facebook Twitter RSS Feed YouTube StumbleUpon

Home | Forum | Chat | Tours | Articles | Pictures | News | Tools | History | Tourism | Search

 
 


Go Back   BanglaCricket Forum > Miscellaneous > Forget Cricket

Forget Cricket Talk about anything [within Board Rules, of course :) ]

Reply
 
Thread Tools Display Modes
  #1  
Old February 17, 2006, 10:21 AM
Shafin's Avatar
Shafin Shafin is offline
Cricket Legend
 
Join Date: January 31, 2006
Location: Vagabond
Posts: 3,016
Default বাংলা গল্প এবং কবিতার সুতা

এই সুতাটা বাংলা গল্প ও কবিতা পোস্ট করার জন্য।আপনার সংগ্রহে কোন বাংলা গল্প,কবিতা থাকলে এখানে পোস্ট করুন।যদি আপনি নিজে টাইপ করে পোস্ট করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই।
বাংলা হতে ইংরেজি অনুবাদও এখানে পোস্ট করুন।
মডারেটরদের কাছে একটি প্রশ্ন,যেসব বই এর কপিরাইট এখনো আছে,সেগুলো কি পোস্ট করা যাবে?তবে আমি যা পোস্ট করছি,তার কোনটাই এখন আর কপিরাইটেড না।
শুরু করছি নজরুলের বিদ্রোহী দিয়ে,নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ বাংলা কবিতা।

বিদ্রোহী
-কাজী নজরুল ইসলাম


বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
বল মহা বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির উন্নত শির।

আমি চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধুর্জট, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্র্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর-
চির- উন্নত মম শির!

আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি
আমি পথ সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি।
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দিই তিন দোল।
আমি চপলা চপলে হিন্দোল।

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে মন যা,
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর!
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার, আমি উষ্ঞ চির-অধির!
বল বীর-
চির- উন্নত মম শির!

আমি চির-দুরন্ত দুর্মদ,
আমি দুর্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম্ হ্যায় হর্দম ভরপুর-মদ।
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক, জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান!
আমি ইন্দ্রাণী-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য,
মম একহাতে আঁকা বাঁশের বাঁসরি, আর হাতে রণ-তূর্য।
আমি কৃষ্ঞ-কন্ঠ, মন্থন বিষ পিয়া ব্যথা-বারিধির!
আমি ব্যোমকেশ, ধরি’ বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর-
চির উন্নত মম শির!

আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্নিশ।
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষানে ওঙ্কার’
আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দণ্ড,
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বমিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল দাহ, দহন করিব বিশ্ব!
আমি প্রাণখোলা হাসি উল্লাস, -আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি মহা প্রলয়ের দ্বাদস রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, -কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী।
আমি উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল-দোল!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী, চির-গৃহহারার যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখণ,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা, তার কাঁকন চুড়ির কন্ কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচল কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেনু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর, ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি।
আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!

আমি উথ্বান, আমি পতন, আমি অচিতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয় কেতন।
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ-মর্ত্য করতলে,
তাজি বোররাক্ আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে!
আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল।
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চারি ভূমিকম্প।
ধরি বাসুকির ফণা জাপটি’,-
ধরি স্বগীর্য় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’!
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব মায়ের অঞ্চল!

আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্,
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝঝুম্
মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরি।
আমি রুষে উঠে’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল-ধ্বংস-ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ঞু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধুমকেতু-জ্বালা, বিষধর কলা-ফণী!
আমি ছিন্নমন্তা চণ্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজয় অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগতীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ পাতাল-মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি চিনেছি আমারে আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধা!!-
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্তি উদার!
আমি হল বলরাম-স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে!

মহা- বিদ্রোহী রণ-কাল্ত,
আমি সেইদিন সব শান্ত,
যবে উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন;
আমি স্রষ্টা-সুদন; শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।

আমি চির-বিদ্রোহী-বীর-
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!

কলিকাতা - মাঘ, ১৩২৮ [অগ্নিবীণা] সৌজন্যঃ নজরুল রচনাবলী (পৃঃ ৭-১০), ১ম খন্ড, বাংলা একাডেমী, ঢাকা ১৯৯৬।


English translation

The Rebel (Bidrohi)

Kazi Nazrul Islam

Translation: Rezaul Karim Talukdar

=========================


Proclaim Hero-
Proclaim: My head is held towering
Bows down the Himalayan peak, that at looking.
Say Hero-
Say: Tearing the firmament of the universe
Outstripping the Moon, the Sun and the Stars
Piercing the Earth and the celestial spheres
Penetrating through the Almighty's sacred throne
Risen have I, the wonder eternal of the God's universe.
With the mark of majestic might
The angry God on my forehead blazing bright!
Say Hero-
Say: My head is held ever towering!


I am irrepressible, imperious and brutal
I am the dancing lord of the great upheaval.
I am the cyclone, the devastation tremendous
I am terrible fear and the curse of the universe
I am turbulent, I crash everything
Wild I am, I trample under my feet all rules and binding.
I obey no law, but mine
I cause the loaded boats to capsize
I am torpedo, I am the dreadful floating mine.
I am the God Dhurjati-
The ill timed hair disheveled typhoon of disaster,
I am The Rebel the rebellious son of the global mother.
Say Hero-
Ever towering is my head!


I am the hurricane, I am the whirlwind
I smash everything on my path and leave behind.
I am the dance-insane rhythm
I dance on, with my own beat
I am the heart liberated wit.
I am the different musical modes
I rock, I roll, on move I startle
I whistle and swing on sharp notes.
I do whatever this mind wants whenever
I embrace the enemy and fight the death as a warrior.
I am pestilence, the global terror
I am the death of the dictator
I am warm and restless forever.
Say Hero-
Ever high is my head!


I am wine intoxicating
The glass of my heart is ever filled
With the wine sparkling.
I am the flame of the sacrificial fire
I am the God of fire, who keeps it burning.
I am the sacrifice, I am the priest, I am the fire.
I am creation, I am devastation
I am habitation, I am the ground of cremation.
I am the son of Indrani - the queen of the heaven
The Moon on my arm and the Sun on my forehead have risen.
In one hand of mine is the flute tender
The war bugle I hold in the other.
I am the Black-throated
Having the poison churned up from the weeping sea
I am the lord Bomkesh
I hold the bridle of the Ganges-stream with me.
Say Hero-
Ever towering is my head!


I am a saint, a soldier of music
I am the prince in disguise
With the dress of a hermit-mystic.
I am a Bedouin, a Chengis the brute
It is none, but me, I salute.
I am thunder
From the God 'Iswan's pipe, I am the mystic 'Omker'
Alas! from the bugle of 'Israfil', I am the roar danger.
I am Bishyamitra's disciple, Durbasha the furious
I am the fury of forest fire
I will burn to ashes this universe.
I am the heart opening laughter
I am the great anti-creation terror
I am the Eclipse of the twelve Suns of the final disaster.
Seldom I am quiet
Seldom restless and wild, I am the blood-youth
I snatch the God's pride.
I am the breath of typhoon, the ocean's roaring rave
I am radiant and flashing
I am the murmur of stream, the swing of music of the wave.


I am the unbraided hair of a virgin
The flame of her arresting gaze
I am the tender heart's love of a lotus sixteen.
I am the unconcerned mind of the indifferent
I am the sigh in the widow's heart, rending constant.
I am the accumulated anguish of all the homeless sufferers
The agony of the humiliated hearts
I am the bitter sorrows of the estranged lovers.
I am the distressed cry of a heart rending
I am the first touch of a virgin trembling
I am the heart throb of a passionate kiss stolen
I am the secret lady-love's glance twinkle
Her bashful sidelong look
I am the love of a maiden fickle
Her bracelet's sweet jingle.
I am the eternal child, the everlasting youth
I am the scarf of a village maid, afraid of her budding youth.
I am the Northern breeze-
From the Malabar range the mode 'Purabi' unconcern
I am the deep notes from a bamboo flute of a poet pedestrian.
I am the great summer thirst, I am the blazing Sun's furies
I am the murmuring desert spring-
I am the chiaroscuro of an oasis.
I rush forth as a crazy with bursting laughter
Oh! I know myself today, all the barriers are broken forever.


I am the rise, I am the fall, I am the consciousness in the soul unconscious
I am the triumphal flag of humanity, over the arch of the universe.
I rush like the clapping storm, holding the heaven and earth in hands
The flying horse and the horse of 'Indra'-the King God are my mounts


I am the volcano in the bosom of earth, the submarine fire
The fire of the universal annihilation
I am the under-earth drunk on tumultuous sea of fire.
Riding on the lightning, I fly with the joy profound
I instill panic and cause sudden earthquake in the world around.


I catch hold the hood of 'Basuki' the snake-king
I clasp the heavenly angel Gabriel's fiery wing.


I am a heavenly child, I am restless, I am impudent
I tear with my teeth the Mother-earth's garment.
I am the flute of Orpheus
I cause the heaving sea sleepy
With a kiss of sleep, I send the world in drowse.
I am in bondage of the tune of flute
I am the God Krishna's flute.
When I fly across the space with great anger
The trembling seventh hell, extinguishes in fear
I carry the revolt in the world all over.

I am the monsoon rain-flood of erosion
Sometime I fill the earth with adoration
Sometime I cause the awful destruction.
I will snatch the twin girls
From the bosom of God 'Vishnu' who sustains the creation.
I am injustice, I am meteor, I am the Saturn
I am the burning Comet, the venomous hood of annihilation.
I am the goddess 'Chandi' with the severed head
I am the war-loving cause of the dead.
Sitting in the hell of fire
I smile the smile of a flower.


I am earthly, I am spiritual
I am ageless, undecaying and immortal.
I am the terror of men, Gods and monsters
I am the invincible power of this universe.
I am the lord of the lords, 'Vishnu' the Supreme Being.
Frantically I move around the heaven the hades and the earth churning.
[**Two lines here from the original Bangla text seems to have been omitted here in the translation by the translator.; i.e. "I am mad, I am mad !!! / I now know myself and all my shackles and constraints have evaporated !!"**]


I am the battleaxe of God 'Parshuram'
I shall exterminate the warriors
And bring the noble peace to this universe.
I am the plough on the shoulders of 'Balaram'
I shall uproot the subject-world with ease
In the new creation of joy and peace.
I the Great Rebel, shall be quiet on that day
When the oppressed people's wail on the sky and air will not resound
The tyrant's dreadful sword will not flash on the battle ground
I, the Rebel, tired of battle, shall be quiet on that day.

I am a Rebel 'Vrigu'-
I mark my footprint on the chest of the creator God
I shall cut open the heart of the grief inflicting whimsical lord.
I am the Hero, Rebel – eternal -
Rose above the universe alone
My head is ever Monumental.


another one

The Rebel (Bidrohi)

Kazi Nazrul Islam

Translation: Kabir Chowdhury

=========================

Say, Valiant,
Say: High is my head!

Looking at my head
Is cast down the great Himalayan peak!
Say, Valiant,
Say: Ripping apart the wide sky of the universe,
Leaving behind the moon, the sun, the planets
and the stars
Piercing the earth and the heavens,
Pushing through Almighty's sacred seat
Have I risen,
I, the perennial wonder of mother-earth!
The angry God shines on my forehead
Like some royal victory's gorgeous emblem.
Say, Valiant,
Ever high is my head!

I am irresponsible, cruel and arrogant,
I an the king of the great upheaval,
I am cyclone, I am destruction,
I am the great fear, the curse of the universe.
I have no mercy,
I grind all to pieces.
I am disorderly and lawless,
I trample under my feet all rules and discipline!
I am Durjati, I am the sudden tempest of ultimate summer,
I am the rebel, the rebel-son of mother-earth!
Say, Valiant,
Ever high is my head!

I am the hurricane, I am the cyclone
I destroy all that I found in the path!
I am the dance-intoxicated rhythm,
I dance at my own pleasure,
I am the unfettered joy of life!
I am Hambeer, I am Chhayanata, I am Hindole,
I am ever restless,
I caper and dance as I move!
I do whatever appeals to me, whenever I like,
I embrace the enemy and wrestle with death,
I am mad. I am the tornado!
I am pestilence, the great fear,
I am the death of all reigns of terror,
I am full of a warm restlessness for ever!
Say, Valiant,
Ever high is my head!

I am creation, I am destruction,
I am habitation, I am the grave-yard,
I am the end, the end of night!
I am the son of Indrani
With the moon in my head
And the sun on my temple
In one hand of mine is the tender flute
While in the other I hold the war bugle!
I am the Bedouin, I am the Chengis,
I salute none but me!
I am thunder,
I am Brahma's sound in the sky and on the earth,
I am the mighty roar of Israfil's bugle,
I am the great trident of Pinakpani,
I am the staff of the king of truth,
I am the Chakra and the great Shanka,
I am the mighty primordial shout!
I am Bishyamitra's pupil, Durbasha the furious,
I am the fury of the wild fire,
I burn to ashes this universe!
I am the gay laughter of the generous heart,
I am the enemy of creation, the mighty terror!
I am the eclipse of the twelve suns,
I herald the final destruction!
Sometimes I am quiet and serene,
I am in a frenzy at other times,
I am the new youth of dawn,
I crush under my feet the vain glory of the Almighty!

I am the fury of typhoon,
I am the tumultuous roar of the ocean,
I am ever effluent and bright,
I trippingly flow like the gaily warbling brook.
I am the maiden's dark glassy hair,
I am the spark of fire in her blazing eyes.
I am the tender love that lies
In the sixteen year old's heart,
I am the happy beyond measure!
I am the pining soul of the lovesick,
I am the bitter tears in the widow's heart,
i am the piteous sighs of the unlucky!
I am the pain and sorrow of all homeless sufferers,
i am the anguish of the insulted heart,
I am the burning pain and the madness of the jilted lover!

I am the unutterable grief,
I am the trembling first touch of the virgin,
I am the throbbing tenderness of her first stolen kiss.
I am the fleeting glace of the veiled beloved,
I am her constant surreptitious gaze.
I am the gay gripping young girl's love,
I am the jingling music of her bangles!
I am the eternal-child, the adolescent of all times,
I am the shy village maiden frightened by her own budding youth.
I am the soothing breeze of the south,
I am the pensive gale of the east.
I am the deep solemn song sung by the wondering bard,
I am the soft music played on his lyre!
I am the harsh unquenched mid-day thirst,
I am the fierce blazing sun,
I am the softly trilling desert spring,
I am the cool shadowy greenery!
Maddened with an intense joy I rush onward,
I am insane! I am insane!
Suddenly I have come to know myself,
All the false barriers have crumbled today!
I am the rising, I am the fall,
I am consciousness in the unconscious soul,
I am the flag of triumph at the gate of the world,
I am the glorious sign of man's victory,
Clapping my hands in exultation I rush like the hurricane,
Traversing the earth and the sky.
The mighty Borrak is the horse I ride.
It neighs impatiently, drunk with delight!
I am the burning volcano in the bosom of the earth,
I am the wild fire of the woods,
I am Hell's mad terrific sea of wrath!
I ride on the wings of the lightning with joy and profound,
I scatter misery and fear all around,
I bring earth-quakes on this world!

I am Orpheus's flute,
I bring sleep to the fevered world,
I make the heaving hells temple in fear and die.
I carry the message of revolt to the earth and the sky!
I am the mighty flood,
Sometimes I make the earth rich and fertile,
At another times I cause colossal damage.
I snatch from Bishnu's bosom the two girls!
I am injustice, I am the shooting star,
I am Saturn, I am the fire of the comet,
I am the poisonous asp!
I am Chandi the headless, I am ruinous Warlord,
Sitting in the burning pit of Hell
I smile as the innocent flower!
I am the cruel axe of Parsurama,
I shall kill warriors
And bring peace and harmony in the universe!
I am the plough on the shoulders of Balarama,
I shall uproot this miserable earth effortlessly and with ease,
And create a new universe of joy and peace.
Weary of struggles, I, the great rebel,
Shall rest in quiet only when I find
The sky and the air free of the piteous groans of the oppressed.
Only when the battle fields are cleared of jingling bloody sabres
Shall I, weary of struggles, rest in quiet,
I the great rebel.

I am the rebel eternal,
I raise my head beyond this world,
High, ever erect and alone!







Edited on, February 17, 2006, 3:31 PM GMT, by Shark_fin.

Edited on, February 17, 2006, 3:32 PM GMT, by reverse_swing.
Reason: mod.content: Title size fixed.


Edited on, February 17, 2006, 3:37 PM GMT, by Nasif.
Reason: Tag fixed
Reply With Quote

  #2  
Old February 17, 2006, 10:45 AM
Shafin's Avatar
Shafin Shafin is offline
Cricket Legend
 
Join Date: January 31, 2006
Location: Vagabond
Posts: 3,016

[bangla]

সুকুমার রায়ের হযবরল

বেজায় গরম। গাছতলায় দিব্যি ছায়ার মধ্যে চুপচাপ শুয়ে আছি, তবু ঘেমে অস্থির। ঘাসের উপর রুমালটা ছিল, ঘাম মুছবার জন্য যেই সেটা তুলতে গিয়েছি অমনি রুমালটা বলল ``ম্যাও!'' কি আপদ! রুমালটা ম্যাও করে কেন?

চেয়ে দেখি রুমাল তো আর রুমাল নেই, দিব্যি মোটা-সোটা লাল টক্‌টকে একটা বেড়াল গোঁফ ফুলিয়ে প্যাট্ প্যাট্ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

আমি বললাম, ``কি মুশকিল! ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বেড়াল।''

অমনি বেড়ালটা বলে উঠল, ``মুশকিল অবার কি? ছিল একটা ডিম, হয়ে গেল দিব্যি একটা প্যাঁক্‌পেঁকে হাঁস। এ তো হামেশাই হচ্ছে।''

আমি খানিক ভেবে বললাম, ``তা হলে তোমায় এখন কি বলে ডাকব? তুমি তো সত্যিকারের বেড়াল নও, আসলে তুমি হচ্ছ রুমাল।''

বেড়াল বলল, ``বেড়ালও বলতে পার, রুমালও বলতে পার, চন্দ্রবিন্দুও বলতে পার।'' আমি বললাম, ``চন্দ্রবিন্দু কেন?''

শুনে বেড়ালটা ``তাও জানো না?'' বলে এক চোখ বুজে ফ্যাচ্‌ফ্যাচ্ করে বিশ্রীরকম হাসতে লাগল। আমি ভারি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। মনে হল, ঐ চন্দ্রবিন্দুর কথাটা নিশ্চয় আমার বোঝা উচিত ছিল। তাই থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি বলে ফেললাম, ``ও হ্যাঁ-হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি।''

বেড়ালটা খুশি হয়ে বলল, ``হ্যাঁ, এ তো বোঝাই যাচ্ছে--- চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ, রুমালের মা--- হল চশমা। কেমন, হল তো?''

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না, কিন্তু পাছে বেড়ালটা আবার সেইরকম বিশ্রী করে হেসে ওঠে, তাই সঙ্গে সঙ্গে হুঁ-হুঁ করে গেলাম। তার পর বেড়ালটা খানিকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাত্‍‌ বলে উঠল, ``গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পার।''

আমি বললাম, ``বলা ভারি সহজ, কিন্তু বললেই তো আর যাওয়া যায় না?''

বেড়াল বলল, ``কেন, সে আর মুশকিল কি?''

আমি বললাম, ``কি করে যেতে হয় তুমি জানো?''

বেড়াল একগাল হেসে বলল, ``তা আর জানি নে? কলকেতা, ডায়মন্ডহারবার, রানাঘাট, তিব্বত, ব্যাস্! সিধে রাস্তা, সওয়া ঘণ্টার পথ, গেলেই হল।''

আমি বললাম, ``'তা হলে রাস্তাটা আমায় বাতলে দিতে পার?''

শুনে বেড়ালটা হঠাত্‍‌ কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। তার পর মাথা নেড়ে বলল, ``উঁহু, সে আমার কর্ম নয়। আমার গেছোদাদা যদি থাকত, তা হলে সে ঠিক-ঠিক বলতে পারত।''

আমি বললাম, ``গেছোদাদা কে? তিনি থাকেন কোথায়?''

বেড়াল বলল, ``গেছোদাদা আবার কোথায় থাকবে? গাছে থাকে।''

আমি বললাম, ``কোথায় গেলে তাঁর সাথে দেখা হয়?''

বেড়াল খুব জোরে মাথা নেড়ে বলল, সেটি হচ্ছে না, সে হবার জো নেই।''

আমি বললাম, ``কিরকম?''

বেড়াল বলল, ``সে কিরকম জানো? মনে কর, তুমি যখন যাবে উলুবেড়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, তখন তিনি থাকবেন মতিহারি। যদি মতিহারি যাও, তা হলে শুনবে তিনি আছেন রামকিষ্টপুর। আবার সেখানে গেলে দেখবে তিনি গেছেন কাশিমবজার। কিছুতেই দেখা হবার জো নেই।''

আমি বললাম, ``তা হলে তোমরা কি করে দেখা কর?''

বেড়াল বলল, ``সে অনেক হাঙ্গাম। আগে হিসেব করে দেখতে হবে, দাদা কোথায় কোথায় নেই; তার পর হিসেব করে দেখতে হবে, দাদা কোথায় কোথায় থাকতে পারে; তার পর দেখতে হবে, দাদা এখন কোথায় আছে। তার পর দেখতে হবে, সেই হিসেব মতো যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছবে, তখন দাদা কোথায় থাকবে। তার পর দেখতে হবে---''

আমি তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে বললাম, ``সে কিরকম হিসেব?''

বেড়াল বলল, ``সে ভারি শক্ত। দেখবে কিরকম?'' এই বলে সে একটা কাঠি দিয়ে ঘাসের উপর লম্বা আঁচড় কেটে বলল, ``এই মনে কর গেছোদাদা।'' বলেই খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে চুপ করে বসে রইল।

তার পর আবার ঠিক তেমনি একটা আঁচড় কেটে বলল, ``এই মনে কর তুমি,'' বলে আবার ঘাড় বাঁকিয়ে চুপ করে রইল।

তার পর হঠাত্‍‌ আবার একটা আঁচড় কেটে বলল, ``এই মনে কর চন্দ্রবিন্দু।'' এমনি করে খানিকক্ষণ কি ভাবে আর একটা করে লম্বা আঁচড় কাটে, আর বলে, ``এই মনে কর তিব্বত---'' ``এই মনে কর গেছোবৌদি রান্না করছে---'' ``এই মনে কর গাছের গায়ে একটা ফুটো---''

এইরকম শুনতে-শুনতে শেষটায় আমার কেমন রাগ ধরে গেল। আমি বললাম, ``দূর ছাই! কি সব আবোল তাবোল বকছে, একটুও ভালো লাগে না।''

বেড়াল বলল, ``আচ্ছা, তা হলে আর একটু সহজ করে বলছি। চোখ বোজ, আমি যা বলব, মনে মনে তার হিসেব কর।'' আমি চোখ বুজলাম।

চোখ বুজেই আছি, বুজেই আছি, বেড়ালের আর কোনো সাড়া-শব্দ নেই। হঠাত্‍‌ কেমন সন্দেহ হল, চোখ চেয়ে দেখি বেড়ালটা ল্যাজ খাড়া করে বাগানের বেড়া টপকিয়ে পালাচ্ছে আর ক্রমাগত ফ্যাচ্‌ফ্যাচ্ করে হাসছে।

কি আর করি, গাছতলায় একটা পাথরের উপর বসে পড়লাম। বসতেই কে যেন ভাঙা-ভাঙা মোটা গলায় বলে উঠল, ``সাত দুগুনে কত হয়?''

আমি ভাবলাম, এ আবার কে রে? এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি, এমন সময় আবার সেই আওয়াজ হল, ``কই জবাব দিচ্ছ না যে? সাত দুগুনে কত হয়?'' তখন উপর দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা দাঁড়কাক শ্লেট পেনসিল দিয়ে কি যেন লিখছে, আর এক-একবার ঘাড় বাঁকিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে।

আমি বললাম, ``সাত দুগুনে চোদ্দো।''

কাকটা অমনি দুলে-দুলে মাথা নেড়ে বলল, ``হয় নি, হয় নি, ফেল্।''

আমার ভয়ানক রাগ হল। বললাম, ``নিশ্চয় হয়েছে। সাতেক্কে সাত, সাত দুগুনে চোদ্দো, তিন সাত্তে একুশ।''

কাকটা কিছু জবাব দিল না, খালি পেনসিল মুখে দিয়ে খানিকক্ষণ কি যেন ভাবল। তার পর বলল, ``সাত দুগুনে চোদ্দোর নামে চার, হাতে রইল পেনসিল!''

আমি বললাম, ``তবে যে বলছিলে সাত দুগুনে চোদ্দো হয় না? এখন কেন?''

কাক বলল, ``তুমি যখন বলেছিলে, তখনো পুরো চোদ্দো হয় নি। তখন ছিল, তেরো টাকা চোদ্দো আনা তিন পাই। আমি যদি ঠিক সময় বুঝে ধাঁ করে ১৪ লিখে না ফেলতাম, তা হলে এতক্ষণে হয়ে যেত চোদ্দো টাকা এক আনা নয় পাই।''

আমি বললাম, ``এমন আনাড়ি কথা তো কখনো শুনি নি। সাত দুগুনে যদি চোদ্দো হয়, তা সে সব সময়েই চোদ্দো। একঘণ্টা আগে হলেও যা, দশদিন পরে হলেও তাই।''

কাকটা ভারি অবাক হয়ে বলল, ``তোমাদের দেশে সময়ের দাম নেই বুঝি?''

আমি বললাম, ``সময়ের দাম কিরকম?''

কাক বলল, ``এখানে কদিন থাকতে, তা হলে বুঝতে। আমাদের বাজারে সময় এখন ভয়ানক মাগ্যি, এতটুকু বাজে খরচ করবার জো নেই। এই তো কদিন খেটেখুটে চুরিচামারি করে খানিকটে সময় জমিয়েছিলাম, তাও তোমার সঙ্গে তর্ক করতে অর্ধেক খরচ হয়ে গেল।'' বলে সে আবার হিসেব করতে লাগল। আমি অপ্রস্তুত হয়ে বসে রইলাম।

এমন সময়ে হঠাত্‍‌ গাছের একটা ফোকর থেকে কি যেন একটা সুড়ুত্‍‌ করে পিছলিয়ে মাটিতে নামল। চেয়ে দেখি, দেড় হাত লম্বা এক বুড়ো, তার পা পর্যন্ত সবুজ রঙের দাড়ি, হাতে একটা হুঁকো তাতে কলকে-টলকে কিচ্ছু নেই, আর মাথা ভরা টাক। টাকের উপর খড়ি দিয়ে কে যেন কি-সব লিখেছে।

বুড়ো এসেই খুব ব্যস্ত হয়ে হুঁকোতে দু-এক টান দিয়েই জিজ্ঞাসা করল, ``কই হিসেবটা হল?''

কাক খানিক এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল, এই হল বলে।''

বুড়ো বলল, ``কি আশ্চর্য! উনিশ দিন পার হয়ে গেল, এখনো হিসেবটা হয়ে উঠল না?''

কাক দু-চার মিনিট খুব গম্ভীর হয়ে পেনসিল চুষল তার পর জিজ্ঞাসা করল, ``কতদিন বললে?''

বুড়ো বলল, ``উনিশ।''

কাক অমনি গলা উঁচিয়ে হেঁকে বলল, ``লাগ্ লাগ্ লাগ্ কুড়ি।''

বুড়ো বলল, ``একুশ।'' কাক বলল, ``বাইশ।'' বুড়ো বলল, ``তেইশ।'' কাক বলল, ``সাড়ে তেইশ।'' ঠিক যেন নিলেম ডাকছে।

ডাকতে-ডাকতে কাকটা হঠাত্‍‌ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ``তুমি ডাকছ না যে?''

আমি বললাম, ``খামকা ডাকতে যাব কেন?''

বুড়ো এতক্ষণ আমায় দেখে নি, হঠাত্‍‌ আমার আওয়াজ শুনেই সে বন্‌বন্ করে আট দশ পাক ঘুরে আমার দিকে ফিরে দাঁড়াল।

তার পরে হুঁকোটাকে দূরবীনের মতো করে চোখের সামনে ধরে অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার পর পকেট থেকে কয়েকখানা রঙিন কাঁচ বের করে তাই দিয়ে আমায় বার বার দেখতে লাগল। তার পর কোত্থেকে একটা পুরনো দরজির ফিতে এনে সে আমার মাপ নিতে শুরু করল, আর হাঁকতে লাগল, ``খাড়াই ছাব্বিশ ইঞ্চি, হাতা ছাব্বিশ ইঞ্চি, আস্তিন ছাব্বিশ ইঞ্চি, ছাতি ছাব্বিশ ইঞ্চি, গলা ছাব্বিশ ইঞ্চি।''

আমি ভয়ানক আপত্তি করে বললাম, ``এ হতেই পারে না। বুকের মাপও ছাব্বিশ ইঞ্চি, গলাও ছাব্বিশ ইঞ্চি? আমি কি শুওর?''

বুড়ো বলল, ``বিশ্বাস না হয়, দেখ।''

দেখলাম ফিতের লেখা-টেখা সব উঠে গিয়েছে, খালি ২৬ লেখাটা একটু পড়া যাচ্ছে, তাই বুড়ো যা কিছু মাপে সবই ছাব্বিশ ইঞ্চি হয়ে যায়।

তার পর বুড়ো জিজ্ঞাসা করল, ``ওজন কত?''

আমি বললাম, ``জানি না!''
বুড়ো তার দুটো আঙুল দিয়ে আমায় একটুখানি টিপে-টিপে বলল, ``আড়াই সের।''

আমি বললাম, ``সেকি, পট্লার ওজনই তো একুশ সের, সে আমার চাইতে দেড় বছরের ছোটো।''

কাকটা অমনি তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ``সে তোমাদের হিসেব অন্যরকম।''

বুড়ো বলল, ``তা হলে লিখে নাও--- ওজন আড়াই সের, বয়েস সাঁইত্রিশ।''

আমি বললাম, ``দূত্‍‌! আমার বয়স হল আট বছর তিনমাস, বলে কিনা সাঁইত্রিশ।''

বুড়ো খানিকক্ষণ কি যেন ভেবে জিজ্ঞাসা করল, ``বাড়তি না কমতি?''

আমি বললাম, ``সে আবার কি?''

বুড়ো বলল, ``বলি বয়েসটা এখন বাড়ছে না কমছে?''

আমি বললাম, ``বয়েস আবার কমবে কি?''

বুড়ো বলল, ``তা নয় তো কেবলই বেড়ে চলবে নাকি? তা হলেই তো গেছি! কোনদিন দেখব বয়েস বাড়তে বাড়তে একেবারে ষাট সত্তর আশি বছর পার হয়ে গেছে। শেষটায় বুড়ো হয়ে মরি আর কি!''

আমি বললাম, ``তা তো হবেই। আশি বছর বয়েস হলে মানুষ বুড়ো হবে না!''

বুড়ো বলল, ``তোমার যেমন বুদ্ধি! আশি বছর বয়েস হবে কেন? চল্লিশ বছর হলেই আমরা বয়েস ঘুরিয়ে দিই। তখন আর একচল্লিশ বেয়াল্লিশ হয় না--- উনচল্লিশ, আটত্রিশ, সাঁইত্রিশ করে বয়েস নামতে থাকে। এমনি করে যখন দশ পর্যন্ত নামে তখন আবার বয়েস বাড়তে দেওয়া হয়। আমার বয়েস তো কত উঠল নামল আবার উঠল, এখন আমার বয়েস হয়েছে তেরো।'' শুনে আমার ভয়ানক হাসি পেয়ে গেল।

কাক বলল, ``তোমরা একটু আস্তে আস্তে কথা কও, আমার হিসেবটা চট্‌পট্ সেরে নি।''

বুড়ো অমনি চট্ করে আমার পাশে এসে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে ফিস্‌ফিস্ করে বলতে লাগল, ``একটা চমত্‍‌কার গল্প বলব। দাঁড়াও একটু ভেবে নি।'' এই বলে তার হুঁকো দিয়ে টেকো মাথা চুলকাতে-চুলকাতে চোখ বুজে ভাবতে লাগল। তার পর হঠাত্‍‌ বলে উঠল, ``হ্যাঁ, মনে হয়েছে, শোনো---

``তার পর এদিকে বড়োমন্ত্রী তো রাজকন্যার গুলিসুতো খেয়ে ফেলেছে। কেউ কিচ্ছু জানে না। ওদিকে রাক্ষসটা করেছে কি, ঘুমুতে-ঘুমুতে হাঁউ-মাঁউ-কাঁউ, মানুষের গন্ধ পাঁউ বলে হুড়্ মুড়্ করে খাট থেকে পড়ে গিয়েছে। অমনি ঢাক ঢোল সানাই কাঁশি লোক লস্কর সেপাই পল্টন হৈ-হৈ রৈ-রৈ মার্-মার্ কাট্-কাট্--- এর মধ্যে রাজামশাই বলে উঠলেন, `পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?' শুনে পাত্র মিত্র ডাক্তার মোক্তার আক্কেল মক্কেল সবাই বললে, `ভালো কথা! ন্যাজ কি হল?' কেউ তার জবাব দিতে পারে না, সুড়্‌সুড়্ করে পালাতে লাগল।''

এমন সময় কাকটা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ``বিজ্ঞাপন পেয়েছ? হ্যাণ্ডবিল?''

আমি বললাম, ``কই না, কিসের বিজ্ঞাপন?'' বলতেই কাকটা একটা কাগজের বাণ্ডিল থেকে একখানা ছাপানো কাগজ বের করে আমার হাতে দিল, আমি পড়ে দেখলাম তাতে লেখা রয়েছে---

শ্রীশ্রীভূশণ্ডিক গায় নমঃ
শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্‌কুচে
৪১ নং গেছোবাজার, কাগেয়াপটি
আমরা হিসাবী ও বেহিসাবী খুচরা ও পাইকারী সকলপ্রকার গণনার কার্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করিয়া থাকি। মূল্য এক ইঞ্চি ১৷৴৹। CHILDREN HALF PRICE অর্থাত্‍‌ শিশুদের অর্ধমূল্য। আপনার জুতার মাপ, গায়ের রঙ, কান কট্‌কট্ করে কি না, জীবিত কি মৃত, ইত্যাদি আবশ্যকীয় বিবরণ পাঠাইলেই ফেরত ডাকে ক্যাটালগ পাঠাইয়া থাকি।

সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!!
আমরা সনাতন বায়সবংশীয় দাঁড়িকুলীন, অর্থাত্‍‌ দাঁড়কাক। আজকাল নানাশ্রেণীর পাতিকাক, হেঁড়েকাক, রামকাক প্রভৃতি নীচশ্রেণীর কাকেরাও অর্থলোভে নানারূপ ব্যবসা চালাইতেছে। সাবধান! তাহাদের বিজ্ঞাপনের চটক দেখিয়া প্রতারিত হইবেন না।

কাক বলল, ``কেমন হয়েছে?''

আমি বললাম, ``সবটা তো ভালো করে বোঝা গেল না।''

কাক গম্ভীর হয়ে বলল, ``হ্যাঁ, ভারি শক্ত, সকলে বুঝতে পারে না। একবার এক খদ্দের এয়েছিল তার ছিল টেকো মাথা---''

এই কথা বলতেই বুড়ো মাত্‍‌-মাত্‍‌ করে তেড়ে উঠে বলল, ``দেখ্! ফের যদি টেকো মাথা বলবি তো হুঁকো দিয়ে এক বাড়ি মেরে তোর শ্লেট ফাটিয়ে দেব।''

কাক একটু থতমত খেয়ে কি যেন ভাবল, তার পর বলল, ``টেকো নয়, টেপো মাথা, যে মাথা টিপে-টিপে টোল খেয়ে গিয়েছে।''

বুড়ো তাতেও ঠাণ্ডা হল না, বসে-বসে গজ্‌গজ্ করতে লাগল। তাই দেখে কাক বলল, ``হিসেবটা দেখবে নাকি?''

বুড়ো একটু নরম হয়ে বলল, ``হয়ে গেছে? কই দেখি।''

কাক অমনি ``এই দেখ'' বলে তার শ্লেটখানা ঠকাস্ করে বুড়োর টাকের উপর ফেলে দিল। বুড়ো তত্‍‌ক্ষণাত্‍‌ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল আর ছোটো ছেলেদের মতো ঠোট ফুলিয়ে ``ও মা, ও পিসি, ও শিবুদা'' বলে হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদতে লাগল।

কাকটা খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে, বলল, ``লাগল নাকি! ষাট-ষাট।''

বুড়ো অমনি কান্না থামিয়ে বলল, ``একষট্টি, বাষট্টি, চৌষট্টি---''

কাক বলল, ``পঁয়ষট্টি।''

আমি দেখলাম আবার বুঝি ডাকাডাকি শুরু হয়, তাই তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, ``কই হিসেবটা তো দেখলে না?''

বুড়ো বলল, ``হ্যাঁ-হ্যাঁ তাই তো! কি হিসেব হল পড় দেখি।''

আমি শ্লেটখানা তুলে দেখলাম ক্ষুদে-ক্ষুদে অক্ষরে লেখা রয়েছে---

``ইয়াদি কির্দ অত্র কাকালতনামা লিখিতং শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্‌কুচে কার্যঞ্চাগে। ইমারত্‍‌ খেসারত্‍‌ দলিল দস্তাবেজ। তস্য ওয়ারিশানগণ মালিক দখলিকার সত্ত্বে অত্র নায়েব সেরেস্তায় দস্ত বদস্ত কায়েম মোকররী পত্তনীপাট্টা অথবা কাওলা কবুলিয়ত্‍‌। সত্যতায় কি বিনা সত্যতায় মুনসেফী আদালতে কিম্বা দায়রায় সোপর্দ আসামী ফরিয়াদী সাক্ষী সাবুদ গয়রহ মোকর্দমা দায়ের কিম্বা আপোস মকমল ডিক্রীজারী নিলাম ইস্তাহার ইত্যাদি সর্বপ্রকার কর্তব্য বিধায়---''

আমার পড়া শেষ না হতেই বুড়ো বলে উঠল, ``এ-সব কি লিখেছ আবোল তাবোল?''

কাক বলল, ``ও-সব লিখতে হয়। তা না হলে আদালতে হিসেব টিকবে কেন? ঠিক চৌকস-মতো কাজ করতে হলে গোড়ায় এ-সব বলে নিতে হয়।''

বুড়ো বলল, ``তা বেশ করেছ, কিন্তু আসল হিসেবটা কি হল তা তো বললে না?''

কাক বলল, ``হ্যাঁ, তাও তো বলা হয়েছে। ওহে, শেষ দিকটা পড় তো?''

আমি দেখলাম শেষের দিকে মোটা-মোটা অক্ষরে লেখা রয়েছে---

সাত দুগুণে ১৪, বয়স ২৬ ইঞ্চি, জমা ৴২॥ সের, খরচ ৩৭ বত্‍‌সর।

কাক বলল, ``দেখেই বোঝা যাচ্ছে অঙ্কটা এল-সি-এম্‌ও নয়, জি-সি-এম্‌ও নয়। সুতরাং হয় এটা ত্রৈরাশিকের অঙ্ক, নাহয় ভগ্নাংশ। পরীক্ষা করে দেখলাম আড়াই সেরটা হচ্ছে ভগ্নাংশ। তা হলে বাকি তিনটে হল ত্রৈরাশিক। এখন আমার জানা দরকার, তোমরা ত্রৈরাশিক চাও না ভগ্নাংশ চাও?''

বুড়ো বলল, আচ্ছা দাঁড়াও, তা হলে একবার জিজ্ঞাসা করে নি।'' এই বলে সে নিচু হয়ে গাছের গোড়ায় মুখ ঠেকিয়ে ডাকতে লাগল, ``ওরে বুধো! বুধো রে!''

খানিক পরে মনে হল কে যেন গাছের ভিতর থেকে রেগে বলে উঠল, ``কেন ডাকছিস?''

বুড়ো বলল, ``কাক্কেশ্বর কি বলছে শোন্।''

আবার সেইরকম আওয়াজ হল, ``কি বলছে?''

বুড়ো বলল, ``বলছে, ত্রৈরাশিক না ভগ্নাংশ?''

তেড়ে উত্তর হল, ``কাকে বলছে ভগ্নাংশ? তোকে না আমাকে?''

বুড়ো বলল, ``তা নয়। বলছে, হিসেবটা ভগ্নাংশ চাস, না ত্রৈরাশিক?''

একটুক্ষণ পর জবাব শোনা গেল, ``আচ্ছা, ত্রৈরাশিক দিতে বল।''

বুড়ো গম্ভীরভাবে খানিকক্ষণ দাড়ি হাতড়াল, তার পর মাথা নেড়ে বলল, ``বুধোটার যেমন বুদ্ধি! ত্রৈরাশিক দিতে বলব কেন? ভগ্নাংশটা খারাপ হল কিসে? না হে কাক্কেশ্বর, তুমি ভগ্নাংশই দাও।''

কাক বলল, ``তা হলে আড়াই সেরের গোটা সের দুটো বাদ গেলে রইল ভগ্নাংশ আধ সের, তোমার হিসেব হল আধ সের। আধ সের হিসেবের দাম পড়ে--- খাঁটি হলে দুটাকা চোদ্দোআনা, আর জল মেশানো থাকলে ছয় পয়সা।''

বুড়ো বলল, ``আমি যখন কাঁদছিলাম, তখন তিন ফোঁটা জল হিসেবের মধ্যে পড়েছিল। এই নাও তোমার শ্লেট, আর এই নাও পয়সা ছটা।''

পয়সা পেয়ে কাকের মহাফুর্তি! সে `টাক্-ডুমাডুম্ টাক্-ডুমাডুম্' বলে শ্লেট বাজিয়ে নাচতে লাগল।

বুড়ো অমনি আবার তেড়ে উঠল, ``ফের টাক-টাক বলছিস্? দাঁড়া। ওরে বুধো বুধো রে! শিগ্‌গির আয়। আবার টাক বলছে।'' বলতে-না-বলতেই গাছের ফোকর থেকে মস্ত একটা পোঁটলা মতন কি যেন হুড়্‌মুড়্ করে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। চেয়ে দেখলাম, একটা বুড়ো লোক একটা প্রকাণ্ড বোঁচকার নীচে চাপা পড়ে ব্যস্ত হয়ে হাত-পা ছুঁড়ছে! বুড়োটা দেখতে অবিকল এই হুঁকোওয়ালা বুড়োর মতো। হুঁকোওয়ালা কোথায় তাকে টেনে তুলবে না সে নিজেই পোঁটলার উপর চড়ে বসে, ``ওঠ্ বলছি, শিগ্‌গির ওঠ্'' বলে ধাঁই-ধাঁই করে তাকে হুঁকো দিয়ে মারতে লাগল।

কাক আমার দিকে চোখ মট্‌কিয়ে বলল, ``ব্যাপারটা বুঝতে পারছ না? উধোর বোঝা বুধোর ঘাড়ে। এর বোঝা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে, এখন ও আর বোঝা ছাড়তে চাইবে কেন? এই নিয়ে রোজ মারামারি হয়।''

এই কথা বলতে-বলতেই চেয়ে দেখি, বুধো তার পোঁটলাসুদ্ধ উঠে দাঁড়িয়েছে। দাঁড়িয়েই সে পোঁটলা উঁচিয়ে দাঁত কড়্‌মড়্ করে বলল, ``তবে রে ইস্‌টুপিড্ উধো!'' উধোও আস্তিন গুটিয়ে হুঁকো বাগিয়ে হুংকার দিয়ে উঠল, ``তবে রে লক্ষ্মীছাড়া বুধো!''

কাক বলল, ``লেগে যা, লেগে যা--- নারদ-নারদ!''

অমনি ঝটাপট্, খটাখট্, দমাদম্, ধপাধপ্! মুহূর্তের মধ্যে চেয়ে উধো চিত্‍‌পাত শুয়ে হাঁপাচ্ছে, আর বুধো ছট্‌ফট্ করে টাকে হাত বুলোচ্ছে।

বুধো কান্না শুরু করল, ``ওরে ভাই উধো রে, তুই এখন কোথায় গেলি রে?''


Edited on, February 17, 2006, 3:52 PM GMT, by Shark_fin.
Reply With Quote
  #3  
Old February 17, 2006, 10:55 AM
Shafin's Avatar
Shafin Shafin is offline
Cricket Legend
 
Join Date: January 31, 2006
Location: Vagabond
Posts: 3,016



উধো কাঁদতে লাগল, ``ওরে হায় হায়! আমাদের বুধোর কি হল রে!''

তার পর দুজনে উঠে খুব খানিক গলা জড়িয়ে কেঁদে, আর খুব খানিক কোলাকুলি করে, দিব্যি খোশমেজাজে গাছের ফোকরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। তাই দেখে কাকটাও তার দোকানপাট বন্ধ করে কোথায় যেন চলে গেল।

আমি ভাবছি এইবেলা পথ খুঁজে বাড়ি ফেরা যাক, এমন সময় শুনি পাশেই একটা ঝোপের মধ্যে কিরকম শব্দ হচ্ছে, যেন কেউ হাসতে হাসতে আর কিছুতেই হাসি সামলাতে পারছে না। উঁকি মেরে দেখি, একটা জন্তু--- মানুষ না বাঁদর, প্যাঁচা না ভূত, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না--- খালি হাত-পা ছুঁড়ে হাসছে, আর বলছে, ``এই গেল গেল--- নাড়ি-ভুঁড়ি সব ফেটে গেল!''

হঠাত্‍‌ আমায় দেখে সে একটু দম পেয়ে উঠে বলল, ``ভাগ্যিস তুমি এসে পড়লে, তা না হলে আর একটু হলেই হাসতে হাসতে পেত ফেটে যাচ্ছিল।''

আমি বললাম, ``তুমি এমন সাংঘাতিক রকম হাসছ কেন?''

জন্তুটা বলল, ``কেন হাসছি শুনবে? মনে কর, পৃথিবীটা যদি চ্যাপটা হত, আর সব জল গড়িয়ে ডাঙায় এসে এসে পড়ত, আর ডাঙার মাটি সব ঘুলিয়ে প্যাচ্‌প্যাচে কাদা হয়ে যেত, আর লোকগুলো সব তরা মধ্যে ধপাধপ্ আছাড় খেয়ে পড়ত, তা হলে--- হোঃ হোঃ হোঃ হো---'' এই বলে সে আবার হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল।

আমি বললাম, ``কি আশ্চর্য! এর জন্য তুমি এত ভয়ানক করে হাসছ?''

সে আবার হাসি থামিয়ে বলল, ``না, না, শুধু এর জন্য নয়। মনে কর, একজন লোক আসছে, তার এক হাতে কুলপিবরফ আর-এক হাতে সাজিমাটি, আর লোকটা কুলপি খেতে গিয়ে ভুলে সাজিমাটি খেয়ে ফেলেছে--- হোঃ হোঃ, হোঃ হো, হাঃ হাঃ হাঃ হা---'' আবার হাসির পালা।

আমি বললাম, ``কেন তুমি এই-সব অসম্ভব কথা ভেবে খামকা হেসে-হেসে কষ্ট পাচ্ছ?''

সে বলল, ``না, না, সব কি আর অসম্ভব? মনে কর, একজন লোক টিকটিকি পোষে, রোজ তাদের নাইয়ে খাইয়ে শুকোতে দেয়, একদিন একটা রামছাগল এসে সব টিকটিকি খেয়ে ফেলেছে--- হোঃ হোঃ হোঃ হো---''

জন্তুটার রকম-সকম দেখে আমার ভারি অদ্ভুত লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ``তুমি কে? তোমার নাম কি?''

সে খানিকক্ষণ ভেবে বলল, ``আমার নাম হিজি বিজ্ বিজ্। আমার নাম হিজি বিজ্ বিজ্, আমার ভায়ের নাম হিজি বিজ্ বিজ্, আমার বাবার নাম হিজি বিজ্ বিজ্, আমার পিসের নাম হিজি বিজ্ বিজ্---''

আমি বললাম, ``তার চেয়ে সোজা বললেই হয় তোমার গুষ্টিসুদ্ধ সবাই হিজি বিজ্ বিজ্।''

সে আবার খানিক ভেবে বলল, ``তা তো নয়, আমার নাম তকাই! আমার মামার নাম তকাই, আমার খুড়োর নাম তকাই, আমার মেসোর নাম তকাই, আমার শ্বশুরের নাম তকাই---''

আমি ধমক দিয়ে বললাম, ``সত্যি বলছ? না বানিয়ে?''

জন্তুটা কেমন থতমত খেয়ে বলল, ``না না, আমার শ্বশুরের নাম বিস্কুট।''

আমার ভয়ানক রাগ হল, তেড়ে বললাম, ``একটা কথাও বিশ্বাস করি না।''

অমনি কথা নেই বার্তা নেই, ঝোপের আড়াল থেকে একটা মস্ত দাড়িওয়ালা ছাগল হঠাত্‍‌ উঁকি মেরে জিজ্ঞাসা করল, ``আমার কথা হচ্ছে বুঝি?''

আমি বলতে যাচ্ছিলাম `না' কিন্তু কিছু না বলতেই তড়্‌তড়্ করে সে বলে যেতে লাগল, ``তা তোমরা যতই তর্ক কর, এমন অনেক জিনিস আছে যা ছাগলে খায় না। তাই আমি একটা বক্তৃতা দিতে চাই, তার বিষয় হচ্ছে--- ছাগলে কি না খায়।'' এই বলে সে হঠাত্‍‌ এগিয়ে এসে বক্তৃতা আরম্ভ করল---``হে বালকবৃন্দ এবং স্নেহের হিজি বিজ্ বিজ্, আমার গলায় ঝোলানো সার্টিফিকেট দেখেই তোমরা বুঝতে পারছ যে আমার নাম শ্রী ব্যাকরণ শিং বি. এ. খাদ্যবিশারদ। আমি খুব চমত্‍‌কার ব্যা করতে পারি, তাই আমার নাম ব্যাকরণ, আর শিং তো দেখতেই পাচ্ছ। ইংরাজিতে লিখবার সময় লিখি B.A. অর্থাত্‍‌ ব্যা। কোন-কোন জিনিস খাওয়া যায় আর কোনটা-কোনটা খাওয়া যায় না, তা আমি সব নিজে পরীক্ষা করে দেখেছি, তাই আমার উপাধি হচ্ছে খাদ্যবিশারদ। তোমরা যে বল--- পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়--- এটা অত্যন্ত অন্যায়। এই তো একটু আগে ঐ হতভাগাটা বলছিল যে রামছাগল টিকটিকি খায়! এটা এক্কেবারে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি অনেকরকম টিকটিকি চেটে দেখেছি, ওতে খাবার মতো কিচ্ছু নেই। অবশ্যি আমরা মাঝে-মাঝে এমন অনেক জিনিস খাই, যা তোমরা খাও না, যেমন--- খাবারের ঠোঙা, কিম্বা নারকেলের ছোবড়া, কিম্বা খবরের কাগজ, কিম্বা সন্দেশের মতো ভালো ভালো মাসিক পত্রিকা। কিন্তু তা বলে মজবুত বাঁধানো কোনো বই আমরা কক্ষনো খাই না। আমরা ক্বচিত্‍‌ কখনো লেপ কম্বল কিম্বা তোষক বালিশ এ-সব একটু আধটু খাই বটে, কিন্তু যারা বলে আমরা খাট পালং কিম্বা টেবিল চেয়ার খাই, তারা ভয়ানক মিথ্যাবাদী। যখন আমাদের মনে খুব তেজ আসে, তখন শখ করে অনেকরকম জিনিস আমরা চিবিয়ে কিম্বা চেখে দেখি, যেমন, পেনসিল রবার কিম্বা বোতলের ছিপি কিম্বা শুকনো জুতো কিম্বা ক্যামবিসের ব্যাগ। শুনেছি আমার ঠাকুরদাদা একবার ফুর্তির চোটে এক সাহেবের আধখানা তাঁবু প্রায় খেয়ে শেষ করেছিলেন। কিন্তু তা বলে ছুরি কাঁচি কিম্বা শিশি-বোতল, এ-সব আমরা কোনোদিন খাই না। কেউ-কেউ সাবান খেতে ভালোবাসে, কিন্তু সে-সব নেহাত ছোটোখাটো বাজে সাবান। আমার ছোটভাই একবার একটা আস্ত বার্-সোপ খেয়ে ফেলেছিল---'' বলেই ব্যাকরণ শিং আকাশের দিকে চোখ তুলে ব্যা-ব্যা করে ভয়ানক কাঁদতে লাগল। তাতে বুঝতে পারলাম যে সাবান খেয়ে ভাইটির অকালমৃত্যু হয়েছিল।

হিজি বিজ্ বিজ্‌টা এতক্ষণ পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিল, হঠাত্‍‌ ছাগলটার বিকট কান্না শুনে সে হাঁউ-মাঁউ করে ধড়্‌মড়িয়ে উঠে বিষম-টিষম খেয়ে একেবারে অস্থির! আমি ভাবলাম বোকাটা বুঝি মরে এবার! কিন্তু একটু পরেই দেখি, সে আবার তেমনি হাত-পা ছুঁড়ে ফ্যাক্‌ফ্যাক্ করে হাসতে লেগেছে।

আমি বললাম, ``এর মধ্যে আবার হাসবার কি হল?''
এইটুকু বলতেই একটা শেয়াল শাম্‌লা মাথায় তড়াক্ করে লাফিয়ে উঠে বলল, ``হুজুর, কচু অতি অসার জিনিস। কচু খেলে গলা কুট্‌কুট্ করে, কচুপোড়া খাও বললে মানুষ চটে যায়। কচু খায় কারা? কচু খায় শুওর আর সজারু। ওয়াক্ থুঃ।'' সজারুটা আবার ফ্যাঁত্‍‌ফ্যাঁত্ ‌ করে কাঁদতে যাচ্ছিল, কিন্তু কুমির সেই প্রকাণ্ড বই দিয়ে তার মাথায় এক থাবড়া মেরে জিজ্ঞাসা করল, ``দলিলপত্র সাক্ষী-সাবুদ কিছু আছে?'' সজারু নেড়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ``ঐ তো ওর হাতে সব দলিল রয়েছে।'' বলতেই কুমিরটা নেড়ার কাছ থেকে একতাড়া গানের কাগজ কেড়ে নিয়ে হঠাত্‍‌ এক জায়গা থেকে পড়তে লাগল---


একের পিঠে দুই গোলাপ চাঁপা জুঁই সান্ বাঁধানো ভুঁই
চৌকি চেপে শুই ইলিশ মাগুর রুই গোবর জলে ধুই
পোঁটলা বেঁধে থুই হিন্‌চে পালং পুঁই কাঁদিস কেন তুই।


সজারু বলল, ``আহা ওটা কেন? ওটা তো নয়।'' কুমির বলল, ``তাই নাকি? আচ্ছা দাঁড়াও।'' এই বলে সে আবার একখানা কাগজ নিয়ে পড়তে লাগল---


চাঁদনি রাতের পেতনীপিসি সজনেতলায় খোঁজ্ না রে---
থ্যাঁতলা মাথা হ্যাংলা সেথা হাড় কচাকচ্ ভোজ মারে।
চালতা গাছে আল্‌তা পরা নাক ঝুলানো শাঁখচুনি
মাক্‌ড়ি নেড়ে হাঁকড়ে বলে, আমায় তো কেঁউ ডাঁকছ নি!
মুণ্ডু ঝোলা উল্টোবুড়ি ঝুলছে দেখ চুল খুলে,
বলছে দুলে, মিন্‌সেগুলোর মাংস খাব তুলতুলে।


সজারু বলল, ``দূর ছাই! কি যে পড়ছে তার নেই ঠিক।''

কুমির বলল, ``তাহলে কোনটা, এইটা?--- দই দম্বল, টেকো অম্বল, কাঁথা কম্বল করে সম্বল বোকা ভোম্বল--- এটাও নয়? আচ্ছা তা হলে দাঁড়াও দেখছি--- নিঝুম নিশুত রাতে, একা শুয়ে তেতালাতে, খালি খালি খিদে পায় কেন রে?--- কি বললে?--- ও-সব নয়? তোমার গিন্নীর নামে কবিতা?--- তা সে কথা আগে বললেই হত। এই তো--- রামভজনের গিন্নীটা, বাপ রে যেন সিংহীটা! বাসন নাড়ে ঝনার্‌ঝন, কাপড় কাচে দমাদ্দম্।--- এটাও মিলছে না? তা হলে নিশ্চয় এটা---


খুস্‌খুসে কাশি ঘুষ্‌ঘুষে জ্বর, ফুস্‌ফুসে ছ্যাঁদা বুড়ো তুই মর্।
মাজ্‌রাতে ব্যথা পাঁজ্‌রাতে বাত, আজ রাতে বুড়ো হবি কুপোকাত!''


সজারুটা ভয়ানক কাঁদতে লাগল, ``হায়, হায়! আমার পয়সাগুলো সব জলে গেল! কোথাকার এক আহাম্মক উকিল, দলিল খুঁজে পায় না!''

নেড়াটা এতক্ষণ আড়ষ্ট হয়ে ছিল, সে হঠাত্‍‌ বলে উঠল, ``কোনটা শুনতে চাও? সেই যে--- বাদুড় বলে ওরে ও ভাই সজারু--- সেইটে?''

সজারু ব্যস্ত হয়ে বলল, ``হ্যাঁ-হ্যাঁ, সেইটে, সেইটে।''

অমনি শেয়াল আবার তেড়ে উঠল, ``বাদুড় কি বলে? হুজুর, তা হলে বাদুড়গোপালকে সাক্ষী মানতে আজ্ঞা হোক।''

কোলাব্যাঙ গাল-গলা ফুলিয়ে হেঁকে বলল, ``বাদুড়গোপাল হাজির?''

সবাই এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল, কোথাও বাদুড় নেই। তখন শেয়াল বলল, ``তা হলে হুজুর, ওদের সক্কলের ফাঁসির হুকুম হোক।''

কুমির বলল, ``তা কেন? এখন আমরা আপিল করব?''

প্যাঁচা চোখ বুজে বলল, ``আপিল চলুক! সাক্ষী আন।''

কুমির এদিক-ওদিক তাকিয়ে হিজি বিজ্ বিজ্‌কে জিজ্ঞাসা করল, ``সাক্ষী দিবি? চার আনা পয়সা পাবি।'' পয়সার নামে হিজি বিজ্ বিজ্ তড়াক্ করে সাক্ষী দিতে উঠেই ফ্যাক্‌ফ্যাক্ করে হেসে ফেলল।

শেয়াল বলল, ``হাসছ কেন?''

হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, ``একজনকে শিখিয়ে দিয়েছিল, তুই সাক্ষী দিবি যে, বইটার সবুজ রঙের মলাট, কানের কাছে নীল চামড়া আর মাথার উপর লালকালির ছাপ। উকিল যেই তাকে জিজ্ঞাসা করেছে, তুমি আসামীকে চেন? অমনি সে বলে উঠেছে, আজ্ঞে হ্যাঁ, সবুজ রঙের মলাট, কানের কাছে নীল চামড়া, মাথার উপর লালকালির ছাপ--- হোঃ হোঃ হোঃ হো---''

শেয়াল জিজ্ঞাসা করল, ``তুমি সজারুকে চেন?''

হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, ``হ্যাঁ, সজারু চিনি, কুমির চিনি, সব চিনি। সজারু গর্তে থাকে, তার গায়ে লম্বা-লম্বা কাঁটা, আর কুমিরের গায়ে চাকা-চাকা ঢিপির মতো, তারা ছাগল-টাগল ধরে খায়।'' বলতেই ব্যাকরণ শিং ব্যা-ব্যা করে ভয়ানক কেঁদে উঠল।

আমি বললাম, ``আবার কি হল?''

ছাগল বলল, ``আমার সেজোমামার আধখানা কুমিরে খেয়েছিল, তাই বাকি আধখানা মরে গেল।''

আমি বললাম, ``গেল তো গেল, আপদ গেল। তুমি এখন চুপ কর।''

শেয়াল জিজ্ঞাসা করল, ``তুমি মোকদ্দমার কিছূ জানো?''

হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, ``তা আর জানি নে? একজন নালিশ করে তার একজন উকিল থাকে, আর একজনকে আসাম থেকে ধরে নিয়ে আসে, তাকে বলে আসামী। তারও একজন উকিল থাকে। এক-একদিকে দশজন করে সাক্ষী থাকে! আর একজন জজ থাকে, সে বসে-বসে ঘুমোয়।''

প্যাঁচা বলল, ``কক্ষনো আমি ঘুমোচ্ছি না, আমার চোখে ব্যারাম আছে তাই চোখ বুজে আছি।''

হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, ``আরো অনেক জজ দেখেছি, তাদের সক্কলেরই চোখে ব্যারাম।'' বলেই সে ফ্যাক্‌ফ্যাক্ করে ভয়ানক হাসতে লাগল।

শেয়াল বলল, ``আবার কি হল?''

হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, ``একজনের মাথার ব্যারাম ছিল, সে সব জিনিসের নামকরণ করত। তার জুতোর নাম ছিল অবিমৃষ্যকারিতা, তার ছাতার নাম ছিল প্রত্যুত্‍‌পন্নম িত্ব, তার গাড়ুর নাম ছিল পরমকল্যাণবরেষু--- কিন্তু যেই তার বাড়ির নাম দিয়েছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অমনি ভূমিকম্প হয়ে বাড়িটাড়ি সব পড়ে গিয়েছে। হোঃ হোঃ হোঃ হো---''

শেয়াল বলল, ``বটে? তোমার নাম কি শুনি?''

সে বলল, ``এখন আমার নাম হিজি বিজ্ বিজ্।''

শেয়াল বলল, ``নমের আবার এখন আর তখন কি?''

হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, ``তাও জানো না? সকালে আমার নাম থাকে আলুনারকোল আবার আর একটু বিকেল হলেই আমার নাম হয়ে যাবে রামতাড়ু।''

শেয়াল বলল, ``নিবাস কোথায়?''

হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, ``কার কথা বলছ? শ্রীনিবাস? শ্রীনিবাস দেশে চলে গিয়েছে।'' অমনি ভিড়ের মধ্যে থেকে উধো আর বুধো একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, ``তা হলে শ্রীনিবাস নিশ্চয়ই মরে গিযেছে!''

উধো বলল, ``দেশে গেলেই লোকেরা সব হুস্‌হুস্ করে করে মরে যায়।''

বুধো বলল, ``হাবুলের কাকা যেই দেশে গেল অমনি শুনি সে মরে গিয়েছে।''

শেয়াল বলল, ``আঃ, সবাই মিলে কথা বোলো না, ভারি গোলমাল হয়।''

শুনে উধো বুধোকে বলল, ``ফের সবাই মিলে কথা বলবি তো তোকে মারতে মারতে সাবাড় করে ফেলব।'' বুধো বলল, ``আবার যদি গোলমাল করিস তা হলে তোকে ধরে এক্কেবারে পোঁটলা-পেটা করে দেব।''

শেয়াল বলল, ``হুজুর, এরা সব পাগল আর আহাম্মক, এদের সাক্ষীর কোনো মূল্য নেই।''

শুনে কুমির রেগে ল্যাজ আছড়িয়ে বলল, ``কে বলল মূল্য নেই? দস্তুরমতো চার আনা পয়সা খরচ করে সাক্ষী দেওয়ানো হচ্ছে।'' বলেই সে তক্ষুনি ঠক্‌ঠক্ করে ষোলোটা পয়সা গুণে হিজি বিজ্ বিজের হাতে দিয়ে দিল।

অমনি কে যেন ওপর থেকে বলে উঠল, ``১নং সাক্ষী, নগদ হিসাব, মূল্য চার আনা।'' চেয়ে দেখলাম কাক্কেশ্বর বসে-বসে হিসেব লিখছে।

শেয়াল আবার জিজ্ঞাসা করল, ``তুমি এ বিষয়ে আর কিছু জানো কি-না?''

হিজি বিজ্ বিজ্ খানিক ভেবে বলল, ``শেয়ালের বিষয়ে একটা গান আছে, সেইটা জানি।''

শেয়াল বলল, ``কি গান শুনি?''

হিজি বিজ্ বিজ্ সুর করে বলতে লাগল, ``আয়, আয়, আয়, শেয়ালে বেগুন খায়, তারা তেল আর নুন কোথায় পায়---''

বলতেই শেয়াল ভয়ানক ব্যস্ত হয়ে উঠল, ``থাক্-থাক্, সে অন্য শেয়ালের কথা, তোমার সাক্ষী দেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।''

এদিকে হয়েছে কি, সাক্ষীরা পয়সা পাচ্ছে দেখে সাক্ষী দেবার জন্য ভয়ানক হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছে। সবাই মিলে ঠেলাঠেলি করছে, এমন সময় হঠাত্ দেখি কাক্কেশ্বর ঝুপ্ করে গাছ থেকে নেমে এসে সাক্ষীর জায়গায় বসে সাক্ষী দিতে আরম্ভ করেছে। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করবার আগেই সে বলতে আরম্ভ করল, ``শ্রীশ্রীভূশণ্ডীক াগায় নমঃ। শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্‌কুচে, ৪১নং গেছোবাজার, কাগেয়াপটি। আমরা হিসাবী ও বেহিসাবী খুচরা পাইকারী সকলপ্রকার গণনার কার্য---''

শেয়াল বলল, ``বাজে কথা বোলো না, যা জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব দাও। কি নাম তোমার?''

কাক বলল, ``কি আপদ! তাই তো বলছিলাম--- শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্‌কুচে।''

শেয়াল বলল, ``নিবাস কোথায়?''

কাক বলল, ``বললাম যে কাগেয়াপটি।''

শেয়াল বলল, ``সে এখান থেকে কতদূর?''

কাক বলল, ``তা বলা ভারি শক্ত। ঘণ্টা হিসেবে চার আনা, মাইল হিসাবে দশ পয়সা, নগদ দিলে দুই পয়সা কম। যোগ করলে দশ আনা, বিয়োগ করলে তিন আনা, ভাগ করলে সাত পয়সা, গুণ করলে একুশ টাকা।''

শেয়াল বলল, ``আর বিদ্যে জাহির করতে হবে না। জিজ্ঞাসা করি, তোমার বাড়ি যাবার পথটা চেন তো?''

কাক বলল, ``তা আর চিনি নে? এই তো সামনেই সোজা পথ দেখা যাচ্ছে।''

শেয়াল বলল, ``এ-পথ কতদূর গিয়েছে?''

কাক বলল, ``পথ আবার কোথায় যাবে? যেখানকার পথ সেখানেই আছে। পথ কি আবার এদিক-ওদিক চরে বেড়ায়? না, দার্জিলিঙে হাওয়া খেতে যায়?''

শেয়াল বলল, ``তুমি তো ভারি বেয়াদব হে! বলি, সাক্ষী দিতে যে এয়েছ, মোকদ্দমার কথা কি জানো?''

কাক বলল, ``খুব যা হোক! এতক্ষণ বসে-বসে হিসেব করল কে? যা কিছু জানতে চাও আমার কাছে পাবে। এই তো প্রথমেই, মান কাকে বলে? মান মানে কচুরি। কচুরি চারপ্রকার--- হিঙে কচুরি, খাস্তা কচুরি নিমকি আর জিবেগজা! খেলে কি হয়? খেলে শেয়ালদের গলা কুট্‌কুট্ করে, কিন্তু কাগেদের করে না। তার পর একজন সাক্ষী ছিল, নগদ মূল্য চার আনা, সে আসামে থাকত, তার কানের চামড়া নীল হয়ে গেল--- তাকে বলে কালাজ্বর। তার পর একজন লোক ছিল সে সকলের নামকরণ করত--- শেয়ালকে বলত তেলচোরা, কুমিরকে বলত অষ্টাবক্র, প্যাঁচাকে বলত বিভীষণ---'' বলতেই বিচার সভায় একটা ভয়ানক গোলমাল বেধে গেল। কুমির হঠাত্‍‌ খেপে গিয়ে টপ্ করে কোলাব্যাঙকে খেয়ে ফেলল, তাই দেখে ছুঁচোটা কিচ্ কিচ্ কিচ্ কিচ্ করে ভয়ানক চেঁচাতে লাগল, শেয়াল একটা ছাতা দিয়ে হুস্ হুস্ করে কাক্কেশ্বরকে তাড়াতে লাগল।

প্যাঁচা গম্ভীর হয়ে বলল, ``সবাই চুপ কর, আমি মোকদ্দমার রায় দেব।'' এই বলেই কানে-কলম-দেওয়া খরগোশকে হুকুম করল, ``যা বলছি লিখে নাও: মানহানির মোকদ্দমা, চব্বিশ নম্বর। ফরিয়াদী--- সজারু। আসামী---দাঁড়াও। আসামী কই?'' তখন সবাই বল, ``ঐ যা! আসামী তো কেউ নেই।'' তাড়াতাড়ি ভুলিয়ে-ভালিয়ে নেড়াকে আসামী দাঁড় করানো হল। নেড়াটা বোকা, সে ভাবল আসামীরাও বুঝি পয়সা পাবে, তাই সে কোনো আপত্তি করল না।

হুকুম হল--- নেড়ার তিনমাস জেল আর সাতদিনের ফাঁসি। আমি সবে ভাবছি এরকম অন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে আপত্তি করা উচিত, এমন সময় ছাগলটা হঠাত্‍‌ ``ব্যা-করণ শিং'' বলে পিছন থেকে তেড়ে এসে আমায় এক ঢুঁ মারল, তার পরেই আমার কান কামড়ে দিল। অমনি চারদিকে কিরকম সব ঘুলিয়ে যেতে লাগল, ছাগলটার মুখটা ক্রমে বদলিয়ে শেষটায় ঠিক মেজোমামার মতো হয়ে গেল। তখন ঠাওর করে দেখলাম, মেজোমামা আমার কান ধরে বলছেন, ``ব্যাকরণ শিখবার নাম করে বুঝি পড়ে-পড়ে ঘুমোনো হচ্ছে?''

আমি তো অবাক! প্রথমে ভাবলাম বুঝি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু, তোমরা বললে বিশ্বাস করবে না, আমার রুমালটা খুঁজতে গিয়ে দেখি কোথাও রুমাল নেই, আর একটা বেড়াল বেড়ার ওপর বসে বসে গোঁফে তা দিচ্ছিল, হঠাত্‍‌ আমায় দেখতে পেয়েই খচ্‌মচ্ করে নেমে পালিয়ে গেল। আর ঠিক সেই সময়ে বাগানের পিছন থেকে একটা ছাগল ব্যা করে ডেকে উঠল।

আমি বড়োমামার কাছে এ-সব কথা বলেছিলাম, কিন্তু বড়োমামা বললেন, ``যা, যা, কতগুলো বাজে স্বপ্ন দেখে তাই নিয়ে গল্প করতে এসেছে।'' মানুষের বয়স হলে এমন হোঁতকা হয়ে যায়, কিছুতেই কোনো কথা বিশ্বাস করতে চায় না। তোমাদের কিনা এখনো বেশি বয়স হয়নি, তাই তোমাদের কাছে ভরসা করে এ-সব কথা বললাম।

Reply With Quote
  #4  
Old February 17, 2006, 10:56 AM
Nasif's Avatar
Nasif Nasif is offline
Administrator
BanglaCricket Development
 
Join Date: October 4, 2002
Location: USA
Favorite Player: Mashrafe Mortaza
Posts: 9,094

Quote:
Originally posted by Shark_fin

মডারেটরদের কাছে একটি প্রশ্ন,যেসব বই এর কপিরাইট এখনো আছে,সেগুলো কি পোস্ট করা যাবে?তবে আমি যা পোস্ট করছি,তার কোনটাই এখন আর কপিরাইটেড না।
শুরু করছি নজরুলের বিদ্রোহী দিয়ে,নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ বাংলা কবিতা।

শুধু নিজের মতামত (এডমিন/মডারেটর হিসেবে না):
কপিরাইটেড বই হলেও শুধু যদি কিছু অংশ পোষ্ট করা হয়, তবে আমার মনে হয়না তেমন কোন অসুবিধা হবে। পুরো বইতো পোষ্ট করা দুরহ, আর ফোরামে তা না করাই ভাল।

আর একটা বিষয় যা যা পোষ্ট করা হচ্ছে তা কোথা থেকে নেয়া হয়েছে সেটা উল্লেখ করুন (অনলাইন লিঙ্ক)। যদি নিজে টাইপ করে থাকেন, সেটাও উল্লেখ করুন।


Edited on, February 17, 2006, 3:57 PM GMT, by Nasif.
Reply With Quote
  #5  
Old February 17, 2006, 11:03 AM
Orpheus's Avatar
Orpheus Orpheus is offline
Cricket Legend
 
Join Date: July 25, 2002
Favorite Player: Tamim, Riyad, Ashraful
Posts: 5,835


আমি কি আমার নিজের গল্পো লিখতে পারি ?
Reply With Quote
  #6  
Old February 17, 2006, 11:10 AM
Nasif's Avatar
Nasif Nasif is offline
Administrator
BanglaCricket Development
 
Join Date: October 4, 2002
Location: USA
Favorite Player: Mashrafe Mortaza
Posts: 9,094

Quote:
Originally posted by Orpheus

আমি কি আমার নিজের গল্পো লিখতে পারি ?
অবশ্যই!

Edited on, February 17, 2006, 4:11 PM GMT, by Nasif.
Reply With Quote
  #7  
Old February 17, 2006, 11:20 AM
Shafin's Avatar
Shafin Shafin is offline
Cricket Legend
 
Join Date: January 31, 2006
Location: Vagabond
Posts: 3,016

Quote:
নাসিফ
আর একটা বিষয় যা যা পোষ্ট করা হচ্ছে তা কোথা থেকে নেয়া হয়েছে সেটা উল্লেখ করুন (অনলাইন লিঙ্ক)। যদি নিজে টাইপ করে থাকেন, সেটাও উল্লেখ করুন।
আমি যে দুটা পোস্ট করেছি তা আরেকটা ফোরাম এ পাওয়া,আমার কম্পিউটারে ডাউনলোড করা ছিল,মেইন লিংক ভুলে গেছি,তবে বিদ্রোহী কবিতাটা এই সাইটে পাওয়া।
Quote:
অর্ফিয়াস
আমি কি আমার নিজের গল্পো লিখতে পারি ?
আর নিজে সুন্দর গল্প লিখতে পারলে তো আরও ভাল,আমরা অপেক্ষায় রইলাম আপনার লিখা সুন্দর গল্প পড়ার।
আপনার নাম তো ভাই বিদ্রোহী কবিতাতেও আছে

Quote:
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্,
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝঝুম্
মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
Reply With Quote
  #8  
Old February 17, 2006, 11:55 AM
Orpheus's Avatar
Orpheus Orpheus is offline
Cricket Legend
 
Join Date: July 25, 2002
Favorite Player: Tamim, Riyad, Ashraful
Posts: 5,835

আমি সুন্দর গল্প লিখতে পারি না৷ চিন্তা করচিলাম নিজের জীবন থিকে লিখবো৷


জেমন:


আমি গতকাল রাতে কি করেচি? কার সাতে করেচি ? এইশব আরকি৷


আর অর্ফিয়াস নামটা আমার মনে হয় বিদ্রোহি কবিতাই popular করেচে BD তে
Reply With Quote
  #9  
Old February 19, 2006, 04:19 AM
RazabQ's Avatar
RazabQ RazabQ is offline
Moderator
BC Editorial Team
 
Join Date: February 25, 2004
Location: Fremont CA
Posts: 11,902

To quote দিপায়ন সরকার who is heavily involved with the web-ization of our literature ...
Quote:
To answer your question, Nazrul's works are not yet public domain (and won't be for quite some time -- at least 2026 in most countries, even more in some), i.e., I would be violating someone's copyright if I post any of Nazrul's work publicly. Of course, if someone could track down Nazrul's current copyright holder and get permission, that would be
great, but...
This note was in response to my offer, from a while back, to type up Nazrul's work for the web. I happen to have a copy of the entire works of Nazrul (i.e. my very own copy of নজরুল সংকলন
Reply With Quote
Reply


Currently Active Users Viewing This Thread: 1 (0 members and 1 guests)
 

Posting Rules
You may not post new threads
You may not post replies
You may not post attachments
You may not edit your posts

BB code is On
Smilies are On
[IMG] code is On
HTML code is On



All times are GMT -5. The time now is 04:29 AM.



Powered by vBulletin® Version 3.8.7
Copyright ©2000 - 2024, vBulletin Solutions, Inc.
BanglaCricket.com
 

About Us | Contact Us | Privacy Policy | Partner Sites | Useful Links | Banners |

© BanglaCricket