি স্ক্রু লাগাতে হয়েছে। সেলাই পড়েছে ৪২টি।' টিভি নিউজিল্যান্ডে নিয়মিত প্রচারিত বিখ্যাত হেরিটেজ হোটেলের বিজ্ঞাপনের এ সুদর্শন মডেলকে দেখে অবশ্য তা একদমই বোঝা যায় না। খুব কাছ থেকে দেখলে অবশ্য ভিন্ন কথা। বলছিলেন, 'অপারেশনের তিন-চার দিন পরও বাঁ চোখে আমি কিছু দেখছিলাম না। পুরো দৃষ্টিশক্তি ফিরতেও সপ্তাহখানেক লেগেছে।' অথচ ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পর, ২৭ ডিসেম্বর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে খেলতে নেমেছিলেন কোন সাহসে? 'এটাই ক্রিকেট। ব্যাটসম্যান হিসেবে ফাস্ট বোলারদের খেলায় ঝুঁকি থাকবেই। একটু ভুল হয়ে গেলে কখনো কখনো খুব খারাপ অবস্থা হয়। যেমনটা আমার হয়েছিল। তাই বলে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার লোক আমি ছিলাম না।'
তাই তখনো ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়ানো রবিনসন নেমে গিয়েছিলেন ফার্স্ট ক্লাস খেলতে, 'তখনো আমার কপালটা বেশ ফুলে ছিল। হেলমেটও মাথায় ঢোকাতে পারছিলাম না। পরে হেলমেটের ভেতরের প্যাড-ট্যাড খুলে তবেই পরেছিলাম। এরপর ব্যাটিংয়ের সময় অ্যাডামসরা এমন বিরক্ত করছিল যে ওটা আমার অনেক বড় এক মানসিক লড়াই ছিল।' অবশ্য তাকে শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখি করার জন্য মাশরাফির প্রতি কোনো রাগ-ক্ষোভ-অভিমান নেই এ মাসের শেষেই প্রেমিকা এনাকে বিয়ে করতে যাওয়া রবিনসনের, '২০০৭ সালের সফরেও মাশরাফির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের হয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের পর ও আবার আমার কাছে ক্ষমা চাইল। কিন্তু এতে তো ওর কোনো দোষ ছিল না।' ২০০১ সালেও হাসপাতালে রবিনসনকে দেখতে গিয়েছিলেন জ্বরের কারণে নিউজিল্যান্ড সফরে আসতে না পারা মাশরাফি, 'ম্যানেজারকে নিয়ে হাসপাতালে আসা মাশরাফি হয়তো আমার চেহারা বিকৃত হয়ে যায় কি না, তা নিয়েই বেশি আতঙ্কিত ছিল। তখনই বলেছিলাম, ওর প্রতি কোনো অভিযোগ নেই আমার। আশা করব, ওর মধ্যেও এ নিয়ে এখন আর কোনো অপরাধবোধ নেই। ও আমাকে সই করা বাংলাদেশ টিমের একটা জার্সি দিয়েছিল। যেটা আমি এখনো যত্নে রেখে দিয়েছি।'
এখনো আগ্রহ ভরে খোঁজ-খবর রাখেন মাশরাফিরও, 'আমার পক্ষ থেকে ওকে হ্যালো বলবেন প্লিজ। ওর পায়েও তো অনেকবার অপারেশন হয়ে গেল। তার বাকি ক্যারিয়ারের জন্য আমার শুভ কামনা রইল। আট-নয় বছর ধরেই আগ্রহের সঙ্গে আমি ওর খোঁজ-খবর রাখছি। আমি ওকে জানাতে চাই, ওই দুর্ঘটনায় আমাকে ভুগতে হয়নি। বরং মানুষকে বলার মতো দারুণ এক গল্পই হয়ে গেছে এটা।'
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। যে গল্পে অনুপ্রাণিত হতে পারেন আবারও মাঠে ফেরার অপেক্ষায় থাকা মাশরাফিও।
|